মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূইয়া মাদক ব্যবসার সুবাদে কোটিপতি

0
4414

স্টাফ রিপোর্টারঃ
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্রাপুর সার্কেল, ঢাকা’র পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূইয়া নিজেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত মর্মে ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে। হেলাল উদ্দিন ভূইয়া ১৯৯২ খৃষ্টাব্দে ঢাকার মালিবাগস্থ ডাইরেক্টর ফিনান্স এর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে যোগদান করে। এরপর ১৯৯৫ খৃষ্টাব্দে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ষ্টেনোগ্রাফার হিসেবে যোগদান করেন। তারপর ২০০১ খৃষ্টাব্দে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া পর থেকেই হেলাল উদ্দিন ভূইয়া মাদক ব্যবসার সাথে দৃঢ়ভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন, যা আজ অবধি চলছে।
বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, পরিদর্শক হেলাল অবৈধ মাদক ব্যবসা করে ৫০ কোটি টাকার বেশী অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। যদিও তার বর্তমান মূল বেতন ২৯ হাজার ৫১০ টাকা।

পরিদর্শক হেলালের অবৈধ সম্পদের কিছু তথ্য হলো- (১) লেক ভিউ রেষ্টুরেন্ট এন্ড বার, ৩৯ গরীবে নেওয়াজ রোড, সেক্টর-১৩,উত্তরা,ঢাকা। রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকার এই বারটিও হেলাল সাহেবের। কোনো বারে মদ্যপানের জন্য যেকোন ব্যক্তিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। কিন্তু পরিদর্শক হেলালের এই বারে যে কেউ যখন তখন গিয়ে মদ্যপান করতে পারেন। ফলে আইন-শৃংখলার অবনতি ও সামাজিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ২) নেষ্ট রেষ্টুরেন্ট এন্ড বার, বাড়ী-১২, রোড -১৪/এ,সেক্টর-৪,উত্তরা, ঢাকা। বারটি এই মুহুর্তে মাদক অধিদপ্তরের নির্দেশে সাময়িক বন্ধ আছে। এই বারটি হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার মিথ্যা রিপোর্ট এর উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং মিথ্যা বানোয়াট রিপোর্ট দেওয়ার জন্য হেলালের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছিলো। (৩) রাজধানীর ভাটারা থানাধীন পূর্ব সাঈদনগরের ২৬৮২ দাগে অবস্থিত ৫ কাঠার প্লট। (৪) ব্যক্তিগত গাড়ী। টয়োটা প্রিমিও-এফ, নাম্বার ঢাকা মেট্রো -গ-২৭-৭২৫০. (৫) পার্ক ভিউ রেষ্টুরেন্ট, ফার্মগেট (তেজগাঁও কলেজের পশ্চিম পার্শে) ইন্দিরা রোড, ঢাকা। এই রেষ্টুরেন্টটি হেলাল সাহেবের রেষ্টুরেন্ট নামে পরিচিত। (৬) তিতাস ফিশিং প্রজেক্ট, লুটেরচর, মেঘনা উপজেলা, কুমিল্লা। বিশাল এই মাছের প্রজেক্টটি ঐ এলাকার প্রায় সকল জনগণ হেলাল সাহেবের মাছের প্রজেক্ট হিসেবে চিনেন। (৭) ১৫ বিঘা জমি, লুটেরচর, মেঘনা, কুমিল্লা। হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার শ্বশুর বাড়ীর সাথে একই সাথে সংযুক্ত ১৫ বিঘা জমি হেলাল সাহেব কিছুদিন আগে কিনেছেন। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। (৮) ইট ভাটা, লুটেরচর, মেঘনা, কুমিল্লা। এই বিশাল ইট ভাটার মালিকও হেলাল উদ্দিন। (৯) কাদামাটি প্রপার্টিজ লিমিটেড, ৩৩ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। এটি হেলালের প্লট ও ফ্লাটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যা উল্লেখিত ঠিকানার ১২ তলায় অবস্থিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা অপরাধ বিচিত্রাকে জানান, পরিদর্শক হেলাল দীর্ঘদিন যাবত মাদক ব্যবসা করে আসছেন। তার এই সমস্ত অনিয়ম দুর্নীতির জন্য বহুবার বিভাগীয় মামলা রুজু হয়, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ঐ মামলাগুলো আলোর মুখ দেখেনা। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে নিরীহ লোকজনদের মামলার আসামী করে আদালতে উপস্থাপনের জন্য বিজ্ঞ বিচারকগণও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা গ্রহণ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ বাস্তবায়িত হয়নি। যার একটি আদেশ হলো, ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ-৫ এর স্মারক নং-৫/ঢাকা/১৭/৪২(২) তারিখ ১০/১/২০১৭ খৃষ্টাব্দ। এছাড়া পরিদর্শক হেলাল প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গ্রেফতারের পর মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেন এবং নিরীহ লোকদের ধরে এনে মাদক মামলায় গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন। তিনি আসামীর কাছ থেকে প্রাপ্ত মাদক ইয়াবা/হেরোইন/মদ ইত্যাদি প্রকৃত পরিমাণ থেকে অনেক কম জব্দ দেখিয়ে পরে তা বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে থাকেন বলে তারা জানান।
কে এই হেলাল উদ্দিন ভূইয়া?
অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি গ্রামের সন্তান হেলাল উদ্দিন ভূইয়া। তার পিতামৃত-আলী আহাম্মদ ভূইয়া, মাতামৃত- শামসুন্নাহার। দরিদ্র পরিবারের এই সন্তান অকালে তার পিতার মৃত্যু হওয়ায় তৎকালীন নবীনগর স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত বড় বোন ইফাত আরা হাসির ভাড়া বাসা নবীনগর পশ্চিমপাড়া থেকে নবীনগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এস.এস.সি পাস করেন। তারপর ঢাকায় গিয়ে ডাইরেক্টর ফিনান্স এর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৫ সালে ষ্টেনোগ্রাফার হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যোগদান করেন। পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূইয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থেকে নিজেই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়ায় অপরাধ বিশ্লেষকগণ মনে করেন, একজন মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা নিজেই যখন এহেন অপরাধ প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়েন সেক্ষেত্রে কোনোদিনও এদেশ থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবেনা। বরং মাদকের ব্যাপকতা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। তাই অনতিবিলম্বে মাদক নির্মূলের তকমা লাগানো এসব কর্মকর্তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা জরুরী। পরিদর্শক হেলালের মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্যের জন্য জনাব মুকুল জ্যোতি চাকমা, উপ পরিচালক মেট্রো, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এই মূহুর্তে মিটিং নিয়ে খুবই ব্যস্ত আছেন তাই এখন কথা বলা সম্ভব নয়। অপরাধ বিচিত্রার পক্ষ থেকে পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়।
বিশেষ ঘোষনাঃ- প্রিয় পাঠক, হেলাল উদ্দিন ভূইয়ার দুর্নীতি সম্পর্কে আপনাদের নিকট যদি কোন তথ্য প্রমান থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাতে পারেন। প্রয়োজনে নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে। অপরাধ বিচিত্রা, ৫৩ মডার্ন ম্যানশন (১৫ তলা), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। মোবাইলঃ-০১৯১১-৩৮৫৯৭০।…..চলবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen + nineteen =