‘সকল ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষার জন্য খসড়া আইন, ২০১৮” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা

0
1147

২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি’র দায়ের করা এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের লক্ষ্যে এক যুগান্তকারী রায় প্রদান করেন। ইতিমধ্যে প্রায় এক দশক অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে নারী ও শিশুর প্রতি সর্বক্ষেত্রে যৌন হয়রানির ব্যাপকতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং সর্বক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

 

এমন প্রেক্ষাপটে আজ ৯ জুন (শনিবার) ২০১৮, সকাল ১০:৩০টায়, ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান সম্মেলন কক্ষে ‘সকল ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষার জন্য খসড়া আইন, ২০১৮’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর যৌথ উদ্যোগে এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর গার্লস অ্যাডভোকেসি অ্যালায়েন্স-এর সহায়তায় সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ছয়জন জেলা জজ, একজন পাবলিক প্রসিকিউটর, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কয়েকজন আইনজীবী এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভাটি মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘সুজন’ সম্পাদক ও জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর সভাপতি ড. বদিউল আলম মজুমদার।

সভার শুরুতে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০১৮’ শীর্ষক একটা খসড়া আইন উত্থাপন করেন ‘বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি’র পরিচালক তৌহিদা খন্দকার। এরপর উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে খসড়া আইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিজ নিজ মতামত তুলে ধরেন আমন্ত্রিত অতিথি ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ।

সূচনা বক্তব্যে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘একটি সমাজ কতটা সভ্য তা নির্ভর করে সে দেশের অপেক্ষাকৃত দুর্বল জনগোষ্ঠী কতটা ভালো আছে তার ওপর। আমরা দেখি, আমাদের সমাজে নারীরা এখনো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং তারা বিভিন্ন অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার। তাদের ওপর সবচেয়ে বড় নির্যাতন হলো যৌন নির্যাতন। আমরা মনে করি, তাদের প্রতি নির্যাতন রোধে প্রথমত একটি সমন্বিত আইন হওয়া দরকার।’

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, ‘যৌন হয়রানি এখন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরে, পথে, ঘাটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্র সর্বত্রই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অসচেতনতা এবং আদালতের নির্দেশনা না জানা অথবা জানলেও তা না মানার কারণে কমছে না যৌন হয়রানির ঘটনা। বর্তমানে যৌন হয়রানি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এটি এখন শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। সমস্যাটিতে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন মাত্রা। এক হিসেবে দেখা যায়, বর্তমানে সারা বিশে^ প্রতি দশ জন নারীর মধ্যে নয়জন নারীই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে যৌন হয়রানি শিকার হন। হাইকোর্টের নির্দেশনা প্রণয়নের দীর্ঘ নয় বছর পরেও কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাই বিশে^র অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সকল ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি পৃথক ও পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন অপরিহার্য।’
সভার শেষ পর্যায়ে একটি সমন্বিত যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইনের খসড়া তৈরির জন্য চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 + 20 =