মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে নন-এমপিও শিক্ষকরা

0
547

২৭ জুন বুধবার ১৮তম দিনে ৩য় দিনের মত প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকার সামনে সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভুষণ রায় এর নেতৃত্বে আমরণ অনশন করছেন। আমরণ অনশনে অংশগ্রহনকারী শিক্ষকদের মধ্যে সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভুষণ রায় সহ সংবাদ প্রেরনের সময় পর্যন্ত সর্বমোট ৭০ জন শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ্য হয়েছেন। সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার, সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভুষণ রায় সহ গুরুতর অসুস্থ্য ৫২ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। গুরুতর অসুস্থ ৫ জনকে ঢাকা মেডিখেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তী করা হয়েছে। ১) দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার দিওড় নি¤œমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন ৭নং ওয়ার্ডের ফ্লোরে, ২) গাইবান্ধা জেলার পাটুয়াবাগ উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ ৬০২ নং ওয়ার্ডে ঊী ১১নং বেডে, ৩) ঝিনাইদহ জেলার খরতালিয়ান দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মোছাঃ ফাতেমা খাতুন ৮০২ নং ওয়ার্ডের ফ্লোরে, ৪) বগুড়া জেলার খানপুর খয়ের খালি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক রেবেকা পারভিন ৮০২নং ওয়ার্ডের ফ্লোরে, ৫) কুড়িগ্রাম জেলার বাগুয়ার চড় দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মোঃ ছাবেদ আলী ৬০২ নং ওয়ার্ডে ফ্লোরে চিকিৎসাধিন অবস্থায় আছেন। নন-এমপিও শিক্ষকদের মধ্য থেকে ২ জন পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ করছেন। আমরণ অনশনরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ২০-২৫ বছর পূর্বে সরকারী বিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ হয়ে অদ্যাবধি শিক্ষকতা করে আসছেন।

কিন্তু শিক্ষকরা সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় একটি টাকাও বেতন পান না। সারা দেশের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষকের জীবন চিত্র অত্যন্ত করুন ও অবজ্ঞার। তারা পরিবারের বাবা-মা, স্ত্রী-পুত্র, সন্তান-সন্ততির ভরন-পোষন চিকিৎসা দিতে না পেরে নিজেরাই তাদের বোঝা হয়ে গেছেন। অপর দিকে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদাও নাই। আত্ত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এর বাড়িতে গেলে তারা ভেবে থাকেন টাকা ধার নেওয়ার জন্য এসছেন। লোকলজ্জার কারনে এলাকায় লেবারিও পায়না। তাই অনেক শিক্ষক পেটের তাগিদে রাত্রীবেলা ভ্যান, রিক্সা, টেক্সিচালনা, যানবাহনে লেবারী পর্যন্ত করেন। তবুও অফুরন্ত আশায় আশায় যজ্ঞের মত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ধরে আছেন। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী প্রতিবছর বলতেন, অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এমপিওভুক্তি করা হবে আপনারা ধৈর্য্য ধারন করুন, আমি শিক্ষক পরিবারের একজন, আপনাদের জন্য আমার বুক ফেটে যায়। অপর দিকে মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলতেন এসব বোগাস, খামোখা এমপিও ধ্বংশ করে দেব। কি আজব ! একটি স্বাধীন দেশে, গণতান্ত্রীক রাষ্ট্রে জাতিগড়ার কারিগররা সরকারের অবিবেচক আচরনের কারনে তিলে তিলে ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে। অথচ রাষ্ট্র নিরব, মনে হচ্ছে এ শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের কোন দায়-দায়িত্ব নেই, পাশাপাশি সমাজেরও কোন দায়িত্ব নেই, সকলেই কেমন যানি চুপচাপ তাকিয়ে দেখছে । ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষা নিয়ে এরা বার বার দিনের পর দিন রাজপথের ফুটপাতে অর্ধাহারে অনাহারে থেকে অনশন করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে, এদের কি সামাজিক ভাবে বেঁচে থাকার নুন্যতম অধিকারটুকু রাষ্ট্র দেবে না ?

৫ জানুয়ারী ২০১৮ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিলে, শিক্ষকরা আনন্দে আত্বহারা হয়েছিল, মনে করেছিল শেষ পর্যন্ত তাঁরা রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, পারিবারিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে যাচ্ছেন। কিন্তু ৭ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৮-২০১৯ বাজেট মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় আবারও শিক্ষকদের গভির অন্ধকারে তলিয়ে যেতে হচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী প্রহসনের এমপিও নীতিমালা করে শিক্ষকদের রাজপথে ঠেলে দিলেন। আপনারা দেখছেন পুলিশ প্রসাশনও কিরুপ দুর্ব্যবহার করে চলেছেন শিক্ষকদের সাথে। শিক্ষকদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান গ্রহন করলে, শিক্ষক নেতাদের গ্রেপ্তার সহ নানা রকম হয়রানি করা হয়, এমনকি মূষলধারে বৃষ্টির মাঝে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বৃষ্টি ঠেকানো ব্যবহৃত পলিথিনটুকুও কেড়ে নিয়ে যায়। আমরণ অনশন কর্মসূচিতেও মাইক ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। ।

আজকের আমরণ অনশন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষিরা-১ নির্বাচনী এলাকার মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য এ্যাডঃ মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এম.পি, ওয়ার্কাস পার্টির পলিট ব্যুারো সদস্য নুর মোহাম্মদ মুকুল, বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার জোতির্ময় বডুয়া, প্রবিন শিক্ষক নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য রনজিৎ কুমার সাহা, বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিসদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি নাসির উদ্দিন প্রিন্স, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি আলি আজগার হওলাদার, বাংলাদেশ বেসরকারী শিক্ষক ফোরামের সদস্য কাজি নুর হাইয়ুর হোসেন প্রমুখ।

সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এমপিওভুক্তির আমরণ অনশন কর্মসূচি থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা বিশ্বনেত্রী, সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি সকল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × two =