‘রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

0
665

হতাশ হওয়ার অনেক কারণ থাকলেও, নির্বাচন কমিশনের সক্রিয়তা ও সরকারের আন্তরিক সহযোগিতার ফলে আসন্ন রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন ‘সুজনÑসুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর নেতৃবৃন্দ। তারা আজ ২৫ জুলাই ২০১৮, সকাল ১১.০০টায়, জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সুজন’-এর উদ্যোগে ‘রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুজন-এর সভাপতি জনাব এম হাফিজউদ্দিন খান। এছাড়া সুজন নেতৃবৃন্দের মধ্যে ‘সুজন’ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ এবং সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি জনাব ক্যামেলিয়া চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘সুজন’ কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার। এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘আসন্ন তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ও সংশয় রয়েছে। এর কারণ হলো নির্বাচন কমিশন সবার জন্য সমান লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারছে না। দেখা যাচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এক্ষেত্রে কমিশন কারো বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। প্রয়োজনে কমিশনকে সরকারের কাছ থেকে সহায়তা চাইতে হবে। একইসঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য সরকারেরও সদিচ্ছা থাকতে হবে।’ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘২০১৮ সালে যে কয়টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সে নির্বাচনগুলোতে এক ধরনের নতুন প্রবণতা তৈরি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রের বাইরে তেমন সহিংসতা নেই, কিন্তু নির্বাচনটি হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত। মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখছে যে, তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে, কিছু কিছু কেন্দ্রে বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে ভোটের হার বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং যে প্রার্থী এক লাখ বা দুই লাখ ভোট পাচ্ছেন তিনি এজেন্ট দিতে পারছেন না। তার মানে কী? সরকারি দল নির্বাচনে আগ্রাসী আচরণ করছে?’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সংসদীয় পদ্ধতিতে, কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতিতে। এরফলে প্রার্থীদের গুণগত মান কমে যাচ্ছে, নির্বাচনে প্রার্থীদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাই পদ্ধতি সংস্কারের দিকেও আমাদেরকে নজর দিতে হবে। আমি আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ বিষয়গুলোতে নজর দিবেন।’ নির্বাচনী অঙ্গনকে কলুষমুক্ত রাখার জন্য প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত হলফনামা খতিয়ে দেখা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনকালে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘আগামী ৩০ জুলাই ২০১৮, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তফসিল অনুযায়ী গত ২৮ জুন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল; ১ ও ২ জুলাই মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই; ৯ জুলাই পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দ ১০ জুলাই ২০১৮ স¤পন্ন হয়েছে এবং পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে। তিনটি সিটি কর্পোরেশনের মোট প্রার্থী সংখ্যার দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, মেয়র পদে মোট ১৯ জন, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৩৮১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জন; সর্বমোট ৫৪৯ জন এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।’ তিনি লিখিত বক্তব্যে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনটি সিটি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সকল মেয়র, সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরার পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী যে সকল মেয়র প্রার্থী ২০০৮ ও ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিটি কর্পোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের আয়, স¤পদ, নিট স¤পদ ইত্যাদির হ্রাস-বৃদ্ধির চিত্রও উপস্থাপন করেন।
প্রার্থীদের শিক্ষাগত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তিন সিটি মিলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গ-ি না পেরুনো প্রার্থীর হার ৪৪.৭০% (৫৪৮ জনের মধ্যে ২৪৫ জন)। অপরদিকে উচ্চ শিক্ষিতের ২৪.২৭% (৫৪৮ জনের মধ্যে ১৩৩ জন)। তিন সিটির মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিতের হার বরিশালে (২৬.৪৭%) এবং স্বল্প শিক্ষিতের হার সিলেটে বেশী (৫১.৭৯%)। প্রার্থীদের পেশা সংক্রান্ত তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তিন সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ব্যবসায়ীদের হার ৫২.৩৭% (২৮৭ জন)। তিন সিটির মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যে, নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার হার বরিশালে সবচেয়ে বেশী (৫৮.৮০%) এবং রাজশাহীতে সবচেয়ে কম (৪৮.৩৮%)।’ প্রার্থীদের মামলা সংক্রান্ত তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তিন সিটিতে তুলনা করলে দেখা যায় যে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের মধ্যে মামলা সংশ্লিষ্টতার হার অধিক।’ প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৬২ জনের (৭৪.৬৫%) বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার কম। বিশ্লেষণে বলা যেতে পারে যে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চার পঞ্চমাংশেরও অধিক প্রার্থী স্বল্প আয়ের। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৮৩ জনের (৬১.০২%) বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার কম। বিশ্লেষণে বলা যেতে পারে যে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তিন চতুর্থাংশই স্বল্প আয়ের। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে তিনটি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১৯৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১১৩ জনের (৫৭.৯৪%) বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকার কম। বিশ্লেষণে বলা যেতে পারে যে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চার পঞ্চমাংশই স্বল্প আয়ের।’ প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের সম্পদের তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে মোট ২১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৩১ জনই (৬০.৩৬%) ৫ লক্ষ টাকার কম স¤পদের মালিক। অপরদিকে কোটিপতি রয়েছেন মাত্র ৪ জন (১.৮৪%)। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ১৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ৬৮ জনই (৫০.৫০%) ৫ লক্ষ টাকার কম স¤পদের মালিক। অপরদিকে কোটিপতি রয়েছেন মাত্র ১১ জন (৮.০৮%)। সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ১৯৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০৯ জনই (৫৫.৮৯%) ৫ লক্ষ টাকার কম স¤পদের মালিক। অপরদিকে কোটিপতি রয়েছেন মাত্র ১০ জন (৫.১২%)।’ তিনি বলেন, ‘প্রার্থীদের স¤পদের হিসাবের যে চিত্র উঠে এসেছে, তাকে কোনোভাবেই স¤পদের প্রকৃত চিত্র বলা যায় না। কেননা, প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই প্রতিটি স¤পদের মূল্য উল্লেখ করেন না, বিশেষ করে স্থাবর স¤পদের। আবার উল্লেখিত মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য না; এটা অর্জনকালীন মূল্য। বিষয়টি স¤পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেও আমরা হলফনামার ভিত্তিতে শুধুমাত্র মূল্যমান উল্লেখ করা স¤পদের হিসাব অনুযায়ী তথ্য তুলে ধরলাম। অধিকাংশ প্রার্থীর স¤পদের পরিমাণ প্রকৃত পক্ষে আরও বেশি। ছকটি পরিবর্তনের জন্য আমরা সুজন-এর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনেক আগেই প্রস্তাব দিয়েছি।’ প্রার্থীদের দায়-দেনা ও ঋণ সংক্রান্ত তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৫ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে কেউই ঋণ গ্রহীতা নন। সর্বমোট ২১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা মাত্র ১৭ জন (৭.৮৩%)। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে কেউই ঋণ গ্রহীতা নন। সর্বমোট ১৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা মাত্র ১৬ জন (১১.৭৬%)। তারা সকলেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ১ জন (১৪.২৮%) ঋণ গ্রহীতা। তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি পূবালী ব্যাংক লিঃ, সিলেট শাখা থেকে ১ কোটি ৯৩ লক্ষ ৮০ হাজার ৩০৩.০০ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সর্বমোট ১৯৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ঋণগ্রহীতার সংখ্যা মাত্র ১৩ জন (৬.৬৬%); এদের মধ্যে ২ জন (১৫.৩৮%) কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ করেছেন।’ প্রার্থীদের আয়কর সংক্রান্ত তথ্যের বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৫ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সকলেরই আয়কর বিবরণী পাওয়া গিয়েছে। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে করের আওতায় পড়েছেন মাত্র ২ জন (৪০%)। সর্বমোট ২১৭ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৪৬ জন (৩৩.৮২%) কর প্রদানকারী। এই ৪৬ জনের মধ্যে ২৬ জনই (৫৬.৫২%) কর প্রদান করেন ৫ হাজার টাকা বা তার কম কম। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনই (৮৫.৭১%) করের আওতায় পড়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সর্বশেষ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১১,৩৮,২৫৯ টাকা কর প্রদান করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ ইকবাল হোসেন। সর্বমোট ১৩৬ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৪৬ জন (২৭.১৮%) কর প্রদানকারী। এই ৫৯ জনের মধ্যে ৩০ জনই (৫০.৮৪%) কর প্রদান করেন ৫ হাজার টাকা বা তার কম কম। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৭ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনই (৮৫.৭১%) করের আওতায় পড়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সর্বশেষ অর্থ বছরে সর্বোচ্চ ৬,৬২,৭৩২ টাকা কর প্রদান করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। সর্বমোট ১৯৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৮৯ জন (৪৫.৬৪%) কর প্রদানকারী। এই ৮৯ জনের মধ্যে ৪৪ জনই (৪৯.৪৩%) কর প্রদান করেন ৫ হাজার টাকা বা তার কম কম। লক্ষাধিক টাকা কর প্রদানকারী ৯ জনের মধে ৬ জনই (৬৬.৬৬%) সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী। দিলীপ কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে একাধিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মেয়র প্রার্থী ও নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয়, স¤পদ ও নিট স¤পদের তুলনামূলক বিশ্লেষণও তুলে ধরেন। এছাড়া অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের সপক্ষে আওয়াজ তোলার জন্য তিনটি সিটি কর্পোরেশনেই সুজন যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে তার একটি বিবরণ তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি আও বলেন, ‘শুরু থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলেও আমরা লক্ষ করছি যে, নির্বাচনের মাঠ ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা সত্ত্বেও ফাক ফোকর গলিয়ে গ্রেফতার ও হয়রানি অভিযোগ উঠছে। প্রথম দিক থেকেই মামলা শুরু হয়েছে রাজশাহীতে। এখন সিলেটেও মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানি শুরু হয়েছে। রাজশাহীতে পথসভায় ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে এবং এ নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। সিলেটে নির্বাচনী ক্যা¤েপ আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং থানা থেকে আটককৃত কর্মীদের ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য জনৈক মেয়র প্রার্থীকে থানার সামনে অবস্থান নিতে দেখা গিয়েছে। বরিশালে নাশকতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে গোয়েন্দা বাহিনী। এই ঘটনাগুলো একদিকে যেমন ভোটারদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে, পাশাপাশি তারা অনেক ধরনের সন্দেহের দোলাচলেও রয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়গুলোও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলছে। ইতোমধ্যেই একজন সিটি মেয়র ও কয়েক জন সংসদ সদস্যকে আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামতে দেখা গিয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণায় দেখা গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, সিভিল সার্জন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারসহ অসংখ্য সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিকে। একটি সিটিতে প্রচারণায় নেমেছে নার্সেস এসোসিয়েশন। মিছিল নিষিদ্ধ হলেও প্রত্যেক সিটিতেই প্রথম থেকেই মিছিল করছেন প্রার্থীরা। এইসব আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যকর কোনো তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটারদের আস্থা নষ্ট হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের যে আস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তা কমিশন ধরে রাখতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনায় রাখতে হবে যে, কয়েক মাসের মধ্যেই আমাদের জাতীয় নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনই সম্ভবত সর্বশেষ বড় নির্বাচন। সঙ্গত কারণেই সারাদেশের সচেতন নাগরিকদের দৃষ্টি থাকবে এই নির্বাচনের দিকে। এই নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে স¤পন্ন হলে জনগণের কাছে একাদশ জাতীয় নির্বাচন স¤পর্কে ইতিবাচক বার্তা দেবে। অপরদিকে এই নির্বাচন যদি খুলনা ও গাজীপুরের মত প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে তা দেবে নেতিবাচক বার্তা।’পরিশেষে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সংক্রান্ত সব কিছুই কমিশনের কার্যকর নিয়ন্ত্রনে আনতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা না পাওয়া গেলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন কখনই সম্ভব হবে না। তাই বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করা উচিত নির্বাচন কমিশনের। যদি ইতিবাচক সাড়া পাওয়া না যায়, তবে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের দায় না নিয়ে, আগেই নির্বাচন আয়োজনে অপারগতা প্রকাশ করা উচিত কমিশনের।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

7 + 19 =