সেগুনবাগিচাস্থ কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা ঘুষ গ্রহনে বেপরোয়া

1
1676

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ৩৪২/১ সেগুনবাগিচা, ঢাকা এই দপ্তরে সুফি বলতে কেউ নেই। আছে যারা তারা লেবাসধারী। সদ্য নিয়োগ প্রাপ্তরাতো খোলামেলা অর্থাৎ দিব্যি ঘুষ নিয়ে থাকে এবং এর ভাগ এই দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও পেয়ে থাকেন। উর্ধ্বতনদের মধ্যে অতিরিক্ত কমিশনার মিয়া আবু ওবায়দা (যা কামানো আগে কামিয়ে এখন জ্বীনের বাদশা হয়ে প্রতিটি ফাইলে আলোচনা করুন মন্তব্য দিয়ে সময়ক্ষেপন), যুগ্ম কমিশনার মোঃ খায়রুল কবির মিয়া (শুধু খাই খাই, সময়ক্ষেপন, এজেন্ট রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ সামছাদ) আবাসস্থল: ফ্ল্যাট নং ১১০২, প্রেটি হোমস, ৭/২ পরীবাগ, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০, উপ-কমিশনার মোঃ মশিউর রহমান (রাজস্ব বোর্ড থেকে বদলীকৃত অতীজান্তা), ইমাম গাজ্জালী (ঢাকা কাস্টমস হাউস থেকে প্রচুর অর্থ হাতরিয়ে নিয়ে আসা), মোঃ নাজিউর রহমান, সহকারী কমিশনার (প্রমোটি)-মোঃ মাহিদুল ইসলাম (এ বছর হজ্বের নিয়ত এবং ইউপি শাখায় অর্থের জন্য কর্মাশিয়ালদের ভোগান্তির নেপথ্য নায়ক), রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) মোঃ সামছাদ (অতি জ্ঞান দিয়ে নিজেকে জাহির করা এবং টাকা রোজগারের জন্য প্যাচ লাগিয়ে উর্ধ্বতনদের নজরকাড়া), শাকের আহমেদ, নুরুল ইসলাম, মোঃ আমির হোসেন, আতিকুজ্জামান, মোঃ আব্বাসী, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) লাইসেন্স শাখার মাহবুব এবং আল আমিন; অন্যান্য শাখার রাবেয়া বেগম, নুসরাত, ফারজানা আকরাম, মৌসুমী আকতার, সালাউদ্দিন সরকার, যুগ্ম কমিশনারের পিএ রবিউল, অতিরিক্ত কমিশনারের পিএ হিমেল, হারুন অর রশিদ, রাশেদুল ইসলাম, লিটন কুমার সেন সাদা পোশাকধারী সিপাহী, পিয়ন, ব্যক্তিগত সহকারী, ডিলিং সহকারী, কম্পোজার, মহিলা-পুরুষ এই লেভেলের প্রায় পদবীধারী কর্মচারী, কর্মকর্তাগন কিভাবে ব্যবসায়ীদের ফাইল আটকিয়ে নতুন অজুহাত তৈরী করে টাকা হাতরিয়ে নিচ্ছে এবং সময়ক্ষেপন করে থাকে বাস্তবে তা ভাবাই যায় না।

ভদ্রতার ছোয়া এদের মধ্যে নেই বললেই চলে। প্রকৃত কারন উদঘাটন হলে দেখা যাবে এই দপ্তরের কেউ না কেউ নেপথ্যে জড়িত রয়েছে। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা এবং সূখীসম্বৃদ্ধ দেশ গঠনে মরিয়া সেখানে হয়রানী এবং খোলামেলা ঘুষ চলছে। ঘুষের টাকা দিয়েই এদের বিলাসিতা এবং বিশাল অর্থের পাহাড় গড়ছে। অথচ দুদকের মত একটি প্রতিষ্ঠান এব্যাপারে চুপচাপ বসে আছে, কোন ধরনের ভূমিকা নজর কাড়ার মত নয়। রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদেরও একই ভূমিকা।
প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি সারাদিন বসে থাকে তার কাঙ্খিত ইউপিটি সহ বন্ডের কাজগুলো দিনেই শেষ করে যাবে, কিন্ত বাস্তবতা ব্যতিক্রম। সকালে এ দপ্তরের কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা অফিসে আসে শুধুমাত্র গাড়ী ভাড়া নিয়ে,আর বিকেলে বাসায় ফিরে পকেট ভর্তি অবৈধ অর্থ নিয়ে। একটি শতভাগ রপ্তানী মুর্খী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হলে সরকারী-বেসরকারী মিলে প্রায় ২৯টা দপ্তরে যাতায়াত করতে হয়। কিন্ত এদপ্তরের মত এত ঘুষ লেনদেন, হয়রানী এবং নাজেহাল বাংলাদেশে অন্যটি চোখে পড়েনি। শুনেছি দুদকের বিশেষ টীম ঢাকা কাস্টমস বন্ড অফিসে প্রতিদিন তিনবার যাতায়াত করে থাকে, তারা কি পেরেছে এই ঘুষের মহোৎসব দপ্তরকে মুক্ত করতে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে ? সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমেই একমাত্র বিষয়টি সরকারের নজরে আসতে পারে। তা নাহলে বুঝতে হবে ব্যবসায়ীদের দুর্ভাগ্য। দেশে জবাবদিহিতার মধ্যে স্বেচ্ছাচারিতা ঢুকে পড়েছে। আইনের প্রয়োগ শুধুমাত্র ক্ষেত্র বিশেষে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে সেবক না হয়ে তারা শোষকের ভূমিকা পালন করবে এটাতো একটি সভ্য এবং গনতান্ত্রিক দেশের রাজস্ব আয়ে বাঁধা হতে পারে না। যেখানে নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীরা সেবা না ফেলে তাদের প্রচুর পরিমানে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রন কক্ষে বসে কিভাবে প্রতিষ্ঠান মালিকদের ফাঁদে ফেলে উৎকোচ আদায় করা যায় তা তদন্ত প্রজয়োর। একেক জন কর্মকর্তা অর্থভিত্ত এবং সম্পদের মালিক, এমনকি নামে বেনামে অনেক ধন সম্পদের মালিক।
একজন ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ঋন নিয়েই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে থাকেন, তাছাড়া তৈরী পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য নেই কোন চলতি মূলধন, প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠান মাসিক শ্রমিক মজুরী, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাসবিলসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা মিঠানোর জন্য কমবেশী ক্যাশ এলসির কার্যক্রম করে থাকে। দেশের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ যে তৈরী পোশাক রপ্তানী খাত থেকে আসছে তা আজ সেগুনবাগিচাস্থ কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট দপ্তর কর্তৃক আক্রান্ত। টাকা হাতরিয়ে নেওয়ার জন্য তারা যে কত ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে পারে তা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা বুঝতে পারেন, অথচ মূখ খোলেন না। মনে হয় একই সূত্রে গাঁথা। অর্থ ব্যতীরেকে কেউ কোন কাজ করতে পেরেছে এ ঘটনা এদপ্তরের ইতিহাসে নেই। এধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে অন্যান্য দপ্তরগুলোতে বিভাগীয় মামলা থেকে শুরু করে সকল ধরনের আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ দপ্তরে উল্টোটা। দূর দূরান্তে বদলী করলে এরা উপর থেকে তদবীর করে এই স্বর্গীয় স্থান ছাড়তে চায় না। টাকা না পেলে ঐ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কারন দর্শানো নোটিশ, ইউপি নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি, লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ, প্রাপ্যতা কমিয়ে দেওয়া, নিরীক্ষা আপত্তিসহ নানান অভিযোগ দাঁড় করানো এদপ্তরের কর্মকর্তাদের চিরাচরিত স্বভাব।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের ডিজিটাল সেবা দেওয়ার জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করার জন্য বারবার তাগিদ দিলেও এই দপ্তর নীরব।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ ঘুষের স্বর্গরাজ্য হিসেবে খ্যাত এই দপ্তরকে কলুষিত মুক্ত করে যারা এদেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণে এবং রাজস্ব আয় আহরনে সরকারকে সহায়তা করছে তাদের পাশেই সকলকে দাঁড়াতে হবে। তাহলে হয়তো আমাদের দেশ ক্রমান্নয়ে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাবে।
অন্যান্য সরকারি অফিসে এই ধরনের জিম্মি করে ফাইল প্রতি উৎকোচ নেওয়ার ঘটনা বিরল। রাষ্ট্রের সিংহভাগ রাজস্ব এসে থাকে এই পোশাক শিল্পখাত থেকে। অথচ সময়ক্ষেপন এবং অর্থের দৌরাত্ব্যের কাছে আজ প্রচ্ছন্ন রপ্তানীকারী এবং গার্মেন্টস শিল্পের ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সময়মত নতুন বন্ড লাইসেন্স, নবায়ন, নিরীক্ষা প্রতিবেদন, ইউপি ইস্যু, কম্পিউটার এবং অটোমেশান শাখার সেবা না পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের জন্য যে কত ক্ষতিকর এবং অসস্তিকর তা সেগুন বাগিচা বন্ড কমিশনারেট অফিসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রন কক্ষে বসে বুঝা সম্ভব না। পরের সংখ্যায় আরো বিস্তারিত।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

18 − 5 =