বিচার বিভাগের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে সরকার কখনই পিছপা হয়নি : আইনমন্ত্রী

0
795

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিচার বিভাগের উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কখনই পিছপা হয়নি। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের সব রকম ব্যবস্থা থাকবে।

আজ রোববার ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সিনিয়র সহকারি জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ১৪১তম রিফ্রেশার কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে সুদৃঢ়, দৃীঘস্থায়ী এবং টেকসই করার জন্য বাস্তবমূখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা শুরু করেন। প্রথমেই এজলাজ ভাগাভাগি সমস্যা দূরীকরণ এবং ভবিষ্যত প্রয়োজন মিটানোর জন্য আদালত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয় এবং আজ আমি অত্যন্ত সন্তুুষ্ঠির সাথে বলতে পারি তা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। প্রত্যেক জেলায় পৃথক দশ তলা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যমান দুই তলা জেলা জজ আদালত ভবনগুলো উর্দ্ধমূখী সম্প্রসারণ করে চার তলা পর্যন্ত করা হচ্ছে। অনেক জেলায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় সমস্যা সম্পূর্ণ দূর হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জুডিসিয়াল অফিসারদের বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনার নজির এর আগে ছিলনা। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর তা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৫৪০ জন বিচারককে অস্ট্রেলিয়ায় পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। দেড় হাজার বিচারককে ভারতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাপানেও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে বিচার বিভাগের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, অধস্তন আদালতে নতুন পদ সৃষ্টি করে এবং শূন্য পদে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কেবল বিগত চার বছরে ৪২৭ জন সহকারী জজ এবং সমপর্যায়ের বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একজন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির একগুঁয়েমির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি আটকে ছিল। তা দূর করে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের বিচারকের পদ হতে ১০৯ জন বিচারককে চলতি মাসের ১০ তারিখে জেলা ও দায়রা জজ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এখন অন্যান্য বিচারকদের পদোন্নতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাতেই নিহিত রয়েছে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি। তাছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে যে সংবিধান উপহার দিয়েগেছেন সেখানেও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিধৃত হয়েছে। তার কারণ বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে অনুধাবন করেছিলেন বাংলার জনগণের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন আইনের শাসন। আর এই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারকদের ভূমিকা এবং অবস্থান একেবারেই সম্মুখ সারিতে। আইনের জটিল বিষয়গুলো সমাধানের মাধ্যমে জনগণের স্বার্থে স্বল্প সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে বিচারপ্রার্থী জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা বিচারকদের অন্যতম দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করতে বিচারকদের প্রতিনিয়ত কঠোর নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় পালন করতে হয়। নতুন নতুন আইন ও আইনের ব্যাখ্যার সাথে পরিচিত হতে হয়। তাছাড়া বিচার প্রশাসনকে গতিশীল এবং স্বচ্ছ করার জন্য বিচারকগণকে প্রশাসনিক জ্ঞান অর্জন সহ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়। একথা বিবেচনায় রেখেই সরকার বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সৎ, নিষ্ঠাবান, দক্ষ, মেধাবী ও পরিশ্রমী বিচারক গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছে।
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও বক্তৃতা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three + thirteen =