অবৈধ পথে গ্যাস সুতা আমদানী করার অভিযোগও রয়েছে সিরাজগঞ্জের ক্রয় করা নি¤œমানের শাড়ী নিজের কোম্পানীর নামে বিক্রি করছে রঘুনাথ বসাক

0
890

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ঃ টাঙ্গাইল দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলের যজ্ঞেশ^র এন্ড কোং এর প্রোপাইটর রঘুনাথ বসাকের বিরুদ্ধে অবৈধ পথে পাশর্^বর্তী ভারত থেকে ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে গ্যাস সুতা আমদানী করাসহ সিরাজগঞ্জ হতে ক্রয় করা নি¤œমানের শাড়ী নিজের কোম্পানীর নামে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একারণে এবছর ঈদকে সামনে নিয়ে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তার কোম্পানী থেকে শাড়ী ক্রয় করছেনা। বিভিন্ন কারণে এ বছর তার ব্যবসা মন্দা থেকে ধ্বস নেমে এসেছে বলে তথ্যকারী জানায়। বলা হয় ‘নদী চর খাল বিল গজারির বন, টাঙ্গাইলের শাড়ী তার গর্ভের ধন’ এই প্রতিপাদ্য বিষয় থেকে বোঝা যায় টাঙ্গাইলের শাড়ীর আলাদা একটা মান, আলাদা একটা গুণ ও এর অনেক সুনাম রয়েছে।

টাঙ্গাইলের শাড়ীর নাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রয়েছে। সেই টাঙ্গাইলের শাড়ী তৈরি হয় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার এনায়েতপুর, কৃষ্ণপুর নতুন পাড়া, কাঠুয়া জোগনি, বরুহা, কালিহাতী উপজেলার বল্লা, রামপুর, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে শাড়ী তৈরী করা হয়। কিন্তু টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল এলাকার রঘুনাথ বসাক সিরাজগঞ্জ থেকে নি¤œমানের শাড়ী ক্রয় করে বিভিন্ন প্রসেসিং এর মাধ্যমে তার নিজস্ব কোম্পানীর নাম ব্যবহার করে জেলার বিভিন্ন শাড়ীর শোরুমসহ পাশর্^বর্তী জেলা গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করার অভিযোগ ওঠেছে। গ্রাহক প্রতারণাসহ অধিক অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সুকৌশলে রাজনৈতিক পরিচয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এরকম ঠকবাজি ব্যবসা করলে তদন্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন ব্যবসায়ী মহল ও খুচরা গ্রাহকগণ। শুধু শাড়ী নয়, সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স ছাড়া অবৈধ পথে ইন্ডিয়া থেকে গ্যাস সুতা আমদানীর অভিযোগও রয়েছে। যে অভিযোগের তদন্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট সুশীল সমাজের।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল এলাকায় যজ্ঞেশ্বর এন্ড কোং নামে একটি শাড়ী তৈরী প্রতিষ্ঠান ও বিক্রির জন্য শো’রুম রয়েছে। সেই যজ্ঞেশ্বর এন্ড কোং এর প্রোপাইটর রঘুনাথ বসাক ও খোকন বসাক। আগে নিজস্ব কারিগর দিয়ে সকল শাড়ী তৈরী করলেও কয়েক বছর যাবত বেশিরভাগ শাড়ী সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার আব্দুল মোনায়েম, ফরিদ সরকার, হাজী গিয়াস উদ্দিন ও এনায়েতপুর উপজেলার হাজী মোসলেম আকন্দ, মোহাম্মদ আলী এবং হাজী আয়নাল সরকারের নিকট হতে আমদানী করে থাকে। সেই আমদানীকৃত শাড়ী বিভিন্ন প্রসেসিং এর মাধ্যমে নিজের কোম্পানী নাম ও সিল ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ ইন্ডিয়াতে শাড়ী রপ্তানী করে থাকে। সিরাজগঞ্জ থেকে শাড়ী ট্রাকের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের বৃহত্তর শাড়ীর হাট করটিয়া বাজারে আনা হয়। সেখান থেকে সিএনজি ও পিকআপ ভ্যানের মাধ্যমে দেলদুয়ারের পাথরাইলে নেওয়া হয়। এইভাবে সেই প্রসেসিং এর মাধ্যমে ব্যবসা করার কারণে শাড়ীর গুণগত মান কমে যাওয়ায় দুই বছর যাবত ঢাকা ও গাজীপুরের ব্যবসায়ীরা শাড়ী ফেরত দিয়েছে। যার কারনে ওই ব্যবাসায়ীদের নিকট হতে বাকি টাকা তুলতে পারছে না রঘুনাথ বসাক। ফলে দুই বছরে তার অর্ধকোটি টাকা ক্ষতিও হয়েেেছ। রঘুনাথ বসাকের পাথরাইল শোরুমে শাড়ী, লুঙ্গী, থ্রী পিচ, টুপিচ ও পাঞ্জাবী বিক্রি করা হয়। দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, রঘুনাথ বসাক আগে নিজের কারিগর দিয়ে শাড়ী তৈরি করে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। সেই সুনামের অন্তরালে বিভিন্ন স্থান হতে শাড়ী আমদানী বিভিন্ন প্রসেসিং করে নিজের কোম্পানীর নাম ব্যবহার করে শাড়ী বিক্রি করছে। সে অবৈধ পথে সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স ফাকি দিয়ে গ্যাস সুতা আমদানী করে থাকে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার আব্দুল মোনায়েম ও ফরিদ সরকার বলেন, কয়েক বছর যাবত টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার রঘুনাথ বসাক আমাদের নিকট হতে শাড়ী নিয়ে নিজের কোম্পানীর নাম ব্যবহার করে ঢাকাসহ ইন্ডিয়াতে রপ্তানী করে থাকে। শাড়ী গুলো তৈরী হয় সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে সেই শাড়ী যজ্ঞেশ্বর এন্ড কোং এর নাম ও সিল ব্যবহার করে বিক্রি করে থাকে রঘুনাথ বসাক। আগে ভাল মানের শাড়ী নিজের কারিগরের মাধ্যমে তৈরি করে ব্যবসা করে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। সেই সুনাম এর নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদের নিকট হতে শাড়ী কিনে তার কোম্পানীর নামে বিক্রি করছে।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর উপজেলার মোসলেম আকন্দ ও মোহাম্মদ আলী বলেন, বিভিন্ন জায়গায় হতে শাড়ী আমদানী করে রঘুনাথ বসাক নিজের নামে বিক্রি করার কারণে কয়েক বছরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার কথাও স্বীকার করেছিলেন রঘুনাথ বসাক। সে ভ্যাট ট্যাক্স ছাড়া অবৈধ পথে ইন্ডিয়া হতে গ্যাস সুতা আমদানী করে থাকে।
এ বিষয়ে রঘুনাথ বসাকের সাথে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × one =