বাঁশখালী উপজেলাজুড়ে চলছে লিচু উৎসব

0
751

চলতি বছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে বাঁশখালীতে। তাই উপজেলাজুড়ে চলছে লিচু উৎসব। গাছে থোকায় থোকায় লাল রঙের লিচুগুলো এলাকার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে উপঢৌকন হিসেবে যাচ্ছে লিচুর ঝুড়ি। আর পাইকারি-খুচরা লিচু বিক্রির ধুম পড়েছে স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে দেশের নানা প্রান্তের পাইকারি ক্রেতারা প্রতিদিন বাঁশখালীর বিভিন্ন স্থান থেকে লিচু কিনে ট্রাকে ট্রাকে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাঁশখালীর কালীপুরের লিচুর সুখ্যাতি দেশজুড়ে। তাই লিচু কিনতে কালীপুরেই ক্রেতার ভিড় বেশি। তবে লিচুর চাষাবাদ শুধু কালীপুরে সীমাবদ্ধ নেই। পুরো উপজেলাজুড়ে হয় লিচুচাষ। প্রাকৃতিক নিয়মে এই লিচু উৎসব আর চার সপ্তাহ চলবে। এরই মধ্যে গাছগুলো লিচুশূন্য হয়ে পড়বে। তবে পরিবেশগত কারণে বাঁশখালীর উত্তর প্রান্তে অধিকাংশ এলাকায় লিচু বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। দক্ষিণ বাঁশখালীতে এখনো আছে লিচু। তবে বিক্রেতারা দক্ষিণ বাঁশখালীর লিচু ‘কালীপুরের লিচু’ হিসেবে বিক্রি করছেন। জানা গেছে, বাঁশখালীতে লিচু উৎসব এক থেকে দেড় মাসের বেশি স্থায়ী হয় না। কারণ লিচু পাকা শুরু হলে একসঙ্গে পাকে। গাছে পাকলেই ১/২ সপ্তাহের বেশি রাখা যায় না। তাই দ্রুত বিক্রি করে দিতে হয়। এদিকে রসালো এই ফল নিয়ে এলাকার মানুষের উৎসাহের কমতি নেই। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেলে এ সময়ে লিচু না নিলে কৈফিয়ত দিতে হয়! হাট-বাজারে অধিকাংশ মানুষের হাতে শোভা পাচ্ছে লিচু। লিচু দিয়ে চলছে আতিথেয়তা। স্থানীয় সরকারি-বেসরকারি কিছু কর্মকর্তাকে লিচু উপঢৌকন দিয়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন কাজও আদায় করে নিচ্ছেন! প্রতিদিনই বিভিন্ন অফিসের কোণা বা টেবিলের নিচে থলেভর্তি লিচুর দেখা মেলে। সব মিলিয়ে বলা যায় লিচু নিয়ে বাঁশখালী উৎসবমুখর। বাঁশখালীর লিচু ফলনজাত এলাকা কালীপুর, বৈলছড়ি, পুকুরিয়া, সাধনপুর, জলদী, চাম্বল, পুঁইছড়ি ইউনিয়নে ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার এখানে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। অধিকাংশ গাছ লিচুতে ভরপুর। তবে মৌসুমের শুরুতে একটু বৃষ্টি হওয়ায় লিচু পাকতে একটি দেরি হয়েছে। আর কিছু পুরনো লিচু গাছে এবার লিচুর ফলন হয়নি। তবে গত বছরের তুলনায় লিচু গাছের সংখ্যা বেড়েছে। লিচু পাকার সময় বৃষ্টি না হওয়ায় পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ায় লিচুর দামও চড়া রয়েছে। এতে চাষিরা বেশ খুশি। খুচরা ও পাইকারি লিচু এখন প্রতি শ মানভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, বাঁশখালীর পূর্বাংশে পুকুরিয়া থেকে পুঁইছড়ি পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিলোমিটার এলাকার পাহাড়ি ও সমতল অংশে ব্যাপকহারে লিচুর ফলন হয়। উপজেলায় প্রতিবছর প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে লিচু উৎপাদিত হয়। এবার তা আরো ২০ হেক্টর বেড়েছে। এসব উৎপাদিত লিচুর মধ্যে কালীপুরের দেশীয় জাতের ৯০ ভাগ লিচু রয়েছে। বাকি ১০ ভাগ লিচু চায়না-থ্রি ও চায়না-টু জাতের। ওই দুই জাতসহ মঙ্গলবারিয়া নামে আরো একটি জাতের লিচু কলমের মাধ্যমে চাষ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। চায়না থ্রি জাতের লিচুর শাঁস বড়, বিচি ছোট হয়। এ জাতের লিচুর ফলন একটু দেরিতে আসে। দেশীয় জাতের লিচুর বিচি বড়, শাঁস ছোট হয়। তবে এ জাতের লিচু খুব বেশি মিষ্টি হয়। প্রতিটি লিচুগাছ ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সে লিচু গাছ বেশি ফলন দেয়। এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লিচু চাষের জন্য বাঁশখালীর মাটি খুবই উপযুক্ত হওয়ায় লিচুর ফলন হয় বেশি। ফলে চাষিরা লিচু বিক্রি করে অধিক টাকা পেয়ে মহাআনন্দে আছেন। লিচু গাছে একবছর ভালো ফলন হলে অন্য বছর একটু কম হয়। সে কারণে পুরাতন কিছু গাছে লিচু কম ফলন হয়েছে।’কালীপুরের জাফর আহম্মদ জানান, তাঁর ৩০০ গাছ নিয়ে কালীপুরে দুটি বাগান রয়েছে। সব কয়টি বাগানে কম বেশি লিচু ধরেছে। একই রকম বক্তব্য লিচুচাষি পালেগ্রামের নুরুল আলম, আজি আহম্মদ ও কালীপুরের মো. ইউছুফের। তাঁরা জানান, গত বছর এই সময়ে তাঁরা ৩/৪ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। এ বছর আরো বেশি মুনাফা অর্জন হবে। তবে মৌসুমের শুরুতে পাইকারিভাবে লিচু বিক্রি হয়েছে স্থানীয় নিয়মে হাজার প্রতি ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকায়। এখন তা একটু কমে ২৮০০ থেকে ৩৫০০ টাকায় নেমেছে। স্থানীয় নিয়মে হিসাব করা হয় ১২০০ লিচুতে ১ হাজার লিচু । লিচুর পাইকারি বাজার কালীপুর স্কুলের পাশে পাইকারি লিচু ক্রেতা ঢাকার লিচু ব্যবসায়ী আবুল কালাম, নবী উদ্দিন, চন্দনাইশের আলা উদ্দিন প্রকাশ আলী সওদাগর ও রামুর সেলিম উদ্দিন বলেন, এবার লিচুর দাম খুব চড়া। আমাদেরকে হাজার প্রতি ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গত বছর এ সময় ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায় কিনেছি। তবে লিচুতে পোকা আক্রমণ না করায় বেশি দামে লিচু কিনেও আনন্দ লাগছে। তারা কিছু লিচু হাজার প্রতি ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকায়ও কিনছেন বলে দাবি করেন। তবে এগুলো জাতে ভালো নয় এবং আকারে ছোট।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three + 13 =