সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ গড়েছেন সম্পদের পাহাড় দুদকের রহস্যজনক নিরবতা

0
3559

প্রধান প্রতিবেদকঃ
পুলিশের দুর্নীতি ও অপরাধে জড়িয়ে পড়া নিয়ে কিছুদিন পর পরই গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু পুলিশের অনৈতিক কাজ সম্পর্কে যে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে তা লোমহর্ষক। জনগনের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য নিয়োজিত পুলিশরা আজ জনগনের নিকট এক আতংকের নাম। কথায় বলে “বাঘে ধরলে দশ ঘাঁ, পুলিশে ধরলে আঠারো ঘাঁ”। কিছু পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত ও শাস্তি হচ্ছে ঠিকই। তবে তাতে কমছে না এই বাহিনীর অপরাধ প্রবণতা। মানুষ পারতপক্ষে পুলিশের কাছে যেতেই চায় না। কারন কোন অপরাধ সম্পর্কে পুলিশকে অবহিত করতে গেলে পুলিশই বিপদের কারন হয়ে দাঁড়ায়। পুলিশ হেফাজতে নির্মম নির্যাতনে এ পর্যন্ত কতজন প্রাণ হারিয়েছে তার হিসাব সরকারের কাছেই নেই।

গ্রেপ্তরি বাণিজ্য, হাতের ভেতর গাঁজা বা ইয়াবা রেখে তল্লাশির নামে পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে ফাঁসানো, নিরপরাধ লোককে মামলা আছে বলে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা, মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার ইত্যাদি অভিযোগের মালা নিয়ে বীর দর্পে চলছে আমাদের পুলিশ বাহিনী। মহাসড়কে ও দেশের বিভিন্ন শহরে পুলিশের সার্জেন্টরা গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার নামে যেভাবে হয়রানি করছে তার অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার নেই। সার্জেন্টরা কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের পোষাকের ওপর হাফ হাতা হলুদ শার্ট পরিধান করে নামফলক (নেম টোকেন) ঢেকে রাখে। অথচ কর্তব্যরত অবস্থায় তাদের নাম ফলক এমনভাবে প্রদর্শন করা উচিৎ যাতে জনগণ তাকে সনাক্ত করতে পারে ও তার নাম জাতে পারে। অনেক ভুক্তভোগী হয়রানির সময় কর্তব্যরত সার্জেন্টের নাম জানতে চাইলে সার্জেন্ট তার সাথে আপত্তিকর আচরন করে ও হুমকি ধমকি মারে। গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকলেও সার্জেন্টরা হয়রানি করে এমন অভিযোগের অভাব নেই। প্রায়ই দেখা যায় কাগজপত্র পরীক্ষার সময় সার্জেন্ট কাগজপত্র হাতে নিয়ে অনেকক্ষন আকিয়ে রাখে ও অযথা একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে। ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার এএসআই সোহেল ও কনস্টেবল সাইফুল মোবাইল কোর্ট বসায় ম্যাজিষ্ট্রেট ছাড়া। তারপর গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার নামে চলে হয়রানি ও টাকা নেয়ার ফন্দি। নবাবগঞ্জ থানাধীন একাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। নবাবগঞ্জ থানার ফাঁড়ির পুলিশরা পথচারিদেরকে তল্লাশির নামে হয়রানি, অকথ্য গালি এমনকি চড় থাপ্পর মারার মত অভিযোগও রয়েছে। অবস্থা দেখলে মনে হয় গোটা পুলিশ বাহিনী দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন আলাদা একটি জাতী। এদিকে কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বিত্ত বৈভব দেখলে মাথা ঘুড়বে না এমন কেউ নয়। ঢাকা মহানগরির উত্তর যাত্রাবাড়িতে শাশীতু ভিউ নামকফলক ব্যবহার করা ৭২/৭/৩/ডি নং বাড়িটির এলাকায় নাম রাখা হয়েছে এসপির বাড়ি। বেশ জাঁকজমক করে তৈরি করা বিশালাকারের বহুতল ভবনটি জনৈক পুলিশ সুপারের। কেউ এলকাটি চিনতে না পাড়লে তাকে সহজে চেনার জন্য বলতে হয়ে এসপির বাড়ির পাশের এলাকা। এলকাবাসি বলছেন এসপি সাহেবের আরও ছয়টি বাড়ি আছে ঢাকা শহরে এবং প্রতিটি বাড়িই নাকি এমন আলীশান মার্কা।
এবার পুলিশের এমন এক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হচ্ছে যিনি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ পদে কর্মরত থেকে গড়েছেন অবাক করার মত সম্পত্তি। বিশাল ধন সম্পত্তির মালিক এই পুলিশ কর্মকর্তার নাম নূর মোহাম্মদ। তিনি ২০১১ সালে আইজিপি ছিলেন। তার ধন রতেœর বর্ণানা নিয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক বহুবার সংবাদের পসরা সাজিয়েছিল। অবশেষে দুদকের নজরে পরায় তার সম্পদের বিষয়ে তদন্ত ও মামলা করার প্রস্তুতির কথা গণমাধমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু হঠাৎ অদৃশ্য শক্তির ইশারায় দুদকের তদন্ত থেমে যায়। সাবেক এই আইজিপির বিশালাকারের সম্পদের মধ্যে রয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি থানা এলাকায় চান্দপুর গ্রামে মীরের পাড়ায় ২০ বিঘা জমির ওপর একটি রাজকীয় বাড়ি। বাড়িটির দাম বর্তমান বাজার মূল্যে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। উক্ত বাড়িটি রেলওয়ের ৫ বিঘা জমি দখল করে রেখেছে যার কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। বাড়ি হতে ১ মাইল পূর্বে ৪০০ বিঘা জমির ওপর একটি মাছের প্রকল্প রয়েছে যার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। তিনি তার নিজ বাড়ি হতে প্রকল্প পর্যন্ত ২৫ ফুট প্রশস্ত পাকা রাস্তা নির্মান করেছেন। রাস্তায় যে জমি দখল করা হয়েছে তার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। যাদের জমি দখল করে রাস্তাটি নির্মান করা হয়েছে তাদের কোন টাকা পয়সা বা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। কেউ ক্ষতিপূরণ চাইলে তাকে মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে। আইজিপি থাকালীন কোটিয়াদি থানার অন্তর্গত চাতল হাইস্কুলের সাথে একটি পুকুরসহ ১৫ বিঘা জমি দারোগা মজিবর রহমান এর নিকট থেকে ৬ কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করে কম মূল্যে দলিল করে সরকারি কর ফাঁকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি থানার চান্দিপুর ইউনিয়নের এলকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগে দায়ের করা অভিযোগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। নূর মোহাম্মদ আইজিপি থাকা অবস্থায় ৬ নং মিন্টো রোডে সরকারি বাসাটি অনুমোদন ছাড়া ২ কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল করে বসবাস করেছেন। ঢাকার বেইলি রোডে ও মোহাম্মদপুর পিসি কালচার হাউজিং এ ৭ কোটি টাকা দিয়ে ৫ টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। পল্লবিতে ৯ কোটি টাকা খরচ করে একটি জমির প্রকল্প করেছেন। খুলনায় ৩৫০ বিঘা জমির ওপর ২০ কোটি টাকা দিয়ে একটি চিংড়ি মাছের প্রকল্প করেছেন। এছাড়াও দেশের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে বিশাল টাকার ব্যবসা। তার পিতা সুন্দর আলী আকন্দ ছিলেন একজন সেনা কর্মকর্তা। ৭১ এ স্বাাধীনতা যুদ্ধের সময় তার পিতা মনুষের জমি দখল, সম্পত্তি লুট ও অনেক নিরপরাধ লোককে মেরে ফেলছে বলে তার এলাকা সূত্রে জানা গেছে। অন্যায়ভাবে অর্জিত বিশাল সম্পদের মালিক নুর মোহাম্মদ আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মরিযা হয়ে উঠছেন। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অপরাধ বিচিত্রার তদন্ত চলছে। এ ব্যপারে আগামী সংখ্যায় আরও বিস্তরিত থাকছে। (চলবে)

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × 3 =