তিন কোম্পানী শেয়ারে বিনিয়োগে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে

0
1071

শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত (পি/ই) অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তিন কম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই কম্পানিতে শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস অনুযায়ী শেয়ারের দাম অনেক বেশি। এসব কম্পানিতে সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগের পরামর্শ পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো কম্পানির পি/ই অনুপাত যত কম, ধরে নেওয়া হয় ওই কম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ ঝুঁকি ততই কম। আর যেসব কম্পানির পি/ই বেশি, সেই কম্পানিতে বিনিয়োগ ঝুঁকি বেশি।

৪০-এর বেশি পি/ই অনুপাতের কম্পানিতে মার্জিন ঋণ দেওয়া হয় না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেয়ার মূল্য-আয় অনুপাত অনুযায়ী সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে মুন্নু জুট স্টাফলার্স, কে অ্যান্ড কিউ (বাংলাদেশ) ও মুন্নু সিরামিকস। শেয়ারের মূল্য-আয় (পি/ই) অনুপাত কম্পানির আয় ও পুঁজিবাজারে শেয়ার দামের সঙ্গে সম্পর্কিত। বছর কিংবা প্রান্তিক শেষে শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ও বাজার দামের ভিত্তিতে পি/ই নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ একটি কম্পানির বাজার দামকে ইপিএস দিয়ে ভাগ করে পি/ই অনুপাত হিসাব করা হয়। পি/ই ধারণা অনুযায়ী, একটি কম্পানির পি/ই অনুপাত যত হবে, বিনিয়োগ ফিরে পেতে তত দিন অপেক্ষা করতে হবে। ডিএসইর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুন শেষে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের পি/ই ৬৬৭২, কে অ্যান্ড কিউ কম্পানির ৪৫৬৯ আর মুন্নু সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজের ২৮২৮। অর্থাৎ এই তিন কম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করলে মূলধন ফেরত পেতে পি/ই অনুপাতের সমান বছর অপেক্ষা করতে হবে। ডিএসইর প্রতিবেদন বলছে, জুন পর্যন্ত মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ০.৫০ টাকা আর মুন্নু সিরামিকসের ইপিএস ০.১১ টাকা। কম্পানি দুটি বিনিয়োগকারীদের বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। কে অ্যান্ড কিউ কম্পানির ইপিএস ০.৫ টাকা। কম্পানিটি কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি। সর্বশেষ বাজার দাম অনুযায়ী মুন্নু জুটের প্রতি শেয়ারের দাম চার হাজার ৩৩৭ টাকা। ইপিএসে বাড়তি কোনো উল্লম্ফন না থাকলেও শেয়ার দাম বেড়েই চলেছে। ডিএসইর পক্ষ থেকে কয়েক দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবু আকাশচুম্বী হয়েছে কম্পানিটির শেয়ার দাম। সেই হিসাব অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত কম্পানিটির পি/ই অনুপাত ৭৫৫২।  মুন্নু সিরামিকসের শেয়ার দাম ৩৬৭ টাকা। সে অনুযায়ী পি/ই দাঁড়িয়েছে ৩৩৪১। কে অ্যান্ড কিউ কম্পানির সর্বশেষ শেয়ার দাম ১৮৩ টাকা। আর পি/ই ৩৬৬৬। অর্থাৎ কম্পানিতে বিনিয়োগ করলে বর্তমান পি/ই সমান বছর পরই বিনিয়োগ ফেরত পাওয়া যাবে।

গতকালের বাজার : সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস গতকাল সোমবার দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বেড়েছে। তবে দুই বাজারেই কমেছে লেনদেন। একই সঙ্গে বেশির ভাগ কম্পানির শেয়ার দামও হ্রাস পেয়েছে। সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৭৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর সূচক বেড়েছে ৮.৮৮ পয়েন্ট। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৫৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। আর সূচক বেড়েছিল ১.৭৬ পয়েন্ট। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, দিনভর সূচকের ওঠনামার মধ্য দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়েছে। দিন শেষে সূচক দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৪৮ পয়েন্ট। ডিএস-৩০ মূল্য সূচক ৪ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৯১৩ পয়েন্ট ও ডিএসইএস শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে এক হাজার ২৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হওয়া ৩৩৮ কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৩০টির, কমেছে ১৬৮টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৪১ কম্পানির শেয়ার দাম। লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষে রয়েছে বিবিএস ক্যাবলস। কম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পেনিনসুলা চিটাগাংয়ের লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর তৃতীয় স্থানে থাকা কেডিএস এক্সেসরিজের লেনদেন হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। অন্যান্য শীর্ষ কম্পানি হচ্ছে—বসুন্ধরা পেপার, নাহি অ্যালুমিনিয়াম, মুন্নু সিরামিকস, স্কয়ার ফার্মা, ড্রাগন সুয়েটার, ইফাদ অটোস ও আমান ফিডস। দাম বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে—পদ্মা লাইফ ইনস্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক ইনস্যুরেন্স, রংপুর ফাউন্ড্রি, আজিজ পাইপস, বিডি অটোকারস, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইন্টা. লিজিং, এশিয়া ইনস্যুরেন্স, ট্রাস্ট ব্যাংক ও বসুন্ধরা পেপার। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর সূচক বেড়েছে ২৮ পয়েন্ট। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৮০ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর সূচক বেড়েছে ১২ পয়েন্ট। গতকাল লেনদেন হওয়া ২৬০ কম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১০০টির, কমেছে ১৪০টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টি কম্পানির শেয়ার দাম।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × one =