১১টি ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ম্যাক্স হাসপাতালের

0
779

১১টি ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ম্যাক্স হাসপাতালের সাংবাদিক কন্যা রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় ভুল চিকিৎসার অভিযোগের মুখে থাকা চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ১১টি ত্রুটি খুঁজে পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনের বেসরকারি হাসপাতালটিকে দেওয়া নোটিসে তিনটি বিভাগে বিধি মোতাবেক লাইসেন্স নবায়ন না করা, কতর্ব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়োগপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন ত্রুটি উল্লেখ করা হয়।

গত রবিবার হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফিরে ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন বুধবার ম্যাক্স হাসপাতালকে ত্রুটিবিষয়ক নোটিস দিয়ে বিস্তারিত তথ্য ১৫ দিনের মধ্যে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অন্যথায় হাসপাতালের কার্যক্রমসহ লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলেও নোটিসে উল্লেখ করা হয়। ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন নোটিস পাঠানোর কথা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। নোটিসের অনুলিপিতে দেখা যায়, তিনি হাসপাতাল, প্যাথলজি ও ব্লাড ব্যাংক- তিনটি বিভাগে ১১টি ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন। ম্যাক্সের অনুকূলে লাইসেন্স নবায়নের জন্য নতুন নবায়ন ফরমে আবেদন করা হয়নি, তাদের ১৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও তাদের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের কোন নিয়োগপত্র তারা পাননি। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ক্লিনার ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। একইসাথে ম্যাক্সের প্যাথলজি বিভাগের অনুকূলেও নতুন নবায়ন ফরমে আবেদন হয়নি যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিধিমোতাবেক নয়। প্যাথলজির রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক, প্যাথলজিস্ট ও মেডিক্যাল টেকনলিজস্টের কোন তথ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পাওয়া যায়নি বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালে কোনো ব্লাড ব্যাংক নেই বলেও উল্লেখ আছে। গলা ব্যথা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিকালে নগরীর মেহেদীবাগের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দৈনিক সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার রুবেল খানের শিশুকন্যা রাইফা শুক্রবার রাতে মারা যায়। অভিযোগ ওঠে কতর্ব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সাংবাদিকেদের বিক্ষোভের মুখে পুলিশ ওই হাসপাতালের ডিউটি চিকিৎসক ও নার্সকে থানায় নিয়ে গেলে সেখানে সাংবাদিক ও সিইউজে নেতাদের সঙ্গে ফয়সাল ইকবাল ‘অশোভন আচরণ করেন’ বলে অভিযোগ রয়েছে। ‘রাইফাকে হত্যা করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে চট্টগ্রামের সাংবাদিক সংগঠনগুলো আন্দোলন এবং দায়ীদের বিচার দাবি করে আসছে। দাবির মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। রবিবার রাতে কমিটির প্রধান জাহাঙ্গীর হোসেন ম্যাক্স হাসপাতাল পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এই হাসপাতালের লাইসেন্সের ত্রুটি আছে এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নোটিসের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ভুল চিকিৎসায় রাইফার মৃত্যুতে বেসরকারি ম্যাক্স হাসাপাতলকে দোষী উল্লেখ করে উদ্ভুত অবস্থায় হাসপাতাল বন্ধের দাবি জানান। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন সমগ্র চিকিৎসক সমাজের বিরুদ্ধে নয়, আমরা এ ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে দায়ী করতে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলছি। এ নিয়ে দুটি পেশাজীবী সংগঠনকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে একটি কুচক্রি মহল।’ চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল বলেন, বেসরকারি ম্যাক্স হাসাপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সাথে প্রতিষ্ঠানটির এমডি ডা. লিয়াকতের হাসপাতাল নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে দুদককে এগিয়ে আসতে হবে। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বলেন, শিশুকন্যা রাইফার ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিক সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চলবে এবং কেউ সাংবাদিক সমাজকে চিকিৎসক সমাজের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ চট্টগ্রামসহ সারাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় বেসরকারি হাসাপাতাল এবং সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনিয়ম এবং ত্রুটি সারাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen − 1 =