স্টাফ রিপোর্টারঃ
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের শেল্টারে তন্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, যুবলীগ সভাপতি জাকির হোসেনের চাঁদাবাজী বেপরোয়া রুপ ধারন বলে অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান জাকিরের অবৈধ কাজে সরকারী নিয়মে ইএনও এর পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করায় স্থানীয় জনগন এই অভিযোগ করেছে। চেয়ারম্যান জাকিরের ক্ষমতার দাপটের কাছে জিম্মি হয়ে পরেছে ওই ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার। চেয়ারম্যান তার নিজের বাড়িতে রাস্তা নির্মানের জন্য ওই এলাকার শতাধিক পরিবারকে জিম্মি করে তাদের ফসলী জমি, বসত বাড়ি, সরকারী স্কুলের মাটি, কয়েকশত গাছ কাটা এবং রাস্তা নির্মানের অজুহাতে স্থানীয় জনসাধারনের নিকট থেকে মাত্রারিক্তি চাঁদা আদায় করায় রীতিমতো আতংকিত হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগি পরিবার গুলো।
এমনকি জাকির চেয়ারম্যান তার প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যানকে ঘায়েল করার জন্য বিগত সময়ে ঐ চেয়ারম্যানের নির্মানাধীন রাস্তা থেকে ৬৬ লক্ষ টাকার ইট উত্তোলন করে নিজের বাড়ীর রাস্তার কাজে ব্যবহার করছে। কোন জমির মাটি কাটতে হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদন নেয়ার বিধান থাকলেও চেয়ারম্যান জাকির তার তোয়াক্কা না করে নিজে ক্ষমতার দাপটে অন্যের জমি হতে জোড়পূর্বক মাটি কেটে এনে ওই পরিবার গুলোকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। আর যাদের জমি রাস্তার পাশে পড়ে নাই তাদের নিকট থেকে অন্তত ৩০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। জাকিরের এমন দুর্ধর্ষ অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে স্থানীয় জনগন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন উপকার পায়নি। ফলে ভুক্তভোগি জনগনের উপর জাকিরের নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে গেছে।
সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসীর অভিযোগ করে বলেন, জাকির চেয়ারম্যান ইউপি নির্বাচনের প্রতিশোধ নিতে নিজের ক্ষমতার দাপটে বিগত নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যানের নির্মিত প্রায় ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে দেড় কিলোমিটার রাস্তার বিছানো ইট উত্তোলন করে নিজের বাড়ীর রাস্তার কাজে ব্যবহার করছেন। একাজে তিনি উপজেলা এলজিইডির কোন অনুমুতি বা সরকারী বরাদ্দ না নিয়ে বরং স্থানীয়দের কাছ থেকে জোর পূর্বক প্রায় ৩০ লাখ টাকা চাঁদা তুলেছেন। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বা মাটি কাটতে বাধা দিলে রাতের আধারে ওই এলাকার ত্রাস চেয়ারম্যানের বিয়াই জেলা যুবদলের নেতা নাসির উদ্দিনের টর্চার সেলে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করেন।
এলাকাবাসী আরো জানায়, ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কারনে একেক জনের বাড়ির সামনে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জোড়পুর্বক ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর বানানো হয়েছে। পাশ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাটি কাটা হয়েছে নির্বিচারে। এই অবস্থায় মানুষের ভেতরে বোবা কান্নাসহ চাপা কষ্ট বিরাজ করছে। কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ঐ গ্রামের একাদিক লোকের কাছে তথ্য জানতে চাইলে তারা কোন কথা না বলে চোখ পানি মুছতে মুছতে বাড়ির ভিতরে চলে যান। এঘটনায় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় স্থানীয় জনগনের উপর আরো বেশী নির্যাতনের খড়গ নেমে এসেছে এবং পরবর্তী সময়ে যাতে কোন সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহ করতে না পারে তাই চেয়ারম্যান জাকির ওই এলাকায় সাংবাদিকদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে।
জানা গেছে, ব্রাক্ষ্মনখোলা মালিবাগান এলাকা থেকে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১২ ফুট প্রসস্থ রাস্তাটি উপজেলার এলজিইডির তালিকা ভুক্ত এবং তাদের অর্থায়নে ইট বিছানো হয়। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে যারা জাকিরের বিরোধিতা করেছে তাদের বাড়ি ঘর কেটে কোন কোন স্থানে রাস্তাটি ২৫ ফুট পর্যন্ত প্রশস্ত করা হয়েছে। মাটির যোগান দেওয়া হয়েছে অন্যদের জমিতে ড্রেজার বসিয়ে। ইট সংগ্রহ করা হয়েছে তার সাবেক চেয়ারম্যানের নির্মান করা রাস্তা থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মনে হচ্ছে আমরা এরশাদ শিকদারের এলাকায় বসবাস করছি।
সাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, এব্যাপারে এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছিল। তাতে আরো উল্টো ফলাফল হয়েছে ।
উপজেলা এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আঃ মান্নান বলেন, এলজিইডির রাস্তার ইট তুলে নেওয়া অন্যায়। আমার অফিসের লোক পাঠিয়ে যে তথ্য পেয়েছি তাতে জাকির চেয়ারম্যান নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেছে।
তন্তর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন টর্চার সেলে নির্যাতন ও সাংবাদিক প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, জনগনের সুবিধার জন্যই রাস্তা নির্মান করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় লোকজনের নিকট থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদুল ইসলামের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলায় মিটিং চলছে তাই পরে কথা বলবো।
অপরদিকে জাকিরের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করায় তার আতংক আরো বেশী প্রভাব বিস্তার করেছে। স্থানীয় লোকজন সাংবাদিক বা প্রশাসনের নিকট মুখ খুলতে পারছে না। অথবা কেউ সাংবাদিকদের সাথে কথা বললে কিছুক্ষন পরেই শুরু হয় শাররিক বা মানসিক নির্যাতন বা দেখে নেয়ার হুমকি ধমকি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামকে ম্যানেজ করে রাস্তা নির্মানের ঘটনায় জাকির যে পরিমান অপকর্ম করেছে তাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মামলা হলে জাকিরের এখন জেলহাজতে থাকার কথা। কিন্তু সে এখন বুক ফুলিয়ে সবার সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে স্থানীয় জনমনে আরো বেশী ভয়ভীতি সৃষ্টি হয়েছে।