মোঃ আবদুল আলীমঃ
ঢাকার বারিধারার জে ব্লকে ফুটপাতের জায়গা দখল করে অবৈধ এক চায়ের দোকান গড়ে তুলেছে মাকসুদা বেগম। এই চা বিক্রির আড়ালে সে নেটওয়ার্ক রক্ষা করছে একটি মাদকচক্রের সাথে। ভাটারা থানা এলাকার মাদক কারবারি বাবুল, কামরুল, বাশার ও সবুজের সহযোগী হিসেবে ওই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত মাদকের কারবারে যুক্ত তারা। গত ৩০ মে ফুটপাতে গড়ে তোলা এই অবৈধ দোকানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে যায় ভাটারা থানার টহল পুলিশ। এ সময় মাকসুদা বেগম ও তার অপকর্মের হোতা বাবুল, কামরুল, বাশার, সবুজসহ স্থানীয় মাদকচক্রের সদস্যরা পুলিশকে তাদের আইনী পদক্ষেপকে বাধা দেয়। এই নিয়ে বিরোধের জের ধরে ভাটারা থানার এসআই হাসান মাসুদসহ ভাটারা থানার পুলিশ কনস্টেবল জাকির এবং অজ্ঞাতপরিচয় এক পুলিশ কনস্টেবল ও এক আনসার সদস্যকে আসামি করে নিজ বাদি হয়ে আদালতে মিথ্যা ও হয়ানিমূলক মামলা করে চা দোকানি মাকসুদা বেগম।
এক অনুসন্ধানে জানা গেছে ২০১৭ সালে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল মাকসুদা বেগম। উক্ত থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা নং ১৯/৯২ তারিখ ২০ এপ্রিল ধারা ১৯ (১) এর ৯ (খ) ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন। আইনের ফাঁক দিয়ে সে জামিন নিয়ে ঢাকায় এসে পুণরায় মাদকচক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফুটপাত দখল করে চায়ের দোকান গড়ে তোলে বলে জানান ভাটারা থানার এসআই হাসান মাসুদ। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মাকসুদা মূলত মাদকচক্রের সদস্য। তাকে দিয়ে ফুটপাতে অবৈধভাবে চায়ের দোকানের আড়ালে মাদক বাণিজ্য করছে বাবুল, কামরুল, বাশার, সবুজসহ স্থানীয় মাদকচক্রের সদস্যরা। সংঘবদ্ধ এই চক্রের সদস্যরা মিলে এলাকায় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে ও ধ্বংস করছে যুবসমাজ। এমন খবর পেয়ে চলতি মাসের শুরুর দিকে তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দোকান বন্ধ করতে বলা হয়। কিন্তু সে প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় দাপটের সঙ্গে দোকান খোলা রাখে।
ভাটারা থানার এসআই হাসান মাসুদ আরো জানান, গত ৩০ মে বারিধারা জে ব্লকের ২০ নম্বর সড়কে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে টহল ডিউটিতে যান তিনি। জে ব্লক ছাড়াও সেদিন আশপাশের এলাকায় নিয়মিত ডিউটি ছিল এই পুলিশ কর্মকর্তার। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে জে ব্লকে প্রবেশ করলেই যানজট দেখতে পান তিনি। সামনে এগিয়ে দেখতে পান ফুটপাতের চায়ের দোকান রাস্তার ওপর চলে এসেছে। রাস্তার ওপর বেঞ্চ পেতে কিছু উশৃঙ্খল যুবক সেখানে বসে আছে। চায়ের দোকানি মাকসুদাকে রাস্তা থেকে বেঞ্চ সরিয়ে দোকান বন্ধ করতে বলা হয়। আর তখনই মাকসুদা ও তার দোকানে বসে থাকা বাবুলসহ আর কয়েকজন যুবক পুলিশকে তার আইনী কর্মকান্ডে বাধা দেয়। এরপর সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সেখান থেকে অন্য এলাকায় টহল দিতে চলে যান তিনি। পরে জানতে পারেন সঙ্গীয় ফোর্সের সদস্যসহ তাঁকে আসামি করে চা দোকানি মাকসুদা আদালতে মামলা করেছে।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত এই অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। চা দোকানি মাকসুদার অভিযোগ তদন্তে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনারকে (ডিবি উত্তর) আদালত নির্দেশ দেন। পুলিশ পরিদর্শক পদের নিচে নন, এমন কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করাতে বলেছেন মহানগর হাকিম জাকির হোসেন টিপু।
চা দোকানি মাকসুদা অপরাধ বিচিত্রার কাছে দাবি করে, গত ৩০ মে দুপুরে ভাটারা থানার দারোগা হাসান মাসুদসহ চারজন পুলিশ গাড়িতে করে এসে তার কাছে মে মাসের চাঁদা বাবদ ছয় হাজার টাকা দাবি করে। সেই সঙ্গে ঈদ বকশিশ বাবদ আরো চার হাজার টাকা চায় তারা। ওই টাকা দিতে রাজি না হলে তার দোকান ভাঙচুর করে পুলিশ। এ কারণে সে পুলিশকে আসামি করে আদালতে মামলা করেছে।
এ ছাড়া মামলায় মাকসুদা বলেছে, তার দোকান ভাঙচুর করার পাশাপাশি ক্যাশে থাকা তিন হাজার টাকাও নিয়ে গেছে আসামিরা। এ সময় বাবুলসহ স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসানোর হুমকি দেয় আসামিরা।
মাকসুদার অভিযোগ প্রসঙ্গে এসআই হাসান মাসুদ বলেন, ওই ঘটনার পর বাবুলই তাঁকে প্রথম ফোন করে জানায়, আদালতে তাঁকেসহ (এসআই মাসুদ) তাঁর সহকর্মীদের আসামি করে চা দোকানি মাকসুদা মামলা করেছে। বাবুল ফোনে ভয় দেখিয়ে বলে, এখন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে নিউজ করা হবে। পরে সরেজমিনে তদন্ত করে জানা যায়, বাবুল, মাকসুদা বেগম, কামরুল, বাশার ও সবুজ একটি মাদকচক্রের সদস্য। আর পুলিশ তাদের কাছে চাঁদা চেয়েছে বা তাদের ক্যাশে থাকা টাকা নেওয়ার ঘটনা সম্পূর্ণ সম্পুর্ন সাজানো ও মিথ্যা। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাকসুদার সহযোগী বাবুল বারিধারা ১ ব্লক থেকে প্রকাশিত স্থানীয় একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার ভুয়া সাংবাদিক। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিদিনই তারা মাকসুদার দোকানে আড্ডা দেয় ও চা বিক্রির আড়ালে চালায় মাদকের কারবার।
জানতে চাইলে মাকসুদা অপরাধ বিচিত্রাকে নাটকীয় সূরে জানায়, বাবুলসহ আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় সে ফুটপাতের জায়গা দখল করে দোকান বসিয়েছে। বাবুল না থাকলে পুলিশ ওই দিন তার দোকান ভেঙে দিত।
আশপাশের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাবুল পুণরুথ্যান নামক স্থানীয় একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার ফটো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে। সবুজও স্থানীয় একই আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার প্রকাশক দাবি করে। এলাকা সূত্রে আরও জানা গেছে ভাটারা থানার সোলমাইদ এলাকায় সোহরাওয়ার্দী নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকত সবুজ। বাড়িওয়ালাকে ভাড় না দিয়ে রিপোর্ট করার ভয় দেখিয়ে বাড়ি ছাড়ে সবুজ। বাড়িওয়ালা সোহরাওয়ার্দী এ প্রতিবেদককে জানান তিনি সবুজের নামে ভাটারা থানায় জেনারেল ডাইরি করেছেন। এলাকার লোকজন তার অত্যাচারে টিকতে না পেরে তাকে মারধর করেছে বলে জানান তিনি। সবুজ তাকে অর্থাৎ বাড়িওয়ালাকে বাড়ি ভাড়া বাবদ একটি চেক দেয় অথচ ব্যাংকে তার একাউন্টে টাকা না থাকায় চেকটি ডিসঅনার হয়েছে যা দন্ডবিধির ৪২০ ধারার অপরাধ। বাড়িওয়ালা আরও জানান সবুজ এক নম্বরের চিটারের বাক্স । এরপর ভাটারা থানার নুরের চালা সরকারী প্রাইমারি স্কুলের পাশে তৈয়ব নামক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া ছিল সবুজ। সেখানেও রিপোর্ট করার মিথ্যা ভয় দেখিয়ে ভাড়া না দিয়ে বাড়ি ছাড়ে সবুজ। এলাকা ঘুড়ে জানা গেছে বাবুল এক সময় পুলিশের সোর্স ছিল। সে থানা এলাকার অবৈধ স্থাপনা ও কর্মকান্ড থেকে মাসোহারা নেয় ও সবুজকে দেয়। এমনকি সবুজের বাসার বাজারও করে দেয় বাবুল। এই ব্যপারে সবুজ ও বাবুলের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যপারে অপরাধ বিচিত্রার তদন্ত অব্যহত আছে।