তৈরি পোশাক খাতেও দুর্দশার প্রভাব পড়তে পারে

0
542

মার্চ মাসে ব্যাংক থেকে গণহারে অর্থ উত্তোলন করেছেন আমানতকারীরা। এছাড়া খেলাপী ঋণের মাত্রা উর্ধ্বমুখী। ফলস্বরূপ, তারল্য সংকটের সম্মুখীন বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অবস্থা এমন দাঁড়াতে পারে যে, ঋণ দেওয়ার মতো অর্থই থাকবে না ব্যাংকের। বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, বড় ধরণের সংকট তৈরি হলে তার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের টেক্সটাইল উৎপাদন ও তৈরি পোশাক খাতেও। বিলম্বিত হতে পারে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক সরবরাহ।

ফলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে সংকটের আঁচ পড়তে পারে বৈশ্বিক পোশাক খাতেও। এ খবর দিয়েছে বৃটিশ পত্রিকা ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। খবরে বলা হয়, বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হাল ফ্যাশন কোম্পানি ও খুচরা বিক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম, আমেরিকান ইগল, জারা, ওয়ালমার্ট ও টার্গেটের মতো প্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরি হয় বাংলাদেশে। আর এই খাতই বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সংযোগ। তাই ব্যাংকিং খাতে সৃষ্ট সংকট পোশাক খাতেও হানা দিতে পারে। বিশ্বের শীর্ষ তিন ক্রেডিট রেটিং কোম্পানির অন্যতম ফিচ গ্রুপের ইউনিট বিএমআই রিসার্চের দেশ-ভিত্তিক ঝুঁকির বিশ্লেষক জ্যাসন ইয়েক বলেন, ‘বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের শিল্পখাত ভিত্তিক ঋণে ভালোই তারতম্য দেখা যায়। তবে অন্য শিল্পখাতের তুলনায়, ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ যায় টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক শিল্প ও নির্মাণ খাতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে সংকটের কারণে গার্মেন্ট শিল্প যদি ঋণ না পায়, তাহলে বৈশ্বিক খুচরা পোশাক কোম্পানিগুলোতে পোশাক সরবরাহে বিলম্ব ঘটতে পারে।’ খবরে বলা হয়, চীনের পর বাংলাদেশই তৈরি পোশাক খাতের সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য টোকিও থেকে লস অ্যানজেলেসে শোভা পায়। গত জুলাই থেকে এ বছরের জানুয়ারি নাগাদ বাংলাদেশ ১৭৭০ কোটি ডলারের নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্ট রপ্তানি করেছে, যা দেশটির মোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশ। বাংলাদেশের হাজার হাজার গার্মেন্ট কারখানার অনেকগুলোর পুঁজি হলো স্থানীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ। খবরে বলা হয়, ব্যাংক খাতের সম্ভাব্য এই ঝুঁকি নিয়ে মন্তব্য করেনি শীর্ষ কোনো খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের বড় কারখানাগুলোও ইমেইলের জবাব দেয়নি। বিএমআই গত মাসে বলেছে যে, বছরের পর বছর ধরে চলা দুর্নীতি ও ঋণ দেওয়ার নিম্ন মানের চর্চার কারণে কিছু কিছু ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২০ শতাংশেরও বেশি। মার্কেট ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক এক্সোটিক্স ক্যাপিটালের গবেষক ওয়াসিম খান বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের সংকট বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহের চেইনে অবধারিতভাবে পরোক্ষ প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি মনে করি না যে, আমরা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছি যে সংকট অত্যাসন্ন। আমার কাছে যেটা আরও বেশি উদ্বেগজনক বলে মনে হয় সেটা হলো, পরিচালনা ঝুঁকি বা প্রণোদনা পরিবর্তনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এর মানে হলো, আমরা এখনও ওই পর্যায়ে না পৌঁছালেও, সেদিকেই ধীরে ধীরে যাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eighteen − 5 =