বৃক্ষ নিধন করে শিপইয়ার্ড গড়ে তোলার পরিকল্পনা

0
788

শিপইয়ার্ড গড়ে তোলা হবে সংরক্ষিত উপকূলীয় বনে। আর এ জন্য সহস্রাধিক বৃক্ষ নিধন করতে হবে। কিন্তু একসঙ্গে এত গাছ কেটে ফেললে সৃষ্টি হতে পারে সমস্যা! জেনে যাবে গণমাধ্যম। তাই অভিনব পন্থায় দিনে একটি-দুটি করে গাছ ও ডালপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। ধীরে ধীরে বন ফাঁকা হয়ে গেলে অবশিষ্ট গাছ একসঙ্গে কেটে ভাসিয়ে দেওয়া হবে সাগরে। সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট ঝুনা মার্কেট সাগর উপকূলে নতুন একটি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড করতে এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় শিপইয়ার্ড নির্মাণের জন্য অতীতেও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের হাজার হাজার বৃক্ষ নিধন করা হয়েছে। এমনকি একরাতে ২৫ হাজার গাছ নিধনের ঘটনাও ঘটেছিল উপজেলার বারআউলিয়া সাগর উপকূলে। ওই ঘটনার পর পত্র-পত্রিকায় ধারাবাহিক লেখালেখি হলে বন বিভাগের মামলার জের ধরে উপকূলীয় বনে বৃক্ষ নিধন কমে আসে। কিন্তু সম্প্রতি সলিমপুর ইউনিয়নের ফৌজদারহাট আব্দুল্লাঘাটা প্রকাশ ঝুনা মার্কেট (কাট্টলী উপকূলীয় বনের অধীন) সাগর উপকূলীয় এলাকায় আবারও বনাঞ্চল ধ্বংস করে একটি বিশালাকার শিপইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করেছেন এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এলাকাবাসী জানান, এরই মধ্যে ওই ব্যক্তি শিপইয়ার্ডের জন্য ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি সমুদ্র সিকস্তি জায়গা নির্ধারণ করে সম্প্রতি সেখানে মেজবানের আয়োজন করেন। এছাড়া নির্ধারিত স্থান থেকে উপকূলীয় কেওড়া, ঝাউসহ অন্যান্য গাছ কেটে নিতে স্থানীয় কিছু বনদস্যুর সঙ্গে চুক্তিও করেছেন! কিন্তু উপকূলীয় বন উজাড় নিষিদ্ধ হওয়ায় একসঙ্গে এত গাছ কাটলে গণমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হতে পারে-এমন আশঙ্কায় তারা বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে আপাতত একটি-দুটি করে গাছ ও বড় গাছের ডালপালা কেটে সরিয়ে নিচ্ছে। এতে বনাঞ্চলটি ফাঁকা হয়ে আসছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ঘন কেওড়া বনের ভেতর থেকে বিক্ষিপ্তভাবে গাছ কাটা হয়েছে। আবার কিছু কিছু বড় গাছের ডাল কেটে ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন ও আবুল কালাম বলেন, এখানে আরেকটি শিপইয়ার্ড হবে। এজন্য এটির মালিক সম্প্রতি মেজবানের আয়োজন করেছেন। এখানে শিপইয়ার্ড করতে হলে সহস্রাধিক গাছ কাটতে হবে। আর এরই মধ্যে গাছকাটা তো শুরু হয়ে গেছে। একটি-দুটি করে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে ২০-২৫টি গাছ কেটেও ফেলা হয়েছে। শুনছি যেকোনো দিন একসঙ্গে অনেক গাছ কেটে জায়গা ফাঁকা করা হবে। এর পর ইয়ার্ড নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। জানতে চাইলে ওই এলাকার কে আর স্টিল শিপইয়ার্ডের মালিক মো. সেকান্দার হোসেন টিংকু বলেন, ‘আমাদের উত্তর পাশে কে বা কারা একটি শিপইয়ার্ড করছে বলে শুনেছি। প্রতিদিন গাড়িতে লোকজন আসা যাওয়া করছে। সেখানে অনেক গাছ আছে। তাই ইয়ার্ড করতে হলে অনেক গাছ কাটা পড়বে।’ এদিকে সেখানে কোনো শিপইয়ার্ড করার জন্য কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি বলে জানান বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যান্ড রি-সাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু তাহের। তিনি বলেন, ‘যিনি ইয়ার্ড করছেন তিনি আমাদেরকে অবগত করেননি। এভাবে ইয়ার্ড করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ স্থানীয় সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন আজিজ বলেন, ‘এখনো সেখানে ইয়ার্ড করার জন্য কেউ ইউনিয়ন পরিষদের ব্যবসায়িক লাইসেন্সও নেননি।’ কাট্টলী উপকূলীয় বন অফিসের বিট অফিসার মো. রহুল আমিন বলেন, ‘সেখানে একটি প্রভাবশালী মহল বনের গাছ কেটে শিপইয়ার্ড করার চেষ্টা করছে বলে আমরাও শুনেছি। এজন্য আমাদের লোকজন নজরদারি করছে। ওরা দৃশ্যমান কিছু করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ তবে ফৌজদারহাট ঝুনা মার্কেটের পেছনে কেউ একজন গাছপালা কেটে শিপইয়ার্ড করার চেষ্টা করছেন মর্মে স্থানীয়দের একটি অভিযোগ পেয়েছিলেন বলে জানান সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘কিন্তু ওই সমুদ্র সিকস্তি ভূমি লিজ নেওয়ার জন্য কেউ আবেদন করেনি। তাই কেউ অনুমতি ছাড়া ইয়ার্ডের উদ্যোগ নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three + twenty =