এমনি রোজার প্রতিদান হয়ে যাবেন আল্লাহ নিজেই

0
559

মাহে রমজান হচ্ছে ইবাদত, তেলাওয়াত, জিকির, পবিত্রতা ও নৈকট্য লাভের মৌসুম। আত্মিক উৎকর্ষ ও পরকালীন কল্যাণ লাভের এক ঐশী উৎসব। পূর্ব-পশ্চিম তথা দুনিয়ার সব অঞ্চলের সব শ্রেণীর সব মুসলমান সমভাবে এ উৎসবে শরিক হয়। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, পণ্ডিত -মূর্খ, শাসক-প্রজা ও ধনী-গরিব সবাই ইহ ও পরকালীন কল্যাণ অর্জনের এ প্রতিযোগিতায় সমান উৎসাহী হয়।

ধনীর প্রাসাদ বা গরিবের কুটির সবখানেই অফুরন্ত কল্যাণ ও বরকতের অবাধ গতিপ্রবাহ সৃষ্টি হয় এ সময়। মনে হয় যেন গোটা মুসলিম উম্মাহ শান্তি ও কল্যাণের স্নিগ্ধ জ্যোর্তিময়তার এক বিস্তৃত শামিয়ানার নিচে ঠাঁই নিয়েছে। ঈমানি দুর্বলতার কারণে সিয়ামের ব্যাপারে যারা অলস, তারাও মুসলিম উম্মাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার ভয়ে রোজা রাখতে বাধ্য হয় কিংবা রোজা না রাখলেও প্রকাশ্য পানাহার চালিয়ে যেতে ইতস্তত ও লজ্জিত বোধ করে। ফলে অনুকূল ও স্নিগ্ধ পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে হৃদয়ের শক্ত জমিন হয়ে ওঠে কোমল ও উর্বর। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে প্রতিপালকের ইবাদত ও আনুগত্য প্রকাশ এবং মানুষের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ ও সমবেদনায় কোমল হয়ে ওঠে। বছরের এগারোটি মাস মানুষ তার বৈষয়িক ব্যস্ততায় মনোনিবেশ করে, এ ব্যস্ততাই হয় তার সব মনোযোগের কেন্দ্র। ফলে মানুষের অন্তরে আধ্যাত্মিক ক্রিয়া-কর্মে উদাসীনতার আবরণ পড়তে থাকে। রমজান মাসের ইবাদতে তা সরে যায়। এক মাসের সিয়াম সাধনার মূল কথা হল, পবিত্র এ মাসে মানুষ দৈহিক খাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে আধ্যাত্মিক খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে এবং তার নফসের গতি মন্থর করে আধ্যাত্মিক পথচলার গতি বেগবান করবে। এভাবে দেহ ও আত্মা উভয়ের ভারসাম্য ঠিক হয়ে সে খাঁটি মুমিন বান্দা হয়ে উঠবে। সিয়াম হচ্ছে তাকওয়া ও হৃদয়ের পবিত্রতা, শালীনতা, উন্নত নৈতিকতা, আত্মার সজীবতা ও চিন্তার বিশুদ্ধতা অর্জনের এক বলিষ্ঠ মাধ্যম। ভেতর থেকে বদলে যাওয়ার সাধনা। তাই তো রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘সিয়ামরত অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন অশালীন ও অর্থহীন কথাবার্তায় লিপ্ত না হয়। কেউ যদি তাকে অশালীন কথা বলে কিংবা তার সঙ্গে অকারণে বাদানুবাদে লিপ্ত হতে চায় তবে সে যেন এ কথা বলে দেয়, আমি রোজাদার।’ (বুখারি শরিফ) অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) আরও বলেন- ‘যে রোজা রেখেছে, অথচ মিথ্যাচার পরিহার করেনি, তার কৃত্রিম পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই।’ বস্তুত যে সিয়াম তাকওয়া ও হৃদয়ের পবিত্রতাশূন্য এবং চারিত্রিক মাহাত্ম্য ও চিন্তার বিশুদ্ধতা থেকে বঞ্চিত, সে সিয়াম হচ্ছে প্রাণহীন দেহ- যা শুধু দুর্গন্ধই ছড়ায়। তাই এ ইবাদতের মৌসুমে আমাদের দেহ-মনকে সিয়ামের মাধ্যমে পরিপাটি করে তুলতে হবে। ইবাদত ও পরোপকারের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে আত্মার বলিষ্ঠতা। সাহরি, ইফতারি, তারাবিসহ যাবতীয় আমল করতে হবে পূর্ণমাত্রায়। তবেই স্বার্থক হবে আমাদের রমজান। এমনি রোজার প্রতিদান হয়ে যাবেন আল্লাহ নিজেই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen + fifteen =