দূর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত ছাতকে রেললাইনের পাশে ময়লা আবর্জনার স্তুপ

0
927

আরিফুর রহমান মানিকঃ সুনামগঞ্জের প্রবেশদ্বার ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট ও বাজারটি ব্যবসায়িক স্থান হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে বেশ পরিচিত। প্রতিদিন এ স্থানটিতে ছাতক ছাড়াও বিশ্বনাথ, সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের মানুষের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মিলন মেলা হয়ে থাকে। ব্যবসায়িদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ন স্থান।

 

এ ছাড়া ট্রাফিক পয়েন্ট সংলগ্ন রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি অনার্স কলেজ, গোবিন্দনগর ফাজিল মাদরাসা, গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়, দিঘলী রাহমানিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসা, গোবিন্দগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রত্যেহ এ পয়েন্ট দিয়ে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছে। গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট অতিক্রম করে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ সিলেট-সুনামগঞ্জ ও ছাতক যাতায়াত করছে। ট্রাফিক পয়েন্ট বুক দিয়ে চলে গেছে ছাতক-সিলেট রেললাইন। দিনে ৪বার যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি ছাতক-সিলেট যাতায়াত করছে। এ গুরুত্বপূর্ন স্থানটিতে নেই কোন পুলিশ ফাঁড়ি, পাবলিক টয়লেট বা সেবামুলক অন্যান্য স্থাপনা। অথচ পয়েন্টের ১০গজ দূরে রেলওয়ের ২৯নং ব্রিজ অবস্থিত। এ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় হোটেল রেস্তুরার ও স্থানীয় ব্যবসায়িদের ফেলে দেয়া ময়লা আবর্জনায় বিশাল স্তুপে পরিনত হয়েছে। যা দূর্গন্ধে পয়েন্টসহ আশপাশ এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। বাতাসের সাথে এখানের দূর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চার দিকে। এসব সহ্য করে সাধারণ মানুষসহ প্রতিদিন গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়, গোবিন্দনগর  ফাজিল মাদরাসার কয়েক শ’ শিক্ষার্থী যাতায়াত করছে নাক-মুখ বন্ধ করে। ময়লা আবর্জনা ফেলে ব্রিজের নীচের খালটিও ভরাট করে ফেলে এসব পরিবেশ বিনষ্টকারি স্বার্থান্বেষিরা। যে কারণে সামন্য বৃষ্টি হলেও আকস্মিক বন্যায় পরিনত হয় গোবিন্দগঞ্জ নতূনবাজার, মসজিদ, হাইস্কুলসহ শতাধিক বাসা-বাড়ি ও ব্যবসায়ি প্রতিষ্ঠান। গোবিন্দগঞ্জ নতূনবাজারের ব্যবসায়ি বদর উদ্দিন, জহির হোসাইনসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পয়েন্টের রেলের ব্রিজের খালটি ভরাটের কারণে এবং বাজারে ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই বন্যায় পরিণত হয়। এখানে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতায় চরম দূর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। বাসা-বাড়ি ও হোটেল রেস্তুরার জমে থাকা ময়লা পানি আর বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে মানুষ চলাচলে মারাত্বক ব্যঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে রাস্তায় চলাচলে অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েন চলাচলরত মানুষ। এ আক্রান্ত থেকে রেহায় পাচ্ছে না এখানে বসবাসকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায় পড়–য়া শিক্ষার্থীরাও। গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট সংলগ্ন ব্যবসায়ি মাওলানা ছাদিকুর রহমান বলেন, এখানে পচাঁ দূগন্ধের জন্য ব্যবসা-বানিজ্য করতে পারছেন না। পাবলিক টয়লেট না থাকায় পথচারি এবং বাজারে আসা লোকজনরা তার প্রতিষ্ঠানের সামনের রেলের ব্রিজ ও আশপাশ এলাকায় প্রশ্রাব করে এবং ময়লা আবর্জনা ফেলে মারাত্বক ভাবে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছেন। গোবিন্দনগর মাদরাসার শিক্ষার্থী এইচ এম আবদুল বাছিত বলেন, ময়লা আবর্জনার কারণে এ পথে মাদরাসায় যেতে তিনি নাক-মুখ বন্ধ করে যেতে হয়। গোবিন্দগঞ্জ নতূনবাজার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, এসব ময়লা আবর্জনার ফলে স্কুল কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থী ছাড়াও স্থানীয় বসবাসকারিরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকা জলাবদ্ধতায় সৃষ্টি হয়। গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকার ফার্মেসী ব্যবসায়ি সুদিপ দাশ বলেন, রেলের ব্রিজ অতিক্রম করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা এ পথে যাতায়াত করে। আর ময়লা আবর্জনা ফেলে ওরা পরিবেশ নষ্ট করছে। পথচারি ও স্থানীয়রা রেলের আশপাশ এলাকাটি প্রশ্রাবের জায়গা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করছেন। যা চোখে দেখলে নিজেদের কাছে লজ্জা হয়। ব্যবসায়ি হাফেজ আশিক উদ্দিন বলেন, বৃহত্তর গোবিন্দগঞ্জের মধ্যে এ স্থানটি নোংরা বেশি। মাদরাসা ছাত্র ইয়াহইয়াউল ইসলাম সুজাত বলেন, জনগুরুত্বপূর্ন রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণে এখানে এক শ্রেনী মানুষরা আরো নোংরামি পরিবেশ সৃষ্টির পথ-বেচে নিয়েছে। মাদরাসা, স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায় সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। স্কুল শিক্ষক মানিক মিয়া বলেন, এ কারণে দিন দিন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধির সু-দৃষ্টি কামনা করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক লোকজনরা জানান, রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সোনার বাংলা রেস্টুরেন্ট ও লন্ডন রেস্টুরেন্টের লোকজনরা এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি পয়েন্টের অন্যান্য কিছু ব্যবসায়িরাও এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে বিশাল স্তুপের সৃষ্টি করেছে। রেলের গেইটম্যান সইদ আলী বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জিআরপি থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং এখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলার জন্য স্থানীয় হোটেল ও অন্যান্য ব্যবসায়িদের নিষেধ করার পরও ময়লা-আবর্জনা ফেলা তাদের অব্যাহত আছে। তিনি তার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন সচেতন মহল।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × four =