অভিযানের পরেও প্রশাসনের চোখ আড়ালে দিয়েই অবাধেই চলছে মাদক বেচাকেনা ও সরকারী খাল দখল

1
711

হাবিব সরকার স্বাধীন‍ঃ
কড়াইল বস্তির বেলতলা থেকে স্যাটেলাইট বস্তির দিকে যেতে মাঝখানে একটি কালভার্ট। এর নিচ দিয়ে বয়ে গেছে একটি সরু খাল। কালভার্টটি বেলতলা ব্রিজপাড়া নামে পরিচিত। খালের পাশেই লাল-সবুজের রঙের জার্সি পরা এক যুবক দাড়িয়ে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বয়সী মানুষ তার কাছে যাচ্ছে এবং কয়েক সেকেন্ডর মধ্যে ওই যুবক পকেট থেকে বের করে টাকার বিনিময়ে তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট। এই চিত্র গতকাল সোমবার দুপুরের। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, যুবকের নাম স্বপন। কড়াইল বস্তির রাতের চিত্রও অভিন্ন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে গোডাউন বস্তির মসজিদের সামনের সড়কের পাশে ভ্যানে বসেছিলেন নামে । তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন রুবেল ও রোমান নামে দুই তরুণ। লোকজন তাঁদের কাছ থেকে গাঁজার পুরিয়া কিনে নিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় দাঁড়িয়েই এই দৃশ্য দেখা যায়। কৌতুহল জাগল ক্রেতা সেজে ওদের সঙ্গে কথা বলার।

কিন্তু তারা নতুন মুখের কাছে গাঁজা বিক্রি করতে রাজি হন না, তা আগে থেকেই জানা ছিল। এ কারণেই একজন মাকদসেবীর সহায়তায় তাঁদের কাছে গিয়ে ১০০ টাকার গাঁজা কেনা হয়। প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রি করছেন, পুলিশ ধরবে না? এমন প্রশ্ন করা মাত্রই ময়নার মা বললেন, ‘মাল পাইছেন চলে যান। ওসব জেনে লাভ নেই।’ এরই পরই তিনি উল্টো প্রশ্ন ছুড়লেন “পুলিশ ‘ম্যানেজ’ না থাকলে কারও বাবার ক্ষমতা আছে এই বস্তিতে ইয়াবা গাঁজা বিক্রি করার? কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসি। ময়নার মার কাছ থেকে গাঁজা ফেলে দিই রাস্তার পাশে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী যুদ্ধের মধ্যে বনানী থানার কড়াইলের বিভিন্ন বস্তিতে প্রকাশ্যে সড়কের পাশে মাদকদ্রব্য বেচাকেনা অবাক করার মতোই ঘটনা। এসব মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ভয়-ভীতির ছাপ নেই। তাহলে কী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের খবর ওই এলাকায় পৌছায়নি। নাকি ময়নার মার মতো সবাই পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করেই চালাচ্ছে মাদক ব্যবসা? নাকি তারা এসব অভিযানকে পাত্তাই দিচ্ছে না। অবশ্য কড়াইল এলাকায় সরেজমিন অনুসন্ধানে বনানী থানার কয়েক পুলিশ সদস্যে কথা উঠে এসেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের কারও কারও তাদের কাছে ‘ম্যানেজ’ হয়ে থাকেন বলে জানিয়েছেন একাধিক মাদকসেবী এবং এলাকার সাধারণ মানুষ। ইয়াবা, গাঁজাসহ বিক্রেতা ও ক্রেতা ধরার পর ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে ২/১ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদকসেবিরোধী অভিযান ঘোষনার পর থেকেই সারাদেশে র‌্যাব-পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিশেস অভিযান শুরু করেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে র‌্যাব-পুলিশের
‘বন্দুযুদ্ধে’ নিহতের বহু ঘটনাও ঘটছে। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য মাদক নির্র্মূল করা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তারা বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, বস্তির একেক এলাকার মাদক একেকজন নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীও রয়েছে। শীর্ষে কাসেম ওরফে বাবা কাসেম-গ্যাস মমিন কড়াইলের ইয়াবা ব্যবসার অন্যতম নিয়ন্ত্রক। বউবাজার বস্তির ইয়াবার বড় ব্যবসায়ীর মধ্যে রয়েছে-হারুন মিয়া, তার শ্যালক গুড্ডু ও সজীব, ইউসুফ কাজীর ছেলে মেহেদী হাসান অপু, মাছ বাজারের ওসমানের ছেলে আফাজ ও আসেক, ঝিলপাড়ের চিরতার ছেলে ইব্রাহিম, সাইদুল ইসলাম ক ব্লকের জসিম ও তার বোন পারভীন ও বউবাজার খামারবাড়ির শাহীন। বাবু ও ইমন নামে দু’জন তাদের অনেককে নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানা গেছে। মাদক ব্যবসার অভিযোগ জোছনা নামে এক নারীকে প্রায় দুই বছর আগে কড়াইলের টি এন্ড টি বস্তি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল কড়াইল মাদক প্রতিরোধ কমিটি। বর্তমানে নাখালপাড়ায় থাকেন তিনি। সেখান থেকেই কড়াইল বস্তির একাংশের ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি এবং তার দ্বিতীয় স্বামী শাওন। মাঝেমধ্যে ইয়াবা নিয়ে বোরকা পরে বস্তিতে আসেন জোছনা। গ ব্লকের রীনা ও তার স্বামী সোহেল ইয়াবার অন্যতম ডিলার। তারা টি এন্ড টির ওয়্যারলেস কলোনিতে থাকেন। কয়েকদিন আগে এস আই তাহের তাদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করেছেন শোনা যায়। রীনার দুই ছেলেও তার ব্যবসায় সহায়তা করে। বেদে বস্তিতে নাসির ও বশির দু’ভাই কড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা পাইকারি বিক্রি করে। তারা কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে আসে। সম্প্রতি ইয়াবাসহ যাত্রাবাড়ী এলাকায় তারা গ্রেফতার হয়েছে। স্যাটেলাইট বস্তি এলাকার ঢাকা মহানগরের নেতাদের নাম ভাঙ্গীয়ে স্থানীয় শ্রমীক লীগের নেত্রী তাছলি ওরফে সুন্দরী তাছলি এক নামে পরিচিত, তার সতিন হাছিনা পারভীন ও তাদের স্বামী মোস্তফার নিয়ন্ত্রণে অন্তত ১০ জন ইয়াবা বিক্রি করে। অভিযোগ আছে বনানী থানা পুলিশের কয়েক কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের ঘনিষ্টতা রয়েছে। এ ছাড়া জামাইবাজারের আবদুল খালেকের ছেলে জসিম, জিল্লু, রাসেল ওরফে ফরমা রাসেল, সীমা ও মোশারফ বাজারের শহিদুল ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলের অন্যতম কারবারী।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen + eleven =