দেড় বছরেও উদ্ধার হয়নি স্কুলছাত্র নাজমুল হাসান এসপি বিধান ত্রিপুরার সেল্টারে অপহরণকারী চক্র হবিগঞ্জের সিআইডিও ব্যবস্থা নিতে পারছেনা

0
870

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
অবশেষে আদালত মামলাটিকে সিআইডতে প্রেরন করেছে তদন্তের জন্য। কিন্তু সিআইডও স্থানীয় এসপির বাহিরে যেতে পারছে না। এসপি বিধান ত্রিপুরার সাথে অপহরনকারীর দহরম মহরম থাকায় সিআইডির কর্মকর্তাও চাকুরি হারানোর ভয়ে বা রহস্যজনক কারনে আসামীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এলাকাবাসীও ভয়ে মুখ খুলছে না। অপরাধ বিচিত্রার ধারাবাহিক প্রতিবেদন করায় মামলাটি নিয়ে বিপাকে পুলিশ প্রশাষন। কারন মোটা অংকের টাকা খেয়ে আসামীকে শেল্টার দেয়ায় একদিকে ছেলেটিকে যেমনি উদ্ধার করা যাচ্ছে না অপরদিকে আসামীও গ্রেফতার হচ্ছে না।
অপরাধ বিচিত্রা হবিগঞ্জের একটি অপহরন মামলার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা বেরেিয় এসেছে তা লোমহর্ষক। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সমীপুর-সরীফনগর এলাকায় স্কুলছাত্র নাজমুল হাসান (১৪) কে অপহরনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি ওসি অহিদুর রহমান ও এসপি বিধান ত্রিপুরা। নাজমুলের বাবা আজমান মিয়া নিত্যান্ত গরীব হওয়ায় ওসি, এসপির আর্থিক চাহিদা মেটাতে পারেনি বলে মামলার কার্যক্রমকে ফাইল বন্দি করে উল্টা তাকে নানা ভাবে হয়রানি করে আসছে। ওসি, এসপিকে মোটা টাকায় ম্যানেজ করে অপহরণ চক্রের প্রধান আলমাছ মিয়া অবিরত মামলার বাদী আজমান মিয়াকে প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে এবং মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। প্রানভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আজমান মিয়া, কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা ওসি এসপি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আজমান মিয়ার ছেলে নাজমুল হাসান (১৪) কে গুম করে আসামী আলমাছ মিয়া, পিতা-ইদ্রিস মিয়া, আলমগীর মিয়া, পিতা-আলমাছ মিয়া, মতিন মিয়া, পিতা-সফিক মিয়া, মাহমুদ হাসান রুবেল, পিতা-হাজী হাফিজ উদ্দিন, ও মাহমুদ হাসান লিজন, পিতা-জিয়াউল হক সর্ব সাং-সমীপুর ও সরীফ নগর, থানা-আজমিরীগঞ্জ, জেলা-হবিগঞ্জ এবং গুম করার পূর্বে আসামীরা আজমান মিয়াকে হুমকি দেয়, যদি সে জমির মালিকানা ছেড়ে না দেয় তাহলে তারা তার ছেলেক গুম করবে। যেই কথা সেই কাজ। গুম করার পরে আজমান মিয়া আজমিরীগঞ্জ থানায় গেলে থানার ওসি অহিদুর রহমান পিপিএম তার অভিযোগের ভিত্তিতে জিডি বা মামলা না নিয়ে উল্টা তাকে লাঞ্চিত করে থানা থেকে বের করে দেয়। এসময় আসামীরা তাকে প্রাননাশের হুমকি দেয়। সে প্রান ভয়ে দীর্ঘ ৭/৮মাস পালিয়ে থাকে। নাজমুলকে গুম করার প্রায় ৯ মাস পরে আসামীরা একদিন রাত ৯টার দিকে নাজমুলকে তার মা আর্জিনা বেগমের নিকট এনে দেখিয়ে আবারও নিয়ে যায়। এসময় নাজমুলের মা অনেক কান্নাকাটি করে ছেলেকে ফেরত চায়। কিন্তু কোন লাভ হয় না। পরে আর্জিনা বেগম বাদী হয়ে গত ১৮/০৪/২০১৭ তারিখে হবিগঞ্জ কোর্টে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ছেলেকে গুম করার বিষয়ে থানায় মামলা নেয়নি উল্লেখ করে আসামী আলমাছ সহ ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নং-২৪৫/২০১দ৭। কোর্টের নির্দেশে মোতাবেক আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি অহিদুর রহমান পিপিএম গত ৫/৫/২০১৭ তারিখে একটি জি আর মামলা (নং-৩৭/১৭) নথিভুক্ত করে আসামী আলমাছকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু পুলিশ গুম হওয়া নাজমুলকে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করে দিতে পারেনি। আলমাছকে গ্রেপ্তারের ২০/২৫ দিন পরে সে জামিনে বের হয়ে আসে। জামিনে এসে আলমাছ গং আজমান মিয়া ও তার স্ত্রীকে অনবরত প্রাননাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আসামীরা অনেক ধনী হওয়ায় ওসি অহিদুর রহমান তাদের নিকট থেকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা গ্রহন করে ছেলেকে উদ্ধার না করে দিয়ে বরং আসামীদের সাথে লিয়াজো করে উল্টো তাকে গালিগালাজ করা সহ ভয়ভীতি দেখায়। আজমান মিয়া থানায় গেলে ওসি বলে, সময় নাই, গময় নাই থানার ভিতরে ঢুকছ কেন? তোর পুলা কই আছে তুই খুইজ্জা বাইর করতে পারছ না। তোর লিগা কি আলাদা একটা থানা বানামু। এবং আসামী আলমাছ গং বলে, তোরা মামলা কইরা কি করবি। তোদের মামলা টাকা দিয়া খাইয়া ফালাইছি। ছেলে না পেয়ে একদিকে মর্মাহত আজমান মিয়া অপর আসামীদের নির্যাতনে দিশেহারা সহ ওসি অহিদুরের নির্যাতনের শিকার। আজমান মিয়া এসপি বিধাণ ত্রিপুরার নিকট ছেলেকে উদ্ধার সহ তার প্রতি নির্যাতন বন্ধের অভিযোগ করে কোন প্রতিকার পায়নি। আজমান মিয়ার লিখিত অভিযোগ এসপি নিকট পৌছালেও তিনি কেন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সেই প্রশ্ন আজও অজানা। এদিকে এলাকার সাংবাদিক ও সাধারন মানুষ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাক্তিগন জানিয়েছেন এসপি বিধান ত্রিপুরা হবিগঞ্জে যোগদান করার পর এলাকা এখন মাদকে ভাষছে। এসপির সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের দহরম মহরম সম্পর্ক বলে জানা গেছে। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযানে দেখানো হলেও এলাকায় অপরাধ প্রবনাতা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাদক সম্রাট মখলিছের ভক্ত ওসি
হবিগঞ্জের মাদক সম্রাট মখলিছের মাদক বিক্রির মাসোয়ারা প্রেমে মত্ত ওসি অহিদুর রহমান। ওসির শেল্টারে কুখ্যাত মাদক সম্রাট মখলিছ ওরফে মোখলেছের মাদক ব্যবসার দৌরাত্ম এখন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই রয়েছে তার মাদক ব্যবসার বিশাল সিন্ডিকেট। মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল, হেরোইন ও মরননেশা ইয়াবা ব্যবসার বদৌলতে সে এখন কোটিপতি। প্রাশসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে মহাসমারোহ সে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। মখলিছের মাদক সিন্ডিকেটটি খুব ভয়ংকর ও শক্তিশালী হওয়ায় এলাকাবাসী ও প্রশাসন তার কিছুই করতে পারেনা। তার ভয়ে হবিগঞ্জ সহ পার্শ্ববতী এলাকা গুলোতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আজমিরিগঞ্জ উপজেলার বংপশ্চিম গ্রামের মৃত কুদরত আলীর ছেলে মখলিছ মিয়া। অপকর্মের মহা নায়ক। বাড়ীর ভিতর জুয়ার আসর চালানো তার পৈত্তিক পেশা। হবিগঞ্জ পুলিশ প্রশাসনের কতিপয় অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার সাথে নিয়মিত মাসোহারার চুক্তি করে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। হবিগঞ্জ সাথে ভারত ও বার্মার সীমান্ত এলাকা থাকায় মখলিছ খুব সহজে ভারত ও বার্মা থেকে ইয়াবা সহ মাদকের চালান আনতে পারে। সে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুব শক্তিশালী মাদক সম্রাটদের সিন্ডিকেট গড়ে তোলে মাদক পাচার করে থাকে। হবিগঞ্জ থেকে ট্রেনে রাজধানী ঢাকায় ও সবজির ট্রাকে করে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে মাদক চালান করে থাকে। তার সিন্ডিকেটর অন্যতম সদস্য বংনোয়াহাটি এলাকার মৃত মতলিব ফকিরের ছেলে ফজল চান। সে মাদকের চালান কখন কোথা নিতে হবে তা পরিচালনা করে। মখলিছের মাদক ব্যবসার পার্টনার শিবপাশা গ্রামের আনু মিয়া বলেন মখলিছ ভাই পুলিশকে মাসে ২লাখ টাকার উপরে মাসোহাারা দিয়ে থাকে। তাই মাদক ব্যবসায় তার কোন ঝামেলা হয়না। মাদকের কোন চালান বা আমাদের সিন্ডিকেটের কোন সদস্য পুলিশের হাতে ধরা পড়লে টাকার মাধ্যমে খুব সহজে ছাড়িয়ে আনতে পারি। কারন টাকা দিলে সব হয়। এটা আবার মখলিছ খুব ভালো করে কিভাবে পুলিশকে ম্যানেজ করতে হয়। পুলিশের টাকা-পয়সার লেনদেন সহ তাদের নিকট থেকে মাদকের চালান কিনে আনার কাজে পুরোপুরি এক্সপার্ট বংপশ্চিম গ্রামের সজিদ উল্লার ছেলে হুমায়ন। গত জানুয়ারী মাসে মখলিছের পার্টনার সাবুল মিয়া ১২শ পিছ ইয়াবা নিয়ে কিশোরগঞ্জে যাওয়ার সময় বাহুবল থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ১লাখ ৩০ হাজার টাকার ঘুষ দিয়ে হুমায়ন পুলিশের সাথে লিয়াজো করে তাকে ছাড়িয়ে আনে। মখলিছের কোন লোক পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তাকে আর থানা পর্যন্ত যেতে হয় না। হুমায়নের কারিশমায় তার আগেই ছাড়া পেয়ে যায়। সুত্র জানায়, মখলিছের ত্রাসে রাজত্বে সে একাই অধিপতি। তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে কেউ চলে গেলে তার বেচে থাকাটা দায় হয়ে যায়। হয় মাদক মামলা দিয়ে লাল দালান, না হয় হাত-পা ভেঙে পক্সগু করে দেয়া। মখলিছ এলাকায় একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও ভয়ংকর সন্ত্রাসী। তার নামে হবিগঞ্জের বিভিন্ন থানায় অন্তত ১ ডজন মামলা রয়েছে। মাদক ব্যবসা ছাড়াও তার নামে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই এর মামলা রয়েছে। বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার চুরির দায়ে সে দীর্ঘ দিন জেল খেটেছে। মখলিছ হবিগঞ্জে একটি আতংকের নাম। তাই তার অপকর্মে কেউবাধা হয়ে দাড়ায় না বা কেউ প্রতিবাদ করে না বা তাদের বিরুদ্ধে কেউ স্বাক্ষী দিতে চায় না।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve − seven =