রুহিয়ায় ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসী মানহীন ঔষধের দৌরাত্বে প্রতারণায় শিকার সাধারন মানুষ

0
725
রুহিয়া(ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি :  ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া থানার বিভিন্ন হাট বাজারে অশিক্ষিত, প্রশিক্ষন, ড্রাগ লাইসেন্স বিহীন, গড়ে উঠছে শত-শত ঔষধ ফার্মেসী। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে মালিক ও কর্মচারীরাই ডাক্তারী করছে। ফলে সরকার হাজার হাজার টাকার রাজেস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর প্রতারিত হচ্ছে অসহায় সাধারন মানুষ।ফার্মাসির ব্যবসা হয়ে উঠেছে জমজমাট, যেন দেখার কেউ নেই।
জানা যায়, ৫ টি ইউনিয়ন  নিয়ে গঠিত রুহিয়া থানা। যার মধ্যে পাটিয়াডাঙ্গী বাজার, ঢোলারহাঁট, বাদিয়া মার্কেট,বৈরাগীহাঁট,স্বপ্না মার্কেট, তালতলি বাজার, ঝলঝলি বাজার, ঢোলারহাঁট বাজার, চুয়ামুনি,সেনিহাড়ি বাজার,আখানগর বাজার,উত্তরা বাজার, থানার বিভিন্ন ছোট-বড় হাট-বাজারে বর্তমানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ফার্মেসী।
যার অধিকাংশের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের লাইসেন্সধারী কিছু ঔষুধের দোকানে লাইসেন্স রয়েছে। রুহিয়া থানার বিভিন্ন ফার্মেসী ঘুরে দেখা যায়-ঔষধ প্রশাসনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে অনেকেই ফার্মেসী দিয়ে বসে পড়েছেন ঔষধ বিক্রির জন্য।
শত-শত লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী সেখানে চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা। হাতুড়ে ডাক্তারদের ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ নিরীহ মানুষ। এ সব ফার্মেসীতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চ মাত্রার, নিষিদ্ধ বড়ি, ও নিম্নমানের নানা প্রকার ঔষধ বিক্রি করছে অবাধে। এতে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেক রোগী ও তাদের পরিবার-পরিজন।
ফলে এখানকার মানুষ প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে। আবার দেখা যায়, এলো প্যাথিক ঔষধের ফার্মেসিতে পশুর ঔষধ। এ দিকে লাইসেন্স বিহীন এলো প্যাথিক ঔষধের পাশাপাশি আবার পশু, দাঁত, আয়ুর্বেদী ও হোমিও প্যাথিক ঔষধের ফার্মেসী খুলে বসেছে অনেক  দোকানে। ইউনানী নামে হরমোন ও বিভিন্ন বোতলজাত ঔষধের মান ও দাম নিয়ন্ত্রণ নেই ।
ইচ্ছামত দাম লিখে বেশি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।আর এই ঔষধের নকল ও মানহীনে ভরপুর হয়ে গেছে রুহিয়া থানা এলাকার ঔষধ ফার্মেসী গুলোতে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি থেকে বাকিতে ঔষধ ক্রয়-বিক্রয় সুযোগ থাকায় অনেকটা অল্প পুঁজিতে এ ব্যবসা করতে পারছে ফার্মেসীগুলো। এ কারণে জনবহুল থানার বিভিন্ন এলাকাগুলোতে খুব সহজেই গড়ে উঠছে নতুন নতুন ফার্মেসী ।
ফার্মেসী পরিচালনার জন্য যে ন্যুনতম যোগ্যতা প্রয়োজন তাও আবার অধিকাংশের ফার্মেসীর মালিকদের নেই। অভিযোগ রয়েছে, এসব ফার্মেসীর অধিকাংশই ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রের বাইরে ঔষধ সরবারাহ দিয়ে থাকেন এবং রোগীদের বলে থাকেন একই গ্রুপের ঔষুধ ডাক্তার যেটা লিখেছেন তার চেয়েও ভালো। ফলে রোগীরা সরল বিশ্বাসে প্রতারণার শিকার হচ্ছে।
অনেকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে কোন ফার্মেসীতে রোলাক কিনতে চাইলে এক সঙ্গে রাখা কেটো রোলাক গছিয়ে দেওয়া হয়। খুচরা কিনতে চাইলে কেঁচি দিয়ে এমনভাবে কাঁটা হয় যাতে শুধু রোলাক লেখাটি চোখে পরে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষিত মানুষের পক্ষেও কারসাজি ধরা সম্ভব হচ্ছে না। ফার্মেসী কর্তাদের কারসাজিতে ৫ টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকায়। ফলে ঔষধের কোন কার্যকারিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
তথ্য নিয়ে জানা যায়, একজন প্রশিক্ষন প্রাপ্ত ফার্মাসিষ্ট দ্বারা একটি ফার্মেসী খোলা থেকে বন্ধ করার নিয়ম রয়েছে ড্রাগ লাইসেন্স করার আগে, ঔষধ বিক্রয় ও প্রদর্শনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকে অবশ্যই প্রশিক্ষন গ্রহণ করতে হবে। যদি কেউ ড্রাগ লাইসেন্স ও ফার্মাসিষ্ট প্রশিক্ষন ছাড়াই ঔষধ বিক্রি করে তাহলে ১৯৪২ ও ১৯৪৫ সালের ড্রাগ লাইসেন্স আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিধান রয়েছে।
কিন্তু রুহিয়া থানার বিভিন্ন হাট-বাজারের ঔষধের দোকানে তা মানা হচ্ছে না। যার জন্য অশিক্ষিত, প্রশিক্ষনহীন, ড্রাগ লাইসেন্স বিহীন ঔষধের দোকান দিন-দিন বেড়েই চলেছে। তবে রুহিয়া থানা এলাকার  সচেতন মহল মনে করেন, ঔষধের মানহীনের পাশাপাশি লাগামহীন দাম হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
সংসারে আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস ঔষধের পেছনে চলে যাচ্ছে। ভেজাল ও মানহীন ঔষধের দৌরাত্বে মানুষের জীবনী বিপন্নে আশংকার মধ্যে পড়েছে। মানুষের জীবন যেমন সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে তেমনি আর্থিক ভাবে ক্ষতিও হচ্ছে। যদি জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে থাকে তবে নকল ও ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ করা এখনই জরুরী।
মেয়াদোত্তীর্ণ, মানহীন-ভেজাল ঔষুধ যারাই উৎপাদন বা বিক্রি করুক তাদের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × five =