ঢাকার ধামরাই উপজেলার ছয়টি গ্রামে অবৈধভাবে ২৪টি চুল্লি গড়ে উঠেছে। এগুলোতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা এবং পুরনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে। এসব চুল্লি থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া চারপাশে ছড়াচ্ছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। স্থানীয়রা উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধামরাই উপজেলায় দুই শতাধিক ইটভাটা রয়েছে।
এসব ইটভাটায় প্রতিদিন শত শত টন কয়লার প্রয়োজন হয়। এসব ভাটায় সরবরাহের জন্য স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ফসলি জমি, লেবু ও বাঁশবাগানের ভেতর চুল্লি নির্মাণ করেছে। বাইশাকান্দা, বালিয়া ও যাদবপুর ইউনিয়নে আরো পাঁচটি অবৈধ চুল্লি গড়ে উঠছে। এসব চুল্লিতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা হাজার হাজার টন কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন এলাকার বনজ সম্পদ উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে কালো ধোঁয়ায় পরিবেশদূষণ হচ্ছে। গতকাল রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাস্তা গ্রামের বংশী নদী ঘেঁষে লেবুবাগানের ভেতর চারটি চুল্লি ও বনেরচর রাস্তার পাশে বাঁশবাগানের ভেতর ছয়টি চুল্লি তৈরি করা হয়েছে। শত শত টন কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে কয়লা। স্থানীয় খালেক ও আব্দুল মজিদ জানান, প্রায় দেড় বছর আগে উত্তর বাস্তা গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে ইমরান হোসেন উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ অবৈধ চুল্লি গড়ে তোলেন। এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় স্থানীয় গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অনেকে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের রঘুনাথপুর গ্রামের সদস্য ফারুক হোসেনের মালিকানাধীন কাঠবাগানের পাশে ছয়টি চুল্লি। এগুলোতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা হচ্ছে। এতে চারপাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া চুল্লির পাশে টিনের বেষ্টনীর মধ্যে পুরনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে। চুল্লির শ্রমিক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন পুরনো ব্যাটারি পুড়িয়ে প্রায় এক থেকে দেড় টন সিসা তৈরি করা হয়। এ সময় প্রচুর ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এই ধোঁয়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।’ চুল্লির মালিক ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমার কোনো কিছুর অনুমতি লাগে না। এ ছাড়া আমার চুল্লিতে কেউ আসতে পারবে না। যদি কেউ আসে বিশেষ করে সাংবাদিকদের শেষ করে ফেলব।’ ধামরাই সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আলম বলেন, ‘সিসা মানবদেহে স্নায়ুতন্ত্র ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যান্সার সৃষ্টি করে।’ বাইশাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এসব কারখানার কারণে এলাকার পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে গেছে। অনেক গরু বাছুর মারা গেছে। বয়স্ক ও শিশুদের শ্বাসকষ্ট হয়েছে। এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’ বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আহম্মদ হোসেন বলেন, ‘এসব অবৈধ কারখানা দ্রুত বন্ধ না করলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে।’ ধামরাইয়ের ইউএনও আবুল কালাম বলেন, ‘কাঠ পুড়িয়ে কয়লা ও ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কোনো কারখানাকেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। খুব শিগগির এসব কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’