Site icon Aparadh Bichitra

রাজশাহীর বাঘায় সুদের ব্যবসা রমরমা, সুদখোরের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে অনেকে

সংবাদাতাঃ রাজশাহীর বাঘায় চলছে সুদের ব্যবসা রমরমা । প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা সুদ দিতে হয় সাধারণ মানুষদের। মাস শেষে সুদের টাকা দিতে না পারলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বৃদ্ধি পায়। কয়েক মাস দিতে ব্যর্থ হলে সুদের পরিমানের সুদ ধরা হয়। পরে না দিতে পারলে মাঠের জমি, গোয়ালের গরু এমনকি বসতভিটা পর্যন্ত লিখে দিতে হয় সুদ ব্যবসায়ীদের নামে। সুদ ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এরই মধ্যে অনেকে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। সুদের ব্যবসা কয়েক বছর ধরে চলছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। সুদের টাকা নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

এনামুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, সুদ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষদের রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। যদি কেউ বিপদে পড়ে ৫০ হাজার টাকা সুদে নেয়, তাহলে পাঁচ মাস পর এক লাখ টাকা দিয়েও সুদ ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ হয় না। সুদ ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের জমি পর্যন্ত জোরপূর্বক লিখে নিচ্ছে। এরা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে জীবনের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পর্যন্ত পাচ্ছেন না।
গফুর মিয়া নামের এক ব্যক্তি জানান, বছর পাঁচেক আগে এক ব্যক্তির কাছে থেকে ১০ হাজার টাকা সুদে নেয়। এরই মধ্যে ব্যবসা করে ৬০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সুদের টাকা এখনও শোধ না হওয়ার কারণে জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়ার চেষ্টা করছে। তিনি আরও জানান, এই সব সুদ ব্যবসায়ীর কারণে মনের কষ্টে অনেকে ট্রেনের নিচে মাথা ও গলায় ফাঁস এবং বিষপানে আত্মহত্যা করছে বলে নজির আছে।
এক স্কুল শিক্ষক সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে সুদখোরকে তার ব্যাংকের চেক বইয়ের পাতা স্বাক্ষর করে দিতে বাধ্য হন। তার জায়গা জমি বিক্রি করেও সুদের টাকা পরিশোধ হয়নি। বর্তমানে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। ঝুন্টু নামের আরেক ব্যক্তি সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। শফিকুল নামের এক ব্যক্তি তিন লাখ টাকা সুদ নেন। সেই টাকা বেড়ে সুধ-আসলে প্রায় আট লাখ টাকা হয়েছে। অবশেষে তিনি টাকা দিতে না পেরে ছেলেমেয়ে রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
রেজাউল করীম ও লিটন জানান, এক বছর আগে তারা সুদ ব্যবসায়ীর কাছে থেকে কিছু টাকা সুদ নেয়। কিছুদিন যেতে না যেতেই এক লাখ ৫৫ হাজার টাকা দামের দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে নেয় সুদ ব্যবসায়ী। তার কিছুদিন পর ব্র্যাক ব্যাংক, বাড়ির গরু বিক্রি করে ও শ্বশুর বাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়া হয় এ সুদ ব্যবসায়ীকে। তারপরও তিন লাখ টাকার দাবিতে বাড়ি লিখে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গরু ব্যবসায়ী জানান, বছর দু’য়েক আগে এক সুদ ব্যবসায়ীর কাছে থেকে পাঁচ লাখ টাকা গরু ব্যবসার জন্য নিয়েছিলাম। সপ্তাহে ওই টাকার বিনিময়ে সুদ হিসেবে গুনতে হতো ৩৫ হাজার টাকা। তার ৮ মাসে ১১ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু তারপরও টাকার দাবিতে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি আরও জানান, এখন সুদ ব্যবসায়ীরা জমি লিখে নেয়ার জন্য তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এমনকি সুদ ব্যবসায়ীরা জীবননাশের হুমকি পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য আড়ানী বাজারের মুদি ব্যবসায়ী বসু হালদার সুদের টাকার অত্যাচারে কয়েক মাস আগে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অপর দিকে গনেস কর্মকার নামের এক ব্যক্তি সুদের টাকা দিতে না পেরে ভারতে পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এক সিট কাপড় ব্যবসায়ী কিছুদিন আগে সুদের টাকা নিয়ে পরিশোধ করতে না পারায় দোকান বন্ধ করে দিয়েছিল সুদ ব্যবাসয়ীরা। এক স্কুল শিক্ষক আড়ানী থেকে পালিয়েও রক্ষা পাচ্ছে না। এই সুদ ব্যবাসয়ীরা কেউ তিনতলা, দোতালা, ৫ তলা ফ্লাট নির্মান করছে। তারা আগে অন্যের কাজ করত। এখন তারা সমাজের প্রধান নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এই সুদ সিন্ডিকেটের উপর নজর দিতে এলাকাবাসী প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে দাবি জানিয়েছেন।
বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল হাসান রেজা জানান, সুদ ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া কথাটি শুনেছি। এছাড়া সুদ ব্যবসার টাকার জন্য কারও জমি, কারও বাড়ি, এমনকি কাউকে মারধর করা হয়েছে, এমন ঘটনা যদি কেউ থানায় অভিযোগ করে তাহলে সুদ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।