খালেদা জিয়াকে ভিত্তিহীন মামলায় অন্যায় ভাবে সাজা দিচ্ছে–রিজভী

0
669

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভিত্তিহীন মামলায় অন্যায় সাজা দিয়ে কারবন্দী রেখে এখন দেশনেত্রীর সঙ্গে তার স্বজনদেরও দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। ১০দিন ধরে পরিবারের কোনো সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। পরিবারের স্বজনসহ আমারা দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থার কোনো খবর পাচ্ছি না।

বিএনপির নেতাকর্মীরাসহ দেশবাসী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কারাযালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। তিনি বলেন, আমরা আগেই জানতে পেরেছিলাম দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থার প্রতিদিন অবনতি হচ্ছে। তার হাঁটা চলা করতে অসুবিধা হচ্ছে। এখন তাকে পরিত্যক্ত স্যাঁতসেতে অস্বাস্থ্যকর ভবনে রাখায় নানা ধরণের রোগ ও সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন তিনি। এমনকি সরকারি মেডিকেল বোর্ড বেগম খালেদা জিয়াকে অর্থোপেডিক্স বেড দেওয়ার এবং ফিজিওথেরাপির সুপারিশ করলেও এখন পর্যন্ত সেটির কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বার বার তার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। দেশনেত্রী ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না। তাকে উন্নতমানের এমআরআইয়ের ব্যবস্থা দিতে চিকিৎসকরা সুপারিশ করেছিলেন, অথচ সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। রিজভী বলেন, এই পরিস্থিতিতে আত্মীয়স্বজনদেরকে দেশনেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না দেয়াটা সরকারের কালো কাপড় ঘেরা গভীর অন্ধকারের মধ্যে এক ভয়াল ষড়যন্ত্রের অংশ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অশুভ ও দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যেই কারাবন্দী করা হয়েছে বলে আমরা বারবার যে আশঙ্কার কথা বলে আসছি সেটি আরো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দেশী-বিদেশী চক্রান্তের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতেই তাকে সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী করা হয়েছে। এখন তাকে চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে প্রতিহিংসার এক বিভৎস প্রতিশোধ নিতে চান কী না তা নিয়ে দেশের মানুষ উৎকন্ঠিত। তিনি বলেন, আমরা দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের সুযোগ করে দিতে এবং তার সুচিকিৎসাসহ নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। তাকে মুক্তি না দিলে অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে কঠিন খেসারত দিতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তির ওপর নির্ভর করবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। তাকে বন্দী রেখে আগামী একদলীয় ফ্যাসিবাদী নির্বাচন করার উদ্যোগ নিলে কঠিন প্রতিরোধে তা নস্যাৎ করে দেয়া হবে। আবারো ক্ষমতা দখল করতে ভারতের সাথে গোপন চুক্তি করা হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, সকল জনমতকে উপেক্ষা করে আকস্মিকভাবে বাংলাদেশ– ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সরকার। এমনকি তাদের বাছাইকৃত লোক দিয়ে গঠিত একদলীয় জাতীয় সংসদে আলোচনা করারও প্রয়োজন বোধ করেনি। প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় ঋণ বাস্তবায়ন এবং সার্বিক সহযোগিতার বিস্তার ঘটাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে কি না, সেই সংশয় এখন বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আসলেই নাচের পুতুলের ভূমিকাই পালন করছেন। এই চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে বলে বিশিষ্টজনরা মনে করেন। রিজভী বলেন, ভারত আমাদের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের তিন দিক দিয়েই সীমান্ত রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে সীমান্ত প্রতিযোগিতা। তাদের সঙ্গে সীমান্ত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ায় দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। দেশের মানুষকে না জানিয়ে এধরনের দেশবিরোধী চুক্তির খবরে গোটা জাতি হতভম্ব ও চিন্তিত হয়ে পড়েছে। দেশবাসী মনে করে আবারো ক্ষমতা দখল করতে দেশবিরোধী এই গোপন চুক্তি করা হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভিন দেশের এক্সটেনশন হতে দেয়া যাবে না। অবিলম্বে গোপন চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। বিএনপির এই নেতা বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকী। সেখানে এখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সন্ত্রাসী তান্ডব চলছে। ফলে নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মধ্যে এক ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের দাপটে খুলনা মহানগর জুড়ে এখন শুধুই আতঙ্ক। ভোটাররা ভীতিমুক্ত পরিবেশে নির্বিঘ্নে ভোট দেয়া দূরে থাক এখন তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরম হুমকির মধ্যে নিপতিত। গতরাতেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার ও বিএনপি নেতাকর্মীদের হুমকি দেয়া হয়েছে, গণগ্রেফতার করা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রে না যেতে চাপ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ধানের শীষের প্রার্থী ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের ১৯টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন অভিযোগগুলোকে আমলে নেয়নি। সরকারী সন্ত্রাসী অস্ত্রধারীদের আনাগোনা চলছে নির্বাচনী এলাকায়। অথচ ইসি নির্বিকার ও নীরব দর্শক। নির্বাচন কমিশন জেগে থেকে ঘুমিয়ে থাকার ভান করছে। এই কারণেই খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের মাঝে কানাঘুষা চলছে নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন সরকারের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বাস্তবায়ন করছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 + thirteen =