তাদের দান কবুল হবেনা,আল্লাহ এসব গ্রহন করবেন না

0
838

প্রায় প্রতি বছরই শোনা যায়, যাকাত নিতে গিয়ে ভীড়ে শ্বাসরুদ্ধ বা পদপিষ্ট হয়ে অনেক মানুষ প্রাণ হারায়। এ বছর ইফতার সামগ্রী আনতে গিয়ে চট্টগ্রামে নয়জন মহিলা পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রামে মেজবানের খানা খেতে গিয়ে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বহু লোক মারা যায়। এসব মূলত আয়োজকদের মূর্খতারই প্রমাণ।

মেজবানের খানা যারা খেতে আসেন, তাদের সহজে আসা যাওয়া ও শৃংখলার সাথে বসার ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞ লোকদের দ্বারা করাই কর্তব্য। যাদের মানুষের চাপ ও আসা যাওয়ার প্রবাহ সম্পর্কে জ্ঞান নেই, ধারনা নেই তারা যদি বড় সমাবেশ সামলানোর দায়িত্ব নেয় তাহলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রমজানে মানুষকে শুকনো ইফতার সামগ্রী দেওয়ার চিন্তা যারা করেন, তারা কেন সেই মানুষগুলোকে বাড়ি বা কারখানায় ডেকে আনেন? মানুষ অভাবে থাকে বলেই এ ইফতার নেওয়ার জন্য ভীড় করে। সংকীর্ণ জায়গায় কোনো নিয়ন্ত্রন ছাড়া বেশি লোক জড়ো হলে ধাক্কাধাক্কি, চাপ বা ধাওয়ার ফলে তারা শ্বাসরুদ্ধ বা পদপিষ্ট হয়ে মারা যায়। ইফতারি দিয়ে সওয়াব পাওয়ার চেয়ে মানুষ হত্যা করা কত বড় কলঙ্কজনক বিষয় তা ভাবলে এমন কাজ আর কেউ করবে না। নিজেদের লোকজন দিয়ে ইফতার পেতে পারে এমন পরিবারের একটি তালিকা করে নিয়ে তাদের কাছে নিরবে ইফতার পৌঁছে দেওয়া কি আরও ভালো দেখায় না! যদি কেউ সুনাম বা লোক দেখানোর জন্য ইফতার বিলি করে এলাকায় সাড়া ফেলে দিতে চান, কিংবা নিজেকে বড় দানবীর ও বড় সওদাগর প্রমাণ করতে চান ইসলাম তাদের সতর্ক করে দিয়েছে। তাদের দান কবুল হবেনা। আল্লাহ এসব গ্রহন করবেন না, সওয়াবও দেবেন না। শরীয়তে লোক দেখানোকে বলা হয় ‘রিয়া’। হাদীসে একে ছোট শিরক বলা হয়েছে। যদি সঠিক নিয়তেও কেউ ইফতার বিলি করে তথাপি তার উচিত এসব সামগ্রী গোপনে প্রাপকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। প্রকাশ্যে দেওয়ার একটি নিয়ম শরীয়তে আছে। যাতে দাতা নিয়ত করবে যে, আমাকে দেখে অন্য সওদাগর, শিল্পপতি ও ধনী ব্যক্তিরা মানুষের মাঝে ইফতার বিলি করুক। এটি মুসলমানদের একটি সংস্কৃতি হয়ে উঠুক। তাহলে প্রকাশ্যে দান দোষনীয় থাকে না। তবে এ দান বা উপহার বণ্টনে এমন নিঁখুত ও সম্মানজনক ব্যবস্থা করতে হবে যাতে এর প্রাপকদের প্রাণ ও সম্মান কোনোটাই নষ্ট না হয়। যাকাতের ক্ষেত্রেও একই কথা। যারা বড় অংকের যাকাত দেন, বেশি মানুষকে দেন তারা যাকাত প্রাপকদের একটি তালিকা সময় নিয়ে সুন্দর করে তৈরি করবেন। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সে যাকাত পাওনাদারদের কাছে পৌঁছে দেবেন। কেননা, যাকাত করুণা নয়, এটি ধনীদের কাছে প্রাপকদের নির্ধারিত পাওনা। যাকাত গ্রহীতার চেয়ে যাকাত দাতা এখানে বেশি চাপে থাকেন। কারণ, প্রকৃত হকদারের কাছে যাকাত পৌঁছে দেওয়া তার নৈতিক দায়িত্ব। যাকাত বিষয়ে একটি পদ্ধতি চালু আছে। একজন বিত্তবান তার আত্মীয়, প্রতিবেশী ও চেনা-জানা লোককে যাকাত দেওয়ার জন্য তাদের ব্যাংক একাউন্ট বা বিকাশ নম্বর সংগ্রহ করেন, এবং টাকা সেখানে দিয়ে দেন। এক ব্যক্তি যাদের যাকাত দিবেন, তাদের মাঝে সিরিয়াল অনুযায়ী ¯িøপ বণ্টন করেন। বিভিন্ন ঠিকানা থেকে তারা ১০/২০ জন করে কয়েকদিনে যাকাত নিয়ে যায়। এতে শত শত লোক যাকাত নিলেও কোনো ভীড় হয় না, মানুষও বিষয়টি টের পায় না। এক শিল্পপতি (বর্তমানে মরহুম) তার এলাকার সব গরীব মানুষকে কয়েক বছরে পাকা ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। বিদেশ যেতে চায় এমন প্রতি ঘরের একটি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছেন। শত শত মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। তার অফিসে দরখাস্ত করলে ঋণমুক্তি, চিকিৎসা, পড়ার খরচ ইত্যাদি দিয়েছেন। এক শিল্পপতি তার গরীব কর্মচারীদের ঈদ বোনাসের সাথে যাকাতের আলাদা অংক যোগ করে দেন। যাতে কোনো কষ্ট বা অপমান তাদের সইতে হয় না। কিন্তু মূর্খতা ও আত্মপ্রচার যখন প্রবল হয়ে যায়, আর অনভিজ্ঞ লোকেরা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকে তখন যাকাতের মতো, ইফতারের মতো, দাওয়াতের মতো কল্যাণের বিষয়গুলো মৃত্যু ও দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমরা মনে করি বিত্তশালীরা যদি সম্পদের হিসাব, যাকাতের পরিমাণ, বণ্টনের পদ্ধতি, সঠিক খাত ইত্যাদি বিষয়ে প্রাজ্ঞ শরীয়াবিদ ও শায়েখদের পরামর্শ গ্রহণ করেন তাহলে ইসলাম পালন হবে শান্তি ও স্বস্তির। কেননা, ইসলাম পালনে মূর্খতার কোনো স্থান নেই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven + seven =