সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন নিজেই রোগাক্রান্ত

0
670

চিকিৎসক-কর্মচারী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সঙ্কটে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন নিজেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভার বাসিন্দারা কাংখিত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্র জানায়, সোনাগাজী উপজেলায় চিকিৎসকের মোট ২১টি পদ থাকলেও বর্তমানে উপজেলায় চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন মাত্র ২ জন। অফিস সহকারীর ৫ টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১ জন।

চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পাঁচটি পদের মধ্যে আছে মাত্র একজন। সুইপারদের ৫টি পদের মধ্যে ৪ টি পদ দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে। টেকনিশিয়ান থাকলেও দীর্ঘদিন এক্স-রে মেশিনটি বিকল। গত প্রায় এক যুগেরও বেশী সময় জেনারেটরটি নষ্ট অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এছাড়া আসবাবপত্র ও বিভিন্ন বিভাগে যন্ত্রপাতির সঙ্কটও রয়েছে। সুত্র জানায়, বর্তমানে হাসপাতালে যে দুইজন জন চিকিৎসক কর্মরত রয়েছেন- তাদের মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তাকেও দাপ্তরিক কাজের পাশাপাশি রোগী দেখতে হয়। একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চরম সঙ্কটে চলছে উপজেলায় চিকিৎসা কার্যক্রম। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কাগজে কলমে ৫০ শর্য্যার বলা হলেও ৩১ শয্যার জনবল দিয়েই চলছে। প্রতিদিন গড়ে ৮০/১০০ জন রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগে গড়ে দুর দুরান্ত থেকে ৫০০-৬০০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ও বিভাগীয় চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগী সেবা না নিয়েই বাড়ি চলে যেতে হয়। অথবা জেলা শহরে বেসরকারী ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের তাকিয়া বাজার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শাহেনা আক্তার নামে একজন রোগী জানায়, তিনি দাঁতেরব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে দাঁতের চিকিৎসক না থাকায় চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। চর চান্দিয়া ইউনিয়ন থেকে হাঁড় ভাঙ্গা রোগী আজাদ হোসেন চিকিৎসা সেবার জন্য স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গিয়ে জানতে পারেন হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট। সোনাগাজী উপজেলা সদরে ভাল কোন এক্স-রে মেশিন না থাকায় বাধ্য হয়ে তাকে ফেনী যেতে হয়েছে। উপজেলার উপকূলীয় চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মোশারফ হোসেন মিলন জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রসুতি সেবা কার্যক্রম না থাকায় রোগীদেরকে বাধ্য হয়ে ফেনী সদর হাসপাতাল অথবা বিভিন্ন ক্লিনিকে যেতে হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা নূরুল আলম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক-কর্মচারী ও যন্ত্রপাতি সঙ্কটের সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি আরো জানান ২১ জন ডাক্তারের মধ্যে মাত্র ২ জন ডাক্তার দিয়ে চরম সঙ্কটের মধ্যেও রুগীদের সেবা দিতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেও পারছিনা। কারন প্রতিদিন যে রোগীর ভিড় থাকে তাদের সামলানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি জানান গত মাসের ২৩ তারিখে ৪ জন চিকিৎসক হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা এখনো পর্যন্ত হাসপাতালে যোগদান করেননি। বর্তমানে হাসপাতাল শিশু বিশেষজ্ঞ সাজেদুল করিম অপু একমাত্র ডাক্তার যিনি মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তারও নোয়াখালী মেডিক্যালে যাওয়ার অর্ডার হয়ে আছে। আমি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছি। হাসপাতালে নার্স নেই,সুইপার নেই,আরো অনেক সমস্যা। তিনি বলেন এসব সমস্যার বিষয়ে একাধিক বার চিঠি দিয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three + fifteen =