সম্পৃক্ততা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে শহিদুলের সাত দিনের রিমান্ড

0
882

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলমকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার আগে তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়। গতকাল রমনা থানায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তরের পরিদর্শক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

রোববার রাতে ধানমন্ডির বাসা থেকে আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নিজের সম্পৃক্ততা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালতে তাকে হাজির করা হয়। এসময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আরমান আলী। রিমান্ড আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, শহিদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এজন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, শহীদুল আলমের পক্ষে জামিন আবেদন করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও জোতির্ময় বড়ুয়া। উভয়পক্ষের আবেদন শুনানি শেষে শহিদুল আলমের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন নিয়ে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ও উস্কানি ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার ও নিজে পোস্ট দিয়ে, ফেসবুকে লাইভ করে আন্দোলনে উস্কানি দিয়েছেন। শহিদুল আলম এই সরকারকে অগণতান্ত্রিক, অনির্বাচিত সরকার দাবি করে প্রচার করেছেন, আন্দোলন দমনের নামে ছাত্রলীগ এখানে মানুষ হত্যা করছে। নারীদের লাঞ্ছিত করছে। শিশুদের জখম করা হচ্ছে। এভাবেই বিশেষ উদ্দেশ্যে কোমলমতি শিশুদের উস্কে দিতে চেষ্টা করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে এজাহারে এরকম নানা অভিযোগ করা হয় বলে জানান ডিসি মশিউর। বিকালে শহিদুল আলমকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় ডিবি ও থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গাড়ি থেকে নেমে এক পুলিশ সদস্যের কাঁধে হাত রেখে হাঁটতে দেখা গেছে শহিদুল আলমকে। এসময় ছাই রঙের পাঞ্জবি ও সাদা পায়জামা পরিহিত ছিলেন তিনি। শহিদুল আলমের স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে শহিদুলকে মারধর করা হয়েছে। মারধর করার একপর্যায়ে শহিদুল রক্তাক্ত হয়ে যায়। রক্ত তার পাঞ্জাবিতে লেগে গেলে তা ধুয়ে দেয়া হয়। পরে ওই পাঞ্জাবি ইস্ত্রি করে পরিয়ে আদালতে নিয়ে আসা হয় তাকে। রেহনুমা বলেন, আইসিটির ৫৭ ধারা একটি ভয়াবহ আইন। টার্গেট করে এই আইনে ফাঁসানো হয়। শহিদুলকেও টার্গেট করা হয়েছে। সে সত্য কথা বলে। সত্য বলতে কাউকে পরোয়া করে না এজন্যই তাকে গ্রেপ্তার করে এই আইনে মামলা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। রোববার রাতে বাসা থেকে সাদা পোশাকে আটকের পর থেকে পরদিন সোমবার সকাল পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাননি পরিবারের সদস্যরা। এ বিষয়ে সকালে ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে সংবাদ সম্মেলনে তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ বলেন, যারা শহিদুল আলমকে তুলে নিয়ে গেছে তারা অফিসিয়ালি আমায় কিছু বলেননি। কোনো তথ্যও দেয়া হয়নি। আমি জানতে চাই, তার কী অপরাধ? তিনি বলেন, যেকোনো নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়ার আইনি বৈধতা আছে। আর এর প্রয়োগ ঘটিয়েই তাকে তুলে নেয়া হয়েছে। তারা কাউকে কিছু বলছে না, জানাচ্ছে না। শহিদুল আলমকে আটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাতে দারোয়ানকে ডিবি পরিচয় দিয়ে ঢুকে বাড়ির সিসি ক্যামেরা স্কচটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখে তারা। দারোয়ানকে বেঁধে ফেলা হয়। তারপর শহিদুলকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই ডিবি অফিস থেকে ফোনে রেহনুমা আহমেদকে ডাকা হয়। ডিবি অফিসে গিয়েই জানতে পারেন শহিদুল ডিবির কাছে রয়েছেন। রেহনুমা আহমেদকে ডেকে ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শহিদুল আলম আইসিটি আইনে কিছু অফেন্স করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দেয়া হচ্ছে। এজন্য পেপার্স তৈরির কাজ চলছে। রেহনুমা আহমেদকে সিএমএম আদালতে যেতে পরামর্শ দেয়া হয়। উল্লেখ্য, ধানমন্ডির ৯ নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর বাসা থেকে রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আটক করা হয় শহিদুল আলমকে। ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ওবায়দুর রহমান জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শহিদুল আলমের মুক্তি ও শিক্ষার্থীদের  ওপর সহিংসতা বন্ধের দাবি অ্যামনেস্টির শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তার মুক্তি দাবি করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। একই সঙ্গে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান ছাত্র আন্দোলন থামাতে সরকারের সহিংস অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিবৃতিতে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পরিচালক ওমর ওয়ারাইচ বলেন, শহিদুল ইসলামকে অবিলম্বে শর্তহীন মুক্তি দিতে হবে। শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মত প্রকাশের জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করার কোনো ন্যায্য কারণ থাকতে পারে না। তাকে গ্রেপ্তার চলমান আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমনে সরকারের প্রচেষ্টার একটি অংশ। তিনি আরো বলেন, সরকারকে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা বন্ধ করতে হবে। যেকোনো ধরনের আন্দোলন ও নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার শিক্ষার্থীদের রয়েছে। তাদের এ অধিকারকে সম্মান জানাতে হবে। একইসঙ্গে, সরকারপন্থি ও পুলিশের শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলার কার্যকর তদন্ত করতে হবে। সরকারপন্থিদের হামলার সময় কেন পুলিশ তাদের থামালো না সেটা বের করে আনতে হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আটক শহিদুল আলম কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বাংলাদেশে চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার দেন। এতে তিনি এ অস্থিতিশীলতার জন্য বর্তমান সরকারকে দায়ী করেন। রোববার সাক্ষাৎকারটি প্রচার হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে আটক করে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four + sixteen =