রাজাপুরে চিরচেনা মৃৎ শিল্প বিলুপ্তির পথে

0
671

জাকির সিকদার:: বাজারে প্লাষ্টিক সামগ্রীক ভিড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে রয়েছে দেশের চিরচেনা মৃৎ শিল্প।দেশের বিভিন্ন স্থানের মত ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার মৃৎ শিল্পীদের ঘরে ঘরে হাহাকার নেমে এসেছে।ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপট। রাজাপুরের ইন্দ্রপাশা গ্রামের কুমার পাড়ার বাসিন্দাদের পরিবারে দুর্দিন নেমে এসেছে। কুমারপাড়ার চাকা আজ আর তেমন ঘোরে না। মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল,সরা,বাসন,কলসি,বদনা কদর প্রায় শূন্যের কোঠায়। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অন্যতম ধারনা-বাহন মৃৎ শিল্প।

 

এ দেশের কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে এ শিল্প টিকিয়ে রেখেছে। কুমার সম্প্রদায়ের হাঁড়ি-পাতিল ও কলস সহ যে কোন মৃৎ শিল্প তৈরিতে প্রধান উপকরন হচ্ছে এটেল মাটি,জ্বালানি কাঠ,শুকনো ঘাস ও খড়। এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের বহুমাত্রিক ব্যবহার ছিল। তখন এ শিল্পের সব মহলেই কদর ছিল। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এ শিল্পের মালামাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সরবরাহ করা হতো। র্সূয উঠার সঙ্গে সঙ্গে কুমাররা মাটি দিয়ে তৈরি পাতিলের বোঝাই ভার নিয়ে দলে দলে ছুটে চলত প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লায়। পাতিল,গামলা,কূপি বাতি,থালা,দূধের পাত্র, ভাঁপাপিঠা তৈরির কাজে খাঁজ,গরুর খাবার পাত্র,কুলকি,ধান-চাল রাখার বড় পাত্র,কড়াই,মাটির ব্যাংক,শিশুদের জন্য রকমারি নকশার পুতুল,খেলনা ও মাটির তৈরি পশুপাখি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত এবং পন্যের বিনিময়ে ধান সংগ্রহ করে সন্ধায় ধান বোঝাই ভার নিয়ে ফিরে আসত বাড়িতে। ওই সব ধান বিক্রি করে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনত। কিন্তু সরকারের পৃষ্টপোষকতা ও সহযোগিতার অভাবে আজ এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় মৃৎ শিল্প এখন প্রায় ধ্বংসের মুখে। কুমাররা মাটির তৈরি জিনিস হাট-বাজারে বিক্রি করেন। কিন্তু তেমন বেচাকেনা নেই। এখন দিন বদলে গেছে। সবখানেই এখন প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। তাই মাটির তৈরি জিনিসের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই।ফলে মৃৎ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কুমার পরিবারগুলো আর্থিক সষ্কটসহ নানা অভাবে অনটনে জড়িত। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে দেশের অনেক কিছুর পরির্বতন হলেও পরির্বতন হয়নি মৃৎ শিল্পের। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলায় কুমার পরিবারগুলোর নেই কোন আধুনিক মেশিন ও সরজ্ঞাম। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। গ্রামের গৌরাঙ্গচন্দ্র পাল জানান, অভাব অনটনের মধ্যে ও হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার বাপ-দাদার পেশা আঁকরে ধরে আছে।মাটির হাঁড়ি-পাতিল,ঢাকনা হাট-বাজারে ভ্যান নৌকা ভারা দিয়ে হাটে আনলেও জিনিস বিক্রি হয় না। এখন তাদের অনেকেরই অবস্থা শোচনীয়। আরো জানান,হাঁড়ি-পাতিল ও অন্যসব জিনিসপত্র তৈরি করতে কাঁচা মাল এটেল মাটি আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদী থেকে সংগ্রহ করা যেত। বর্তমানে নদী ভরাটের কারনে নদী থেকে আর মাটি তোলা যায় না। তাই পাশের গ্রাম থেকে টাকা দিয়ে মাটি কিনে ভ্যানে নৌকায় করে আনতে হয়। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাটির জিনিস তৈরি করে রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে ব্যবহারযোগ্য করে সেগুলো জেলা-উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। মৃৎ শিল্পীরা সরকারের কাছে থেকে স্বল্পশর্তে ঋন সহায়তা পেলে হয়ত এ পেশা চালিয়ে যেতে পারবেন বলে তারা দাবি করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

9 + 1 =