আরিফ ও কামরানের অবৈধ সম্পদের পাহাড়

0
996

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান   দু’জনই ব্যবসায়ী। আরিফ হচ্ছেন ডেইরি ফার্ম আর কামরান বালু ব্যবসায়ী। নির্বাচন কমিশনে দেয়া সম্পদের হিসাব ও হলফনামায় আরিফ ও কামরান দুজনই এ তথ্য দিয়েছেন । এদিকে- আরিফের স্ত্রী শ্যামা হক চৌধুরী ও কামরানের স্ত্রী আসমা কামরানেরও সম্পদ রয়েছে।

গত ৫ বছরে তাদের দুই জনের সম্পদ বেড়েছে। কামরানের সম্পদ রয়েছে প্রায় ২ কোটি ২৪ লাখ টাকার ও আরিফের রয়েছে ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকার। আরিফ ডেইরি ফার্ম ব্যবসার পাশাপাশি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক। কামরান বালু ব্যবসার পাশাপাশি পাথর ব্যবসাও করেন। হলফনামা অনুযায়ী, সিসিকের সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩২ টাকা। তার কাছে নগদ ১৯ লাখ ১৮ হাজার ৯৬৭ টাকা,  বৈদেশিক মুদ্রা আছে ১১ লাখ ২৫ হাজার ৭৭ টাকা মূল্যের। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে ৭৯ লাখ ৩৬ হাজার ৯১৩ টাকা গচ্ছিত আছে। আরিফের ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৮৭৫ টাকা মূল্যের বন্ড ও ঋণপত্র, ৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি, ৩০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ ও ধাতু, দেড় লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, এক লাখ টাকার আসবাবপত্র, ৮.৫৩ একর কৃষি জমি, ৫.৫৯ একর অকৃষি জমি রয়েছে আরিফের নামে। তার নামে একটি ডেইরি ফার্ম, ২টি দালান ও ৩টি সেমিপাকা দালান রয়েছে। ‘সিএনজি অ্যান্ড ফিলিং স্টেশন ও ডেইরি ফার্ম ব্যবসায়ী’ হিসেবে আরিফ বছরে ৭ লাখ ৫৮ হাজার ১২০ টাকা আয় করেন। তার নামে পূবালী ব্যাংকে ৭৭ লাখ ৮২ হাজার ২৫০ টাকা এবং সিটি ব্যাংকে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩ টাকা ঋণ রয়েছে। আরিফের স্ত্রী শ্যামা হকের নগদ ১৩ লাখ ১৫ হাজার ২২২ টাকা, পোস্টাল সেভিংসে ২ লাখ টাকা, ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের পিকআপ, ১ লাখ ১২ হাজার টাকা মূল্যের অলঙ্কার, ৪৫ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী, এক লাখ ৫৩ হাজার ৪৫০ টাকার আসবাব, ০.০৮ একর অকৃষি জমি, একটি সেমিপাকা দালান রয়েছে। শ্যামা হকের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৩০০ টাকা বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। আরিফের অস্থাবর সম্পত্তি পরিমাণ এক কোটি ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৩২ টাকা। সিসিকের গত নির্বাচনে তার দাখিলকৃত হলফনামায় এই সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৮৮ লাখ ১০ হাজার ৩৬০ টাকা। গত পাঁচ বছরে তার সম্পত্তি কমেছে ৯৩ লাখ ১১ হাজার ১৬৮ টাকা। ২০১৩ সালে তার স্ত্রী শ্যামা হকের সম্পত্তি ছিল ২৬ লাখ ৯১ হাজার ৫০৪ টাকা। এবার তার সম্পদ ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৬৮ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৭২ টাকা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান পেশায় ‘বালু পাথর সরবরাহকারী ও কমিশন এজেন্ট’। হলফনামায় দেয়া তথ্য মতে- গত পাঁচ বছরে কামরানের সম্পদ বেড়েছে। তার স্ত্রী আসমা কামরানের সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। কামরানের চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পদ বেশি। কামরানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য ২ কোটি ২৪ লাখ ৭৩১ টাকা। পেশা থেকে কামরানের আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের সুদ থেকে বছরে তার আয় ২৩ লাখ ৯১ হাজার ৪০৩ টাকা। বৈদেশিক মদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কামরানের নামে এক কোটি ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ৯২৯ টাকা আছে। তার কাছে নগদ ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৫৫২ টাকা এবং স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু রয়েছে দেড় লাখ টাকা মূল্যের। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে কামরান ৪৬ লাখ ২০ হাজার ৮৫০ টাকা মূল্যের অকৃষি জমির কথা উল্লেখ করেছেন। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ১০ লাখ টাকা মূল্যের একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে কামরানের। সোনালী ব্যাংকে কামরানের ৬৮ লাখ ৮০ হাজার ২৮২ টাকা ঋণ রয়েছে। এদিকে, কামরানের স্ত্রী আসমা কামরানের নামে বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ৫ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ টাকা আছে। আসমা কামরানের নামে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের বন্ড ও ঋণপত্র, ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূলের একটি জিপ গাড়ি, ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার অলঙ্কার, নগদ ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকা, ৩১ লাখ ৪ হাজার ৮০১ টাকার অকৃষি জমি এবং ৩ কোটি ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৯ টাকা মূল্যের একটি ভবন রয়েছে। কামরান ও তার স্ত্রীর নামে  ২ লাখ ৮১ হাজার ৪০০ টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক সামগ্রী এবং ৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য ২ কোটি ২৪ লাখ ৭৩১ টাকা। সিসিকের তৃতীয় নির্বাচনে ২০১৩ সালে মেয়র প্রার্থী হিসেবে কামরান যে হলফনামা দাখিল করেছিলেন, সেখানে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য ছিল এক কোটি ৮৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৯৫ টাকা। এ হিসেবে গত পাঁচ বছরে তার সম্পত্তি বেড়েছে ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ২৩৬ টাকা। কামরানের চেয়ে গত পাঁচ বছরে তার স্ত্রীর সম্পত্তি বেড়েছে অনেক বেশি। এবার তার স্ত্রী আসমা কামরানের সম্পত্তির মূল্য ৫ কোটি ৭৫ লাখ ১৪ হাজার ৯২১ টাকা। ২০১৩ সালে আসমা কামরানের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩ কোটি ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮৯ টাকা। এ হিসেবে তার সম্পত্তি বেড়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৩২ টাকা। কামরানের চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পত্তি ৩ কোটি ৫১ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ টাকা বেশি। ২০১৩ সালের হলফনামায় কামরানের কোনো ঋণের তথ্য ছিল না।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × 2 =