মরিচ চাষে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন এখন রংপুর অঞ্চলের চাষীরা। উন্নতমানের ‘মরিচ সুপার’ জাতের মরিচের বীজ চাষ করে ইতিমধ্যেই ভাগ্য বদল হয়েছে অনেক চাষীর। এই জাতের মরিচে ঝাল ও ফল বেশি হওয়ায় মরিচ চাষে ঝুঁকছেন এখন অনেকেই। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে এখন রংপুরের মরিচ। গত বুধবার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুটিরচন্দ্র গ্রামের খলিল মিয়ার বাড়িতে বসেছিল মরিচ চাষীদের মিলনমেলা।
লাল তীর সিডের আয়োজনে মাঠ দিবস উপলক্ষে ওই মিলনমেলায় মরিচ চাষে ভাগ্য বদলের গল্প শুনিয়েছেন অনেক চাষী। এর মধ্যে খলিল মিয়াও একজন। তিনি জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে মরিচ চাষ করে আমার সংসারে সুখের দেখা মিলেছে। আগে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। দুই বছর থেকে অভাব বলতে আমার সংসারে কিছুই নেই। আমি লাল তীর সিড কোম্পানির হাইব্রিড মরিচের নতুন জাত ‘মরিচ সুপার’ বীজ ৫ গ্রাম সাইজের ৫ প্যাকেট ক্রয় করে ৪০ শতক জমিতে লাগিয়েছি। এ পর্যন্ত চাষ করতে জমি চাষ থেকে শুরু করে তোলা পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। গত বুধবার পর্যন্ত মরিচ সংগ্রহ করেছি ৭২ মণ, যা বিক্রি করেছি প্রায় ৬৮ হাজার টাকায়। তিনি জানান, এখনো জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মণ মরিচ আছে, যা বেশি দামে বিক্রি করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হবে। আমি এই মরিচ বিক্রির টাকা দিয়ে ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের পড়াশুনা ও সংসার চালাচ্ছি। মিলনমেলায় উপস্থিত রংপুরের পীরগাছার পাওটানার চর ছাওলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, গাবুরা চরের সোহেল রানা জানান, ‘মরিচ সুপার’ খুব ভালো জাত। এতে রোগবালাই কম হয়। ফলনও ভালো হয়। এই মরিচের রং আকর্ষণীয় সবুজ ও লম্বাটে। এই জাতের মরিচ বৃষ্টি ও খরা সহনশীল। ঝালও খুব চড়া। গ্রাহকরা এই মরিচ বাজারে দেখে দেখে কিনে থাকেন। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা চরের মনজুরুল ইসলাম জানান, আমি ২০ শতক জমিতে আবাদ করেছি। ৩৫ মণ বিক্রি করেছি। জমিতে আরো প্রায় ৪০ মণের মতো মরিচ আছে। এই জমিতে আমার আবাদ করতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকার কিছু বেশি। তিনি বলেন, এই মরিচ বিক্রির টাকা দিয়ে আমি ছেলেমেয়েদের ভালোভাবে পড়াশুনা করাতে পারছি। আমি এখন স্বাবলম্বী। মরিচ চাষীদের মিলনমেলায় উপস্থিত ফুলবাড়ী উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জান্নাতি বেগম জানান, আমি নিজেই কৃষি অফিস কর্তৃক পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন কৃষাণী। লাল তীর কোম্পানির হাইব্রিড বেগুন ‘পার্পল কিং’ চাষ করে এবার আমি এক লাখ টাকারও বেশি মুনাফা করেছি। ‘পার্পল কিং’-এ গাছে পাতার থেকে বেগুন বেশি। তিনি বলেন, আমিও এবার মরিচ সুপার আবাদ করেছি। ফলন আশাতীত হয়েছে। মরিচের এত ফলন হয়, সেটা আগে আমি কখনো দেখিনি। মাঠ দিবস উপলক্ষে মরিচ চাষীদের মিলনমেলায় উপস্থিত ফুলবাড়ী উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, এই এলাকার মানুষ আগে নিজেদের খাবারের জন্য মরিচ চাষ করতেন। এখন বাণিজ্যিকভাবে মরিচ চাষ করছেন। এই মরিচ এই এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। মরিচ চাষের মাধ্যমে এই এলাকার মানুষ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন।