অচল হিসাব সচল হলে নতুন বিনিয়োগও আসবে

0
847

ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আবারও পুঁজিবাজারে সক্রিয় করতে মার্জিন ঋণের শতভাগ মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ সময়ে সম্পদ ঘাটতিযুক্ত পাঁচ হাজার ১৬২টি বিনিয়োগ হিসাব শতভাগ সুদ মওকুফ সুবিধা পাবে। মওকুফযোগ্য এই অর্থের পরিমাণ ১৮২ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে ২০১০ সালে ক্ষতিগ্রস্তরা আবারও বাজারে সক্রিয় হবে। অচল হিসাব সচল হলে নতুন বিনিয়োগও আসবে। সব মিলিয়ে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব আশা করছেন তাঁরা। ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে বড় ধস নামে। হুজুগে আর গুজবে ভর করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণের পাশাপাশি ধারদেনা করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। আকাশচুম্বী বাজারে পতন ঘটলে কম্পানির শেয়ারের দাম কমতে থাকে। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে ফেললেও মার্জিন ঋণে সুদের অর্থ বাড়তেই থাকে। এতে অনেক বিনিয়োগকারী নিজ হিসাবের খোঁজ-খবর নেওয়াও বন্ধ করে দেয়। আর ঋণ দিয়ে বেকায়দায় পড়ে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। মার্জিন ঋণ নেওয়া ঋণাত্মক সম্পদধারী অ্যাকাউন্টের শেয়ার কেনাবেচা করে ক্ষতি পোষাতে সময় পেয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউস। আইসিবি সূত্র জানায়, ২০১০ সালে ধসের পর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সংরক্ষণে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা ও আইপিওতে কোটা সংরক্ষণ সুবিধা দিয়েছে সরকার। ৯০০ কোটি টাকার সহায়তা ফান্ড গঠন করে স্বল্প সুদে ঋণ সরবরাহ করছে। ধসের পর ২০১১ সালে এক আহ্বায়ক ও পাঁচ সদস্যের বিশেষ স্কিম কমিটি গঠন করে সরকার। ৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৮০ জন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীকে আইপিও কোটা সুবিধার আওতায় নেওয়া হয়। আইসিবি সূত্রে জানা যায়, ইনভেস্টর স্কিমের আওতায় মার্জিন ঋণধারী ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগ হিসাবধারীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সম্পদ ঘাটতিযুক্ত বিনিয়োগ হিসেবে গত সাত বছর তিন মাসের (১.১.২০১১-৩১.০৩.২০১৮) সুদ শতভাগ মওকুফ করা হবে। চলতি মাসের ৭ তারিখে আইসিবির পরিচালনা বোর্ডের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি বিনিয়োগ হিসাবে সুদ মওকুফ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জানা যায়, কয়েকটি শর্তে এই সুদ মওকুফ সুবিধা কার্যকর হবে। সাত বছর তিন মাসের শতভাগ সুদ মওকুফ করা হবে, তবে এই অর্থের পরিমাণ আলোচ্য সময়ে প্রযোজ্য সুদ বিনিয়োগ হিসাবে থাকা সম্পদ ঘাটতির তুলনায় বেশি হতে পারবে না। ৫ শতাংশ অর্থ নগদ কিংবা তহবিল স্থানান্তরের মাধ্যমে পরিশোধ করলে সুদ মওকুফ সুবিধা ও সিকিউরিটিজ কেনার সুযোগ পাবে। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব বিনিয়োগকারী সুদ মওকুফ সুবিধা পেয়েছে, তারা বর্তমানে সুদ মওকুফের জন্য বিবেচিত হলে আগের মওকুফ করা অর্থ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ মওকুফ করাতে পারবে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু শর্ত সাপেক্ষে এই সুদ মওকুফ সুবিধা কার্যকর হবে। চলতি বছরের ২৮ জুন পর্যন্ত সুদ মওকুফের সময় বলবৎ থাকবে। পাশাপাশি শতভাগ ঋণ সুবিধা মওকুফের একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে। এই তালিকা থেকে জানা যায়, আইসিবির ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বগুড়া ও বরিশাল অফিসের বিও হিসাবধারীরা এই সুবিধা পাবে। আইসিবির পাশাপাশি আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কম্পানি ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের গ্রাহকরাও একই সুবিধা প্রযোজ্য হবে। এর আগেও প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্তদের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ মওকুফ করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen − four =