রমজানকে উপলক্ষ্য করে নিত্য-প্রয়োজনীয় পন্যের দাম বাড়ানো হলে সেটি চরম অন্যায়

0
647

রমজান মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি নিয়ামত। আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সা.)ও জানতেন না যারা রমজান পালন করবেন তাদের জন্য তিনি (আল্লাহ) কী প্রতিদান রেখেছেন। রোজা একমাত্র আল্লাহর জন্যই রাখা হয়। তাই এর প্রতিদান বা বিনিময় স্বয়ং আল্লাহ তার বান্দাদের দান করবেন। তাছাড়া রোজার ভিতরে এক ধরণের গোপনীয়তা রয়েছে। একমাত্র বান্দা ও আল্লাহই জানেন প্রকৃত অবস্থা।

পানাহার এবং কামাচার থেকে বিরত থাকার বিষয়টি নিজ ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারে না। রমজান হলো আত্মশুদ্ধির মাস। এ মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে সকল ধরনের পাপ থেকে নিজের বিরত রাখার অনুশীলন করা হয়। শারীরিক, মানসিকভাবে মানুষ পরিশীলিত হয়। কিন্তু পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে একশ্রেণীর অতি মুনাফালোভী নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য-দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। যেটি সাধারণ মানুষের জন্য খুবই কষ্টকর।রমজানে মুসলিম গোষ্ঠীর মধ্যে ধনী-গরিব সকলেই মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখেন। রোজা পালন করা শারীরিক এবং মানসিকভাবে কিছুটা কষ্ট সাধ্য হলেও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর। তথাপি বান্দা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার জন্য পালন করে থাকেন। রমজান মাসে সবাই যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য-দ্রব্য সঠিক দামে ক্রয় করতে পারে এ বিষয়টি ব্যবসায়ীদেরকে খেয়াল রাখা ঈমানী কর্তব্য। রমজানকে উপলক্ষ্য করে নিত্য-প্রয়োজনীয় পন্যের দাম বাড়ানো হলে সেটি চরম অন্যায়। এমনকি বিষয়টি দুর্নীতির সামিল। ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকেই রোজা রাখেন এবং রোজা রাখার যে ফজিলত সেটিও তারা জানেন। কিন্তু সবকিছু জেনে অন্যায়ভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে অভি মুনাফা লাভ করলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে কী জবাব দেবেন। যেদিন মানুষের সকল কৃতকর্মের কথা জিজ্ঞাসা করা হবে সেদিন যারা রমজানকে কেন্দ্রে করে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে মুনাফা লাভ করেছেন তারা কী জবাব দিবেন? সুতরাং আমাদের সব-সময় খেয়াল রাখতে হবে জীবন ধারনের জন্য যা করছি সেখানে কতটুকু হালাল। ইসলামে ব্যবসাকে ইবাদাতের সাথে তুলনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ী নবীগণ, ছিদ্দিকগণ ও শহীদগণের সঙ্গী হবে। হুজুর (সা.) আরও ইরশাদ করেন যে, সত্যবাদী আমানতদারী ও পরহেজগার ব্যবসায়ী ব্যতীত হাশরের ময়দানে সব ব্যবসায়ী ফাসেক হিসেবে উঠবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! জুমার দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ করো, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি করো। আর সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমা : ৯-১০)। উপরোক্ত আয়াত দুইটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সূরা বাকারা : ২৭৫)। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না, শুধু তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয়, তা বৈধ।’ (সূরা নিসা ২৯)। উল্লিখিত আয়াতে (তোমরা পরস্পরের ধনসম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না) ‘অন্যায়ভাবে’ বলতে এখানে এমন সব পদ্ধতির কথা বোঝানো হয়েছে, যা সত্য ও ন্যায়নীতিবিরোধী এবং নৈতিক ও শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ। আসুন রমজান মাসকে কেন্দ্র করে আমরা অতি মুনাফা লাভের মানসিকতা বর্জন করি এবং সবাই যাতে নিজেদের সাধ্যমত নিত্য পণ্য-দ্রব্য ক্রয় করতে পারে তার ব্যবস্থা করি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × four =