নির্বাচনী হাওয়া,লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) জোট ইস্যুতে জাতীয় পার্টি, টেনশনে আওয়ামীলীগ, পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন বিএনপির

0
990

এস এম আওলাদ হোসেনঃ লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর সংসদীয় আসনে অনেক আগ থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। জোট ইস্যুতে বর্তমানে এখানে সংসদ সদস্য রয়েছেন জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি ও এরশাদের উপদেষ্ঠা সদস্য মোহাম্মদ নোমান। বিগত নির্বাচনগুলোর ফলাফল অনুযায়ী এ আসনটিতে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র কাছাকাছি অবস্থান থাকলেও বর্তমানে জোট ইস্যু নিয়ে টেনশনে রয়েছে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয়পার্টিকে ছাড় দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। প্রচারণার মাঠে রয়েছে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী। আর বিএনপি থেকে দলের চেয়ার পার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুইবার নির্বাচিত হন এ আসনে। পরে আসন ছেড়ে দেওয়ায় ৯৬ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হন। এছাড়া বিএনপি প্রার্থী জয়ী হন একাধিকবার।

বর্তমানে আসনটি পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন বিএনপির। তবে দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী প্রচারণায় রয়েছে। অন্যান্য ছোট খাটো দলগুলোও নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, জেলা সদরের ৯টি ও রায়পুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন এবং রায়পুর পৌরসভা নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর-২ রায়পুর সংসদীয় আসন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এখন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে রায়পুর। নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গেল সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে টিকেট পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি মোহাম্মদ নোমান। এ সুযোগে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে নিরলস কাজ করছেন তিনি। তবে স্থানীয় আওয়ামীলীগ এবার জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ। দেশকে উন্নয়নের উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছে শেখহাসিনা এমন বিশ্বাস ও চারদিকে প্রিয় নেত্রী এবং নৌকার জয় জয়কারে উল্লাসিত এখন তারা। দলের নেতা কর্মীরা চায় আওয়ামীলীগের প্রার্থীই এবার মনোনয়ন পাক। বিশেষ করে নব্বইয়ের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী মোহাম্মদ উল্লাহ (সাবেক রাষ্ট্রপতি) নির্বাচিত হন। পরের দুইবার ৯৬ ও ২০০১ সালে বিজয়ী হন বিএনপি চেয়ার পার্সন খালেদা জিয়া। ৯৬ সালে তাঁর ছেড়ে দেয়া আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ। বিজয়ী হন আওয়ামীলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া আসনে বিজয়ী হন জেলা বিএনপি’র সভাপতি আবুল খায়ের ভুঁইয়া। ২০০৮ সালেও নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। ওই নির্বাচনে বিজয়ী হন জাতীয়পার্টির জেলা সভাপতি মোহাম্মদ নোমান। আগামী নির্বাচনেও তিনি মহাজোটের শক্তিশালী প্রার্থী। এদিকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির শেখ ফাইয়াজ শিপনও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা যায়। এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন যারা তারা হলেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আমরা ক’জন মুজিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ এফ জসীম উদ্দিন আহমদ, এন আরবি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সহিদ ইসলাম পাপুল, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর সহ-সভাপতি ডা. এহসানুল কবির জগলুল, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ আলী খোকন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হারুনের রশিদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য শামছুল ইসলাম পাটোয়ারী ও সাঈদুল বাকিন ভূঁইয়া। বিএনপি থেকে যারা মনোনয়ন চাইছেন তারা হলেন, জেলা বিএনপি’র সভাপতি আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা সমন্বয়কারী কর্ণেল আব্দুল মজিদ, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঞ্জুর এলাহী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা আক্তার চৌধুরী। আসন্ন জাতীয় নির্বচনকে ঘিরে মাঠে আওয়ামীলীগের সরগরম অবস্থান থাকলেও বিএনপি অনেকটাই কৌশলী অবস্থানে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় বর্তমানে প্রার্থীদের ব্যানার পেস্টুনে সয়লাব হয়ে গেছে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন সব দলের প্রার্থীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিতরা সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে নির্বাচিত হলে আরো উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য তাঁর উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার পাশাপাশি অসমাপ্ত কাজ করার প্রতি শ্রুতি দিচ্ছেন। বিএনপির ভোট ব্যাংক মনে করছেন এ আসনের বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের আসন ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে অনেকেই নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে জানান দিচ্ছেন এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতিশ্রুতি সহ চালাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ ও গণসংযোগ। এই আসনের জনসাধারণ অপেক্ষা কখন দেখবেন যোগ্য প্রার্থী হিসাবে কে কোন দলের ব্যানার নিয়ে আসবেন ? অবশ্য সকল ভোটার চায় তাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার ভোট প্রয়োগের অধিকার এবং যোগ্য প্রার্থী কে নির্বাচিত করতে পারবেন। এমন প্রত্যাশা সকল মানুষের।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × 3 =