সততা ও স্বচ্ছতার সাথে যথাযথ দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে হয়রানী এবং এলটিইউ-ভ্যাট এর সামগ্রিক তথ্যাদি

0
1308

এম হোসেনঃ
নিম্ন স্বাক্ষরকারী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাট দপ্তর বৃহৎকরদাতা ইউনিটে কর্মরত। বৃহৎকরদাতা ইউনিট, মূল্য সংযোজনকর দপ্তর কর্তৃক দেশের বিভিন্ন জেলার ১৭০ টি বৃহৎকরদাতা প্রতিষ্ঠান এর রাজস্ব (মূল্য সংযোজনকর, সম্পূরক শুল্ক ও আবগারী শুল্ক) সংক্রান্ত সকল কার্যাদি পরিচালিত হয়। এ দপ্তরটি দেশের অর্থ নৈতিক উন্নয়নেরজন্য আধুনিক মূসক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জাতীয় বাজেটে সম্পদের সরবরাহের লক্ষ্যে ১০৭ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীর মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সাথে দাপ্তরিক কার্যাদি সম্পাদন করে আসছে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এলটিইউ-ভ্যাট সর্বমোট ৩৬,৭৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩৬, ৯৮৩ কোটি টাকা আহরণ করতে সক্ষম হয়, যালক্ষ্য মাত্রার তুলনায় ২৫১ কোটি টাকা বেশী। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রণীত বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা এবং বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অনুসরণ পূর্বক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সচেষ্ট এদপ্তর। ইতোমধ্যে এ দপ্তরকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত ও হয়রানিমুক্ত অফিস হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে দপ্তর পরিচালনা করা হচ্ছে।

 

২। আপনি অবগত আছেন যে, সমগ্র বাংলাদেশে ১২ (বারো) টি ভ্যাট কমিশনারেট রয়েছে এবং এলটিইউ-ভ্যাটভিন্ন আঙ্গিকে একটি প্রতিষ্ঠান যা কেবল নির্দিষ্ট ইউনিটসমূহের মূসক আদায় ও তদারকী করে। নিম্মের ছকে এলটিইউ-ভ্যাট দপ্তরের ভ্যাট আদায়ের অংশ দেখানো হলোঃ
উপরি-উক্ত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে যে, এলটিইউ, ভ্যাট ব্যতীত অন্যান্য ১২ (বার) টি কমিশনারেটের রাজস্ব আদায় সঠিক বা কাঙ্খিত মাত্রায় না হাওয়ার কারণে এবং এলটিইউ, ভ্যাট সঠিক মাত্রায় রাজস্ব আদায়করায় এলটিইউ, ভ্যাট এর অংশ অস্বাভাবিকবৃদ্ধিপেয়েছেযা প্রশংসাযোগ্য।
৩। বৃহৎ করদাতা ইউনিট, ভ্যাট দপ্তরের বিগত পাঁচ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের তথ্যচিত্র আপনার অবগতির জন্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১.৫৯% ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মার্চ, ২০১৮ পর্যন্তসময়ে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮.৬০% যা বৎছর শেষে ২২% হবে মর্মে আশা করা যায়। অন্যদিকেমূসক (ঠঅঞ) খাতে জাতীয় রাজস্ববোর্ডের প্রবৃদ্ধি ১৬. ৬৬% (মার্চ/১৮পর্যন্ত)।
নিম্ন স্বাক্ষরকারী ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে দায়িত্বরত আছেন।
৪। এলটিইউ-ভ্যাট দপ্তরকে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত করার পাশাপাশি যথাযথ টিমওয়ার্কের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
যেমনঃ
(ক) ইন্টেলিজেন্স ওয়ার্কের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ঃ
* আকষ্মিক পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক লিঃ এর ৫.৫২ কোটি টাকা মূসক এবং ২৩ কোটি টাকা আবগারী শুল্ক আদায় করা হয়েছে।
* অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ গ্রামীনফোন লিঃ ও বাংলালিংক হতে ২১. ৯৯ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।
* ব্যাংক একাউন্ট অপরিচালনযোগ্য (ভৎববুব) করে অপরিশোধিত সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ রবি আজিয়াটা লি: হতে ১০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার উপর মূসক এর বিষয়ে এডিআরে আবেদন করেছে। অনতি বিলম্বে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা আদায় হবে।
* দাবিনামা জারির মাধ্যমে বিটিআরসি থেকে স্পেকট্রাম ফি ও লাইসেন্স ফি এর উপর মূসক বাবদ ১৫২.৫০ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।
* আকষ্মিক পরিদর্শনের মাধ্যমে ন্যশনাল ব্যাংক লি: এর ০.২১ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে।
* মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা ২৬ এর প্রদত্ত্ব ক্ষমতাবলে আকষ্মিক পরিদর্শন করে প্রিমিয়ার ব্যাংক লিঃ এর ভ্যাট ও উৎসে মূসক বাবদ ২০. ১০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটনপূর্বক ব্যাংক একাউন্ট অপরিচালনযোগ্য (ভৎববুব) করে উক্ত টাকা আদায় করা হয়েছে।
* আকষ্মিক পরিদর্শনের মাধ্যমে হেলথকেয়ার ফার্মাসিটিক্যালস্ এর প্রায় ১২ কোটি টাকা মূসক ফাকির তথ্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে যা অনতিবিলম্বে আদায় হবে।
(খ) দাবিনামা জারিঃ
মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৫৫ মোতাবেক দাবিনামা জারি করা হয়েছে মোট ৬৮ টি, জড়িত রাজস্ব ৪২৫৬.৩২ কোটি টাকা, আদায় ৫১২. ৯০ কোটি টাকা।
(গ) বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (অউজ)ঃ
বৃহৎ করদাতা ইউনিট, মূল্য সংযোজন কর দপ্তরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মোট আবেদন ৪২ টি, জড়িত রাজস্ব ৪৬ কোটি। এডিআর এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৩৯টি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে এবং ২৮.৩৬ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
(ঘ) বকেয়া রাজস্ব আদায়ঃ
বৃহৎ করদাতা ইউনিট, মূল্য সংযোজন কর দপ্তরে মার্চ মাস পর্যন্ত সর্বমোট বকেয়া আদায়ের পরিমাণ ৩৬৮৭.৫৪ কোটি টাকা।
(ঙ) অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রমঃ
বর্তমানে এ দপ্তর হতে ৬৪ টি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা আদেশ দেয়া আছে। ইতোমধ্যে ৩৭ টি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্নপূর্বক ৩৭ টি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে যাতে উদঘাটিত রাজস্ব ১৪২৯. ৫৭ কোটি টাকা; যার মধ্যে আদায় ৪৯.৭২ কোটি টাকা। বাকী প্রতিষ্ঠানসমূহের নিরীক্ষা কার্যক্রম চলমান আছে।
(চ) দাখিলপত্র পরীক্ষাঃ
দাখিলপত্র পরীক্ষা করে ইতোমধ্যে ১২০. ৬২ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে।
(ছ) বার্ষিক প্রতিবেদন যাচাই তথ্যঃ
বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন যাচাই করে ৬৯৮. ২০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে।
(জ) ট্রেজারী চালান যাচাইঃ
এ দপ্তরের আওতাধীন সকল করদাতা কর্তৃক জমাকৃত ট্রেজারী চালান সিজিএ এর অনলাইনে শতভাগ যাচাই করা হয়েছে।
(ঝ) তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নঃ
মূসক প্রদানে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টিং মিডিয়া, ফেইসবুক, ইমেইল ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকলকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বৃহৎ করদাতা ইউনিট, ভ্যাট দপ্তরেরও য়েবসাইটেও ফেইসবুক পেজে নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ করা হয়। এছাড়া, করদাতাগণের সেবা প্রদানের মানবৃদ্ধির জন্য এদপ্তরের সার্বিক তথ্য তুলে ধরে মোবাইল এপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে।
(ঞ) মামলা সমূহ নিষ্পত্তি ঃ
আপীলাত ট্রাইব্যুনালঃ আপীলাত ট্রাইব্যুনালে ৬৪০ কোটি টাকার ২টি মামলা এ দপ্তর থেকে দ্রুত নিষ্পত্তির কার্যক্রম গ্রহণ করায় ইতোমধ্যে সরকার পক্ষে রায় প্রদান করেছেন।
হাইকোর্ট বিভাগঃ
হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ১০টি মামলা (জড়িত রাজস্ব ২৩৮৪. ৯৮ কোটি) দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ দপ্তর থেকে দফাওয়ারী জবাব প্রেরণ করা হয়েছে, পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে, বিজ্ঞ এটর্নি জেনারেল এর সাথে সাক্ষাত করা হয়েছে এবং কজলিস্টে অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। অনতি বিলম্বে উক্ত মামলা নিষ্পত্তি হবে মর্মে আশা করা যায়।
৫। উপরি-উক্ত তথ্যাদি থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে, এলটিইউ-ভ্যাট দপ্তরে নিম্ন স্বাক্ষরকারী আপোষহীনভাবে রাজস্ব সুরক্ষা করছেন। অথচ একটি কুচক্রী দুষ্ট গ্রুপ নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে নানাভাবে নাজেহাল করে আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ের কতিপয় উদাহরণ নিম্নে তুলো ধরা হলো ঃ
(ক) প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বর্তমানে মূখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান এর সময়ঃ একটি গ্রুপ অশোক বড়–য়া, ঢাকা এ নামে মিথ্যা তথ্যাদিসহ নামে-বেনামে সহায় সম্পত্তির কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন যায়গায় পত্র প্রেরণ করে। এমনকি উক্ত পত্রে এও উল্লেখ করা হয় যে, মোঃ নজিবুর রহমান-কে সরিয়ে বাণিজ্য সচিব-কে আনায়নের জন্য একটি চক্র কাজ করছে। উক্ত চক্রে নিম্ন স্বাক্ষরকারীও রয়েছে। বিষয়টি ছিল মিথ্যা এবং বেনামী পত্রের বিষয়ে তদন্তের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও মহাপরিচালক, সিআইসিসহ একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। তদন্তে সকল বিষয় মিথ্যা প্রমাণিত হয়। (সূত্রঃ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সূত্র নং- ০৮. ০০. ০০০০. ০৩৮. ২৭. ০০৪. ১৭. ৬৮৫, তারিখ: ৩০ আগস্ট, ২০১৭ খ্রি:)
(খ) বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, এনডিসি মহোদয় যোগদান ও তৎপরবর্তীঃ দুষ্ট চক্র বিভিন্ন নামে বেনামীপত্র লিখতে থাকে এবং ব্যাপক হয়রানীর প্রচেষ্টা চলতে থাকে।
এর কারণ হলো ঃ
(র) জুন-জুলাই তে বদলী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যাতে বিতর্কিত করে গুরুত্বপূর্ণ জায় গায় পদায়নের জন্য বিবেচিত না করার সম্ভাবনা তৈরি করা যায়।
(রর) নিম্ন স্বাক্ষরকারী বন্ডেড ওয়ারহাউস ব্যবস্থাপনার অটোমেশন নিয়ে ডিপিপি তৈরী, একনেকে অনুমোদন এবং এ সংক্রান্ত সকল টেকনিক্যাল কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। মাফিয়া চক্র বন্ডেড ওয়ারহাউস সিস্টেম অটোমেশন হউক এটি কোন ভাবেই চাচ্ছে না।
কার্যতঃ
সঠিক টিম যাতে গঠন না হয় সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। (ররর) প্রতিটি বেনামীপত্রে রাজনৈতিকভাবে সরকারের অনুগত নয় ইত্যাদি বাজে তথ্যাদি উল্লেখ করা থাকে।
উল্লেখ্য যে, নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে বিএনপি শাসনামলে (২০০৪) সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগের দূর্ধর্ষ ক্যাডার বানিয়ে পত্রিকায় নিউজ ছাপিয়ে ব্যাপক হয়রানী করা হয়।
এ সরকারের সময় শহিদুল্লাহ হল শাখার শিবিরের ক্যাডার বানিয়ে সংবাদ ছাপিয়ে ও এসডি করা হয়। অথচ নিম্ন স্বাক্ষরকারী হাজী মুহম্মদ মহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং তিনি একজন নিরীহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সৎজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ঐ মেয়াদে প্রফেসর ড. আবুল বারকাত হাউজ টিউটর ছিলেন। এ সকল বিষয় তদন্তপূর্বক সরকারের নিকট মিথ্যা প্রমাণ হওয়ায় দ্রুততম সময়ে ওএসডি প্রত্যাহার করা হয়েছিল। প্রফেসর ড. আবুল বারকাত এর প্রত্যায়ন সংযুক্ত।
(রা) এলটিইউ-ভ্যাট দপ্তর দুর্নীতি ও হয়রানীমুক্ত ঘোষণা ও তা বাস্তবায়ন হওয়ায় অনেকের হিংসা হচ্ছে। কারণ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন কোন দপ্তরই এ সাহস দেখাতে পারেনি।
৬। উপর্যুক্ত তথ্যাদির আলোকে মহোদয়ের নিকট বিনীত আবেদন নিম্ন স্বাক্ষরকারী দুষ্টচক্রের মাধ্যমে যাতে হয়রানীর শিকার না হন এ বিষয়ে আপনার সহানুভূতি প্রার্থনা করছি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen − seventeen =