ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তোলপাড় আটক- ১

0
581

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি :
দেশের একমাএ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে সিমেন্ট উত্তোলন ও ব্যাংকের জাল দলিলে প্রতারণার অভিযোগে রুবেল মিয়া নামে এক সিমেন্ট ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি পৌরসভার ফকিরটিলা এলাকার মৃত কালা মিয়ার ছেলে। মামলা দায়েরের আগেই গত রোববার মধ্যরাতে তাকে আটক করে পুলিশ।
অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে ছাতক থানায় মামলা দুটি দায়েরের পর গত সোমবার আটক সিমেন্ট ব্যবসায়ী রুবেল মিয়াকে ওই দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সুনামগঞ্জ জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলাগুলোয় সিমেন্ট ডিলার রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে দুই কোটি ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।
জালিয়াতির ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক প্রশাসনের বিভাগীয় প্রধান মো. রেজাউল করিম বাদী হয়ে থানায় পৃথক দুটি মামলা করেন। ওই মামলা দুটির একটিতে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানির ডিলার রুবেল মিয়া ছাড়াও রূপালী ব্যাংক ঢাকার কাপ্তান বাজার শাখার সাবেক ম্যানেজার মাসুদুর রহমান ও সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা বিকাশ দত্তকে আসামি করা হয়েছে।

দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ছাতক সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি’র অনুমোদিত সিমেন্ট ডিলার হিসেবে সাত বছর ধরে ব্যবসা করছেন রুবেল মিয়া। মেসার্স সম্পা অ্যান্ড সন্স এবং হানিফ এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রুবেল মিয়া ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পূবালী ব্যাংক ছাতক শাখার কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে আটটি ভুয়া ক্রেডিট ভাউচারের মাধ্যমে কোম্পানি সংশ্নিষ্ট শাখায় জমা দেন। জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি ওই ক্রেডিট ভাউচারের বিপরীতে রুবেল মিয়া ৯২ লাখ ৫০ হাজার টাকার সিমেন্ট উত্তোলন করেন। পরবর্তী সময়ে ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করা হলে হিসাবের গরমিল ধরা পড়ে।
এ ছাড়াও সিমেন্ট ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া রাজধানী ঢাকার রূপালী ব্যাংক কাপ্তান বাজার শাখার সাবেক ম্যানেজার মাসুদুর রহমান ও কর্মকর্তা বিকাশ দত্তের যোগসাজশে দুই কোটি টাকার ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে এক কোটি ৬০ লাখ ৯৫ হাজার টাকার সিমেন্ট উত্তোলন করেছেন বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে।
উল্লেখিত ব্যাংক গ্যারান্টি ও ক্রেডিট ভাউচার জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হলে অভিযুক্ত সিমেন্ট ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা আত্মসাতের দায় স্বীকার করে ৩০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ হওয়া মোট দুই কোটি ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য রুবেল মিয়া তিনটি ব্যাংকের নিজ অ্যাকাউন্টের ২৭টি চেক স্বাক্ষর করে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। পরে কোম্পানির সংশ্নিষ্ট শাখায় সাত লাখ ৪০ হাজার টাকা জামা দেওয়ায় সিমেন্ট ব্যবসায়ী রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে এই জালিয়াতির ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করা হয়নি।
জালিয়াতির ব্যাপারে ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি থেকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত জানানো হয়। গত ৩ জানুয়ারি ৩৭৭তম সিসিসিএল এন্টারপ্রাইজ বোর্ডসভায় অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। ওই সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব ও বিসিআইসি প্রধান কার্যালয়ের দু’জন কর্মকর্তা সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে ওই গঠিত তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জালিয়াতির বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হলে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ছাতক থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছাতক থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) কাজী গোলাম মোস্তাফা জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় আদালতে আসামি রুবেল মিয়ার তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 − 7 =