এ দামে চামড়া পাওয়া নিয়ে এক ধরনের ভয়ের মধ্যে রয়েছে চামড়া ব্যবসায়ীরা

0
998

চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি বর্গফুটে প্রায় ১০ টাকা কমেছে। এ দামে চামড়া পাওয়া নিয়ে এক ধরনের ভয়ের মধ্যে রয়েছে রংপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছে তারা। ধারণা করা হচ্ছে, গত বছর রংপুর জেলায় প্রায় দুই লাখ পশুর চামড়া কেনাবেচা হলেও এবার তা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। এ ছাড়া এবার ট্যানারির সংখ্যাও কম।

এদিকে উত্তরাঞ্চলের তিন শতাধিক ব্যবসায়ীর প্রায় ২০০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন ট্যানারিতে। ‘শিহাব এন্টারপ্রাইজ’-এর মালিক ও চামড়া ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদে পুঁজির অভাবে চামড়া কিনতে পারিনি। এবারের ঈদে দুই হাজার পিস চামড়া কেনার ইচ্ছা আছে। কিন্তু হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের কারণে ১৫৪টি ট্যানারির মধ্যে সাভারে চালু হয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১২টি। ফলে চাহিদা না থাকায় চামড়ার টাকা দীর্ঘদিনের জন্য আটকে যেতে পারে অথবা লোকসানও হতে পারে। তাই চামড়া কিনব কি না, তা নিয়ে দোটানায় আছি।’ তিনি জানান, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার ব্যবসায়ীরা টাকার অভাবে এবার দুই হাজার চামড়াও কিনতে পারবে না। অন্যদিকে এ পেশায় জড়িত লক্ষাধিক ফড়িয়াও রয়েছে বিপাকে। একদিকে বকেয়া টাকা না পাওয়া, অন্যদিকে গরুর চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে কম নির্ধারণ করায় চামড়া ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানায়, রংপুরে ৫০ ব্যবসায়ীর সাত কোটি, দিনাজপুরের ৩০ জনের পাঁচ কোটি, বগুড়ার অর্ধশত ব্যবসায়ীর ১২ কোটি, নওগাঁর ৩০ জন ব্যবসায়ীর ১০ কোটি, নাটোরের অর্ধশত ব্যবসায়ীর ১৪ কোটি, রাজশাহীর ২৫ জন ব্যবসায়ীর ১২ কোটি টাকা ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া হিসেবে পড়ে রয়েছে। এ টাকা তারা গত কয়েক বছর থেকে ধরনা দিয়েও তুলতে পারেনি। ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুল মোমিন জানান, গত কোরবানি ঈদে নগরী ঘুরে ৬০টি গরুর কাঁচা চামড়া ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে তিনি আড়তে দিয়েছিলেন। এতে তাঁর লাভ হয়েছিল ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। কিন্তু এ বছর চামড়াপট্টিতে এখন পর্যন্ত তিনি চামড়া সংগ্রহের কোনো উদ্যোগ দেখছেন না। ব্যবসায়ী সাহেব আলী, সবুর মিয়া, মোসাদ্দেক আলী, আনছার আলী, রাজা মিয়া, শহিদার রহমান, কালু মিয়া, রাসেল করিম জানান, তাঁরা বংশপরম্পরায় পশুর চামড়ার ব্যবসা করে আসছিলেন। কিন্তু বর্তমান পশুর চামড়ার ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অনেকেই ব্যবসা পরিবর্তনের চিন্তা করছেন। একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, চামড়া সংগ্রহের জন্য অন্যতম উপাদান লবণের দামও ঈদ এলে বেড়ে যায়। গত কোরবানির ঈদে এক বস্তা লবণের দাম ছিল ১২০০ টাকা। এ বছর হয়েছে ১৫০০ টাকা। রংপুর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ খান ও সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী জানান, গত কোরবানির ঈদে পাঁচ হাজার চামড়া কিনেছিলেন। প্রতি বর্গফুট চামড়া ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেনা পড়লেও ট্যানারি মালিকরা ৬০ থেকে ৭০ টাকার বেশি দেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে লোকসানে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 5 =