সড়ক-মহাসড়ক থেকে রাজধানীর রাজপথে যন্ত্র‍া ইজিবাইক

0
688

তাসমিয়াঃ ইজিবাইক বন্ধে কঠোর নির্দেশনা মানছে না পুলিশ, দিনে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অপচয় ,চাঁদার টাকা যাচ্ছে নেতাদের পকেটে মহাসড়ক থেকে রাজধানীর রাস্তা নিষিদ্ধ ইজিবাইক দেশের সড়ক-মহাসড়ক থেকে রাজধানীর রাজপথে।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কঠোর নির্দেশনা আছে নিষিদ্ধ যান ইজিবাইক রাজধানীতে যাতে চলতে না পারে সেজন্য  । বরং পুলিশকে ম্যানেজ করেই রাজধানীতে সদর্পে চলছে ইজিবাইক। ঢাকায় চলাচলরত ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন তোলা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা চাঁদা। যার সিংহভাগ যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার পকেটে।

 

একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাবে ঢাকায় চলাচলরত ইজিবাইকের ব্যাটারি রিচার্জ করার জন্য কমপক্ষে ৫শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে। যার পরিণতি ঘন ঘন লোডশেডিং। মহাসড়কে ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করার আগে থেকেই রাজধানীর অলি-গলিতে ইজিবাইক চলাচল শুরু করে। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট দেশের ২২টি মহাসড়কে সব ধরণের থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ করার পর পুলিশ অনেকটা তৎপর হয়ে ওঠে। সে সময় ঢাকার বাইরে থেকে বেশ কিছু ইজিবাইক ঢাকায় চলে আসে। আইনের প্রয়োগ না থাকায়  মৌমাছির মতো ইজিবাইকে ভরে গেছে পুরো রাজধানী। নগরীর যে কোনো এলাকায় বের হলে ব্যটারীচালিত এসব যানের ভিড়ে হাঁটাই যায় না। সাথে যোগ হয়েছে মোটরচালিত রিকশা। এই দুইয়ে মিলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা । বাংলাদেশ রিকশা ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের হিসাব অনুযায়ী ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ৫০ হাজার। আর অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের হিসাবে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায়ল ইজিবাইকের সংখ্যা লাখেরও বেশি। রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকার অলি-গলিতে এখন ব্যাটারীচালিত ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার ছড়াছড়ি। এগুলো চলাচলে বাধা না দেয়ায় দিন দিন সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে এগুলোর ভিড়ে রাস্তায় পায়ে হাঁটাও দুস্কর হয়ে পড়েছে। নগরীর মিরপুর-১, ১০, পল্লবী, দারুস সালাম, বিমানবন্দর, তুরাগ, দক্ষিণখান, উত্তরখান, বনশ্রী, আজিমপুর, জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড ও বাসাবো-মাদারটেক, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, ডেমরা, জুরাইন, শ্যামপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, রামপুরা, খিলগাঁও, সিপাহীবাগ, বনশ্রী, বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, মেরাদিয়াসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল নির্বিঘ্নে করছে । স্থানীয়রা জানান,গত দুই সপ্তাহ যাবত বাড্ডা থানা এলাকায় মাদকও অপরাধীর গড ফাদার ওসি ওয়াজেদের ‍অন্যত্র পুষ্টিং এর পর ইজিবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন  বাড্ডা থানার নতুন ওসি রফিকুল ইসলাম । ওসির কথামতো বাড্ডা থানার আওতাধীন কোথাও ইজিবাইক চলতে দিচ্ছে না পুলিশ। তাতে অনেকেরই মাথায় হতে পড়েছে। তবে ইজিবাইক বন্ধ হওয়াতে এলাকার বেশিরভাগ মানুষই খুশি। তারা নতুন ওসিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। ভুক্তভোগিদের মতে, পুলিশ ইচ্ছা করলেই যে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাড্ডা থানা। ইজিবাইকের চালক ও মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গোপন টোলের মাধ্যমে চলে এসব যানবাহন প্রতিদিন ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড়শ’ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা আছে এলাকাভেদে। মিরপুর ১০ নং গোলচক্কর থেকে ইজিবাইক, প্রাইভেট সিএনজি ও চ্যাম্পিয়ন নামের কিছু বাস চলাচল করে। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে প্রতিদিন ৪০০ টাকা হারে চাঁদা দিয়ে চলছে এসব অবৈধ যানবাহন। স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় আড়াইশ’র বেশি ইজিবাইক চলাচল করে। এর মধ্যে কিছু চলে ১০ নং গোলচক্কর থেকে মিরপুর ১৪ হয়ে ভাষানটেক এবং কিছু মিরপুর ১৪ হয়ে কচুক্ষেত পর্যন্ত চলাচল করে। মিরপুর ১১ নং সেকশনের পল্লবী মিডটাউন শপিং মলের সামনে থেকে রূপনগর আবাসিক এলাকা পর্যন্ত চলাচল করে প্রায় দেড়শ’ ইজিবাইক। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। মিরপুর ১ নম্বর থেকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় চলাচল করে দেড় শতাধিক ইজিবাইক। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন। তার নিয়োগকৃত লাইনম্যানরা প্রত্যেক ইজিবাইক থেকে চাঁদা তোলে। রামপুরা টেলিভিশন ভবনের কাছ থেকে বনশ্রী হয়ে সিপাহীবাগ চলাচল করে প্রায় একশ’ ইজিবাইক। এ ছাড়া বেশ কিছু লেগুনা চলাচল করে। যেগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই এবং সেগুলোর ফিটনেসও নেই। মোত্তালেব নামে এক চালক জানান, ইজিবাইক চলাচলের জন্য তারা প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দেন। এ টাকা সিপাহীবাগের এক নেতা তাদের কাছ থেকে নেয়। এ ছাড়া মাসে গাড়িপ্রতি ২০০ টাকা করে ট্রাফিক পুলিশকে দিতে হয়। সবুজবাগ থানার খিলগাঁও বিশ্বরোড থেকে বাসাবো হয়ে মাদারটেক, নন্দীপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দুশ’ ইজিবাইক চলাচল করে। প্রত্যেকটি ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন ৭০ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশনের পাশে আশকোনা এলাকায় শত শত ইজিবাইক চলাচল করছে। স্থানীয়দের মতে, এখানে ইজিবাইকের সংখ্যা ৬ শতাধিক। বিমানবন্দর রেল ক্রসিং থেকে আশকোনা হয়ে বউড়া ও হলান পর্যন্ত চলাচল করে আড়াইশ’র মতো। বিমানবন্দর রেল ক্রসিং থেকে দক্ষিণখান ও কাঁচকুড়া পর্যন্ত চলাচল করে ৪শ ইজিবাইক। এই এলাকায় ইজিবাইক চালানোর জন্য প্রতিদিন ৩০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। চালকরা জানান, দক্ষিণখান ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের ভাতিজা এই চাঁদা তোলে। শুধু তাই নয়, এই এলাকায় ইজিবাইক নামানোর সময় এককালীন ২ হাজার টাকা করে দিতে হয়। নগরীর শ্যামপুর, কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় হাজার হাজার ইজিবাইক ও মোটরচালিক রিকশা চলাচল করছে। কদমতলী থানা এলাকায় ইজিবাইকের বেশ কয়েকটি রুটচালু আছে। এর মধ্যে রায়েরবাগ ও মোহাম্মদবাগ রুটে চলাচল করে কমপক্ষে আড়াই হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। রায়েরবাগের এই রুট নিয়ন্ত্রণ করে ডিউক ও সেলিম এবং মোহাম্মদবাগে নিয়ন্ত্রণ করে লিটন ও তার দুই ভাই। প্রতিদিন এখানে ইজিবাইক প্রতি ৩০ টাকা রিকশা প্রতি ২০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হয়। এলাকাবাসীর হিসাব মতে, শুধু এই দুই রুট থেকেই মাসে তিন লাখ টাকার বেশি চাঁদা ওঠে। এছাড়া বড়ইতলা থেকে বিক্রমপুর প্লাজা, পোস্তগোলা থেকে পাগলা, ধোলাইরপাড় থেকে শনিরআখড়া, জুরাইন মেইন রাস্তা থেকে মুরাদপুর হয়ে কোদারবাজার পর্যন্ত আছে একটি করে রুট। জানা গেছে, মুরাদপুর মাদ্রাসা রোডের রুট নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। সাবেক উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে থাকেন তিনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিন হাজারেরও বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারির চার্জ দেয়ার জন্য মুরাদপুর এলাকাতেই আছে কয়েকটি গ্যারেজ। যেগুলোতে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ নেয়া আছে বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে। স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় বিদ্যুত চুরির নেপথ্যে নাসির ও তার সিন্ডিকেটের লোকজন আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন গ্যারেজেই অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগে ব্যাটারীচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চার্জ দেয়া হয়। এ কারনে জুরাইন, মুরাদপুর, দনিয়া, রসুলপুর, পলাশপুরসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা পোহাতে হয়। ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হানিফ খোকন বলেন, সিংহভাগই ইজিবাইকের ব্যাটারি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে চার্জ করা হয়। এতে করে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। আর জনগণ লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করছে। তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি অবৈধ এ যানগুলোতে রাজধানীতে চলাচল নিষিদ্ধ করার জন্য। এগুলোর কারনে রাস্তায় যানজট হচ্ছে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, লোডশেডিং হচ্ছে, বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − 11 =