সরকারের আশ্বাসে চলমান আন্দোলন স্থগিত ৭ মে পর্যন্ত

0
3465

সরকারের আশ্বাসে আগামী ৭ মে পর্যন্ত কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাবাদিকদের একথা জানান। ওবায়দুল কাদের বলেন, তরুণদের দাবি যৌক্তিক হলে তা উপেক্ষা করা হবে না। আগামী মে মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত সরকার বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এ পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখবে।

এর আগে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করা সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠক শেষে তাদের সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সেতুমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলন করছে; তরুণ সমাজ, তারা আমাদের রাজনীতিরও বিরাট অংশ। এবং এদের ব্যাপারে আমাদের একটা দুর্বলতা অবশ্যই আছে। তিনি বলেন, আমরা রজানীতিটা শুধু নির্বাচনের জন্য করিনা। রাজনীতি করি নেক্সট জেনারেশনের (পরবর্তী প্রজন্ম) জন্যও। কাজেই তাদের সুবিধা অসুবিধা চোখের ভাষা মনের ভাষা বোঝার চেষ্টা করি। সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে পাঠিয়েছেন তাদের সঙ্গে বসতে। তাদের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি। বিদ্যামান যে কোটা পদ্ধতি এটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এ ব্যাপারে একটা সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমান কোটা ব্যবস্থা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিদের্শ দিয়েছেন। সরকার রিজিট অবস্থানে নেই। আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেছি; আমরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা ইতিবাচকভাবে দেখি। তিনি বলেন, তারা (আন্দোলনকারী) বলেছে; গতরাতে যে সহিসংসতা হয়েছে তারা তা চায়নি। তারা অহিংস আন্দোলনের পক্ষে ছিল। তারা একমত; এর মধ্যে অনুপ্রবেশকারী থাকতে পারে। ওবায়দুল কাদের বলেন, রোববার একটা সহিংসতা হয়ে গেছে। ভিসির বাড়িতে যে তাণ্ডব চলেছে। সেই অবস্থায় আন্দোলনকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে; যারা জড়িত তাদের শাস্তি পেতে হবে। মন্ত্রী বলেন, কোটা সংস্কারের সঙ্গে ভিসির কি সম্পর্ক, এই প্রশ্ন তাদের করেছি। সহিংসতার সময় যারা আহত হয়েছেন তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনকারীদের বলেছি- হাইওয়ে বন্ধ করে অবরোধ করলে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে। তাদেরই স্বজন এরা। কাজেই এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ এর আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়। সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ বিভিন্ন কোটার প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, ১০ শতাংশের বেশি কোটায় নিয়োগ দেওয়া যাবে না। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ে টানা আন্দোলন চললেও রেববার তা সহিংস রূপ নেয়। এদিন শাহবাগ মোড় চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখার পর পুলিশ আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে এবং রাবার বুলেট-কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে সরিয়ে দেয়। এরপর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা হল থেকে বেরিয়ে এসে টিএসসিতে অবস্থান নেন।  টিএসসিসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে রাতভর পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। সোমবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান আন্দোলকারী শিক্ষার্থীরা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 − five =