ক্যানসার, কিডনী ও ডায়বেটিক সহ সর্র্বরোগের চিকিৎসক ডাঃ সালাহ উদ্দিন মাহমুদের প্রতারনা

2
2629

মোঃ আহসানউল্লাহ হাসানঃ
ক্যানসার, যক্ষা, কিডনী পচন ও ডায়াবেটিকস সহ এমন রোগ বাকী নেই যার চিকিৎসা ডাঃ সালাহউদ্দিন মাহমুদ করতে পারেন না। এমন কোন ওষুধ নেই যা তিনি আবিস্কার করেন নাই। তিনি কিডনী রোগের গবেষক, অলটারনেটিভ মেডিসিন আবিষ্কারক। বড় বড় মন্ত্রী মিনিষ্টারের নিকট থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে সনদপত্রও পেয়েছেন। তার নামের পাশে রয়েছে একাধিক বড় বড় দেশের ডিগ্রী। যা দেখলে বা শুনলে চমকে উঠারই কথা। তবে এসবের সবই ভুয়া। কোন দেশ থেকে কোন ডিগ্রী অর্জন করেছেন, বা ক্যানসারের কোন রোগিকে ভালো করেছেন, বা কিডনী গবেষনা করে কোন তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সে থাকে নির্বিকার।

অর্থাৎ উত্তর দিতে পারেনা। এসব ভুয়া প্রচারনার আড়ালে সাধারন মানুষকে দীর্ঘদিন জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়াই তার মুল কাজ। রোগমুক্তি তো দুরের কথা তার প্রতারনার ফাদে পড়ে অনেকেই আজ রোগাক্রান্ত, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। ডাঃ সালাহ উদ্দিনের প্রতারনার ফাদে পড়ে টাকা পয়সা খুইয়ে এক সময় রোগ ভালো না হওয়ার কারনে অনেকেই পেছন ফিরে চলে যায়। তারা না পারে কইতে, না পারে সইতে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নোয়াখালী জেলার সুধারাম উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের জয়নাল আবেদিনের ছেলে ডাঃ সালাহউদ্দিন মাহমুদ। তিনি ১৯৮৩ সালে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করে কিভাবে ডাক্তার হলেন সেই প্রশ্নের উত্তর সবারই অজানা। তাও আবার কিডনী রোগের গবেষক। যা বাংলাদেশে খুবই বিরল, তার মানে একজনও নেই। টিভি বা পত্রিকায় তার প্রচারনার কোন বিজ্ঞাপন দেখা না গেলেও ঢাকা শহরের দেয়ালে দেয়ালে কলিকাতা হারবালের মতো পোষ্টার চোখে পড়বে মাঝে মধ্যে। এতো বড় একজন ডাক্তারের সান ক্যামিকেল নামের একটি ইন্ডাষ্ট্রিজ আছে। তবে কোথায় আছে তা কেউ জানেনা। তিনি ডায়াবেটিকস এন্ড কিডনী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে প্রচারিত আছে। তবে এই প্রতিষ্ঠানের সেবা কে, কোথায়, কিভাবে পেয়ে থাকে তা কেউ বলতে পারেনা। তবে ২৩/৫ সি, কে এম দাস লেন, টিকাটুলি, ঢাকা-১০০০ ঠিকানায় তার একটি চেম্বার রয়েছে। যেকানে বসে সালাউদ্দিন অবিরত ক্যানসার, কিডনী, যক্ষা, হাপানী, বন্ধাত্ব, অশ্বগেজ সহ বহুমুত্র ডায়াবেটিকস রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তার চিকিৎসায় ক্যানসার বা কিডণী রোগি ভালো হয়েছে এমন লোক পাওয়া না গেলেও তার দ্বারা প্রতারিত হয়ে হয়েছে এমন লোকের সংখ্যা অনেক। তার কথার ছন্দে বিশ্বাসী হয়ে রোগিরা ৩/৬ মাসের চিকিৎসা কোর্সে ভর্তি হয়ে তার হাতে তুলে দেয় মোটা অংকের টাকা। প্যারাসিটামল মিশানো হালুওয়া আর বড়ি নিয়ে বাড়ী ফিরে তারা। বাড়ীতে নিয়ে ঐ ওষুধ খায় ঠিকই তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। তারা আবার ফিরে, পরিবর্তন করে আবারো এক ডোজ ওষুধ দেয়া হয় এবং রাখা হয় টাকা। রোগিরা এভাবে একাধিক বার আসা যাওয়ার মধ্যে থেকে বিরক্ত হয়ে পড়ে। পরে আর আসেই না। সালাহ উদ্দিন তার রোগি কালেকশন করার জন্য কিছু সংখক মহিলা কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন যারা বিভিন্ন নামি দামী হাসপাতাল ক্লিনিকের সামনে থেকে রোগিদের ভুলিয়ে বালিয়ে বিজিটিং কার্ড হাতে ধরিয়ে দেন। পরে ঐ রোগিরা সালাউদ্দিনের চেম্বারে চলে আসেন। এসে যখন দেখতে পান সালাহ উদ্দিনের চেয়ে বড় কোন ডাক্তার বাংলাদেশে আর দ্বিতীয় জন নেই। অতপর সালাউদ্দিনের লেকচার শুনে তারা পুরোপুরি বিশ্বাস অর্জন করেন। সালাহ উদ্দিন যে সবচেয়ে বড়মাপের ভুয়া চিকিৎসক তা যখন বুঝতে পারেন তখন আর তাদের কিছুই করার থাকেনা। অনেকে পরবর্তী ঝামেলার কারনে মুখ বুঝে সহ্য করেন। অনেকে প্রতিবাদ করার আগ্রহটুকু হারিয়ে ফেলেন। সালাউদ্দিন দীর্ঘ দিন ধরে টিকাটুলি বসে চিকৎসার নামে মানুষের সাথে এভাবে প্রতারনা করে আসছে। তাই ভুক্তভুগিদের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যেন এধরনের প্রতারক ডাক্তারের বিরোদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করে। সালাউদ্দিনের এধরনের অপকর্মের বিস্তারিত ফিরিস্তি নিয়ে অপরাধ বিচিত্রায় ২য় পর্ব আসছে। সেই পর্যন্ত সাথেই থাকুন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 − five =