বস্ত্র খাতের উত্পাদন ব্যয় বড় আকারে বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা

0
796

গ্যাসের মূল্য যে হারে বাড়ানোর কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে বস্ত্র খাতের উত্পাদন ব্যয় বড় আকারে বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, উত্পাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে বস্ত্র খাত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। এতে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগের এ শিল্পটিই হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে। আর বস্ত্র শিল্প ক্ষতিতে পড়লে গার্মেন্টস খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যা দেশের অর্থনীতিকে চাপে ফেলতে পারে।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা এক সভায় এ উদ্বেগের কথা জানান। রাজধানীর কাওরানবাজারে বিটিএমএ’র কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সভায় বিটিএমএ’র সভাপতি তপন চৌধুরী ছাড়াও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিটিএমএ’র অন্যান্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। উদ্যোক্তারা গ্যাসের দাম সহনীয় হারে এবং পর্যায়ক্রমে বাড়াতে সরকারের প্রতি তারা আহবান জানান। তারা এ খাতের নানামুখী সমস্যা তুলে ধরে সময়মত গ্যাস সংযোগ না পাওয়া , কম চাপ ও সেবা পেতে বাড়তি ব্যয় সম্পর্কেও উপদেষ্টাকে অবহিত করেন তারা। এ সময় পেট্রোবাংলার একশ্রেনীর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অত্যাচার ও অনিয়মের অভিযোগ করেন তারা। তপন চৌধুরী বস্ত্র খাতের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এবং গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশে গত দুই বছরে গ্যাসের দর ২২২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিযোগিতার বাজারে বস্ত্রের দর বাড়ানো সম্ভব হয়নি। বরং কমপ্লায়েন্স শর্ত প্রতিপালনে বড় অংকের বিনিয়োগ করতে হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গ্রীডে সংযুক্ত বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ২০৬ শতাংশ। ফলে বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য সরবরাহ করা প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়বে ১০ টাকা, যা বর্তমানে ৩ টাকা ১৬ পয়সা। শিল্পের বয়লারে ব্যবহারের জন্য মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ৯৩ শতাংশ। ফলে বর্তমানের ৭ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বেড়ে তা দাঁড়াবে ১৫ টাকায়। এছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের জন্য গ্যাসের দাম ৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ টাকা। গ্যাসনির্ভর প্রাথমিক বস্ত্রখাতে এর প্রতিক্রিয়ায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এর সামগ্রিক প্রভাব কী হবে, তা নিয়ে কোন স্টাডি করা হয়েছে কিনা আমরা নিশ্চিত নই। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব সামগ্রিক টেক্সটাইল খাতের উপর পড়বে বলে মনে করি। জ্বালানি উপদেষ্টা গ্যাসের দর সহনীয় হারেই বাড়ানো হবে বলে উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেন, একবারেই বেশি হারে না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে দর বাড়ানো হবে। কর্মকর্তাদের দুর্নীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যক্তিপর্যায়ে অভিযান শুরু করা হবে। এরপরও দুর্নীতি বন্ধ না করা না গেলে সেবার দায়িত্ব বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। তিতাস একটা সেবা চার্জ পেতে পারে। আগামী মাসেই গ্যাসের চাপ স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে উদ্যেক্তাদের আস্বস্ত করেন তিনি। তরল গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহারের ক্ষেত্রে অপচয় রোধে সর্বোচ্চ সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে। আমদানি সম্পর্কে যে দেশ থেকে এলএনজি আমদানি করা হয় সেদেশের সঙ্গে একটা যুক্তিসঙ্গত হারে বাণিজ্য থাকতে হয়। এ বিষয়ে উদ্যোক্তাদের কাছে চাহিদার কথা জানতে চান তিনি । যাতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নেওয়া যায়। হা-মীম গ্রুপের এমডি এ কে আজাদ বলেন, গ্যাসের দর যে হারে বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে তাতে কোন বস্ত্রকল টিকবেনা। বিষয়গুলো নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা দরকার। এ সময় বিটিএমএর সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন চৌধুরী, আবদুল হাই সরকার বলেন, পরিচালক রাজিব হায়দার, খোরশেদ আলম ও শাহেদ আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen + 5 =