স্মরণকালের ভোগান্তি দিয়ে শুরু হলো এবারের ঈদযাত্রা

0
569

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ৭ ঘণ্টা বন্ধ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও যানজট। ধীর গতিতে চলছে গাড়ি। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং মাওয়া ফেরিঘাটেও অচলাবস্থা। সব মিলিয়ে স্মরণকালের ভোগান্তি দিয়ে শুরু হলো এবারের ঈদযাত্রা। সড়কপথের এ দুরবস্থার মধ্যেও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে, সহনীয় হবে ভোগান্তি।

ভুক্তভোগি কয়েকজন যাত্রী জানান, গতকাল সকাল থেকে দেশের প্রধান তিনটি মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন যেমন ঢাকায় প্রবেশ করতে পারেনি, তেমনি ঢাকা থেকেও যানবাহন বের হতে পারেনি। এতে করে রাজধানী কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছিল। মহাখালী বাস টার্মিনাল বাস মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আবুল কালাম  বলেন, গাজীপুরে গার্মেন্টসকর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখার কারণে সারাদিন কোনো গাড়িই চলেনি। বিকালের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, ঈদ আসতে না আসতেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যেভাবে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে তাতে এবার ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বাড়বে বলে ধারণা করছি। এক সপ্তাহ ধরেই দেশের প্রধান এই মহাসড়কে যানজটে আটকা পড়ে যাত্রীরা সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভার পর্যন্ত ভয়াবহ যানজট লেগেই থাকে। তার উপর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা এবারও দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদেরকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে বলে জানান গাবতলী বাস টার্মিনালের বাস ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের এক নেতা। এ ছাড়া, মাওয়া ফেরিঘাটেও এবার ফেরি পারাপারের সময় বিভিন্ন জটিলতায় যানজট আর ভোগান্তি ঘরমুখো যাত্রীদের পিছু ছাড়ছে না। ভুক্তভোগিদের মতে, ঢাকা থেকে বের হওয়া বা ঢাকায় প্রবেশকালের ভোগান্তি ছাড়াও সারদেশের ভাঙাচোরা মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের এবার সীহামীন কষ্ট দিবে তা এখনই আঁচ করা যাচ্ছে। গতকাল প্রথম দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মহাখালী থেকে শেরপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা তরিকুল নামে একজন যাত্রী বলেন, প্রথম দিনেই এই অবস্থা, তাতে এবারের ভোগান্তি অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে। স্মরণকালের ভোগান্তি পোহাতে হবে এবার।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে টানা যানজট

চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে মুন্সী কামাল আতুতর্ক মিসেল জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গত কয়েক দিনের টানা দীর্ঘ যানজটে ঈদে ঘরমুখো যাত্রেিদর চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। একই সাথে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে প্রায় স্থবির করে দিয়েছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে এখন ঢাকা থেকে কুমিল্লার ৯৭ কিলোমিটার সড়কে ঘন্টায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এ মারাত্মক যানজট অব্যাহত থাকলেও তা নিরসনের কোন উদ্যোগই নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। নিশ্চুপ বসে আছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর সেতু থেকে মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত যানজট দীর্ঘায়িত হচ্ছে প্রতিদিনই। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কখনও কখনও যানজট কমছে, আবার বাড়ছেও। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে দুর্ভোগ চলছে-চলবেই ! প্রতিদিন যাত্রীরা যানজটের দুর্ভোগের গর্তে পড়ে হাসফাস করেন। সকালে ঢাকা থেকে রওনা দিলে কখনও পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা নামে। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় ২ ঘন্টায় যাওয়া যায় এ কথাটি এখন যাত্রীরা ভুলতে বসেছেন। যাত্রীরা বাসে চড়েন নিজের ইচ্ছায়-নামতে হয় রাস্তার ইচ্ছায়। বেশ কিছু দিন ধরে কুমিল্লায় যানজট কখনো ৬ ঘন্টা, কখনো ৮ ঘন্টা আবার ১০ ঘন্টা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যানজট লাগছে ৪০ কিংবা ৬০ কিলোমিটার জুড়ে। অথচ যানবাহন নিরাপদ ও নির্বিঘেœ চলাচলের লক্ষ্যে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ৬টি হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু হাইওয়ে পুলিশ রাস্তার পাশে এবং ওপরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা গাড়ি পার্কিং, হাটবাজার অবৈধ স্ট্যান্ড, এলোপাতাড়িভাবে গাড়ি রেখে যাত্রী উঠানো-নামানো বন্ধ করতে পারেনি। প্রায় প্রতিদিনই দাউদকান্দির শহীদনগর, গৌরীপুর, রায়পুর, চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর, মাধাইয়া, বাগুর, কাঠেরপুল, হাড়িখোলা, বুড়িচংয়ের নিমসার, কালাকচুয়া মহাসড়কের পাশে হাটবাজার ও রিক্সা-গাড়ির স্ট্যান্ড গড়ে তোলা এবং ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতিতে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট লেগেই থাকছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ২৫০ কিলোমিটার দূরত্ব যেখানে পাঁচ ঘণ্টায় অতিক্রম করার কথা সেখানে বর্তমানে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। ছোট বড় গর্ত ও খানাখন্দকে পড়ে প্রতিদিনই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য যানবাহন। আটকে পড়া যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। পুরো মহাসড়কের কোথাও উঠে গেছে, কোথাও দেবে গেছে। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দক। এদিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযোগ সড়ক ঢাকা-সিলেট দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে। মাত্র ২০ মিনিটের রাস্তায় সময় লাগছে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। দিনভর ঢাকা-চট্রগ্রামে মহাসড়কে যানজট থাকায় মহাসড়কের সাথে সংযোগ সড়কটি দিয়ে গাড়ী মহাসড়কে উঠতে পারছেন না। অপরদিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় থেমে থেমে বাস চলাচলে কারনে প্রধান সড়কের সাথে সংযোগ সড়ক গৌরীপুর-হোমনা সড়ক, গৌরীপুর-মতলব সড়ক এবং আমিরাবাদ-কচুয়া সড়কেও দীনভর যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। দেশের প্রধান মহাসড়কটির এই অবস্থা হলেও এ নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। গতকাল শুক্রবার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে যাজনট সোনারগাঁ থেকে দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ঢাকামুখী যানজট ছিল। গত বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত কুমিল্লার গৌরীপুর থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত প্রায় ৫২ কিলোমিটার সড়কে যানজট ছিল। রাতের দিকে তা কমে পাঁচ কিলোমিটারে নেমে আসে। গতকাল শুক্রবার রাত তিনটা থেকে আবার যানজট শুরু হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পুলিশ জানায়, রাত তিনটার দিকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ভবেরচরে ঢাকাগামী একটি রডবাহী ট্রাকের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকটি মহাসড়কে উল্টে যায়। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাকটি সরিয়ে নেয়। দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় এ যানজটের সৃষ্টি হয়। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে। যানজট প্রসঙ্গে তিতাস উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা তানিয়া ফেরদৌস জানান, ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বাসে উঠে নারায়ণগঞ্জ চৌরাস্তার মোড়ে যানজটে আটকা পড়েন তিনি। দাউদকান্দি মেঘনা গোমতী সেতু এলাকা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার পথ পেরুতে তাঁর চার ঘণ্টা সময় লেগেছে। দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী মনির হোসেন বলেন, ভোর সাড়ে চারটায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে এক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে তাঁর পাঁচ ঘণ্টা লেগেছে। সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকামুখী ও চট্টগ্রাম উভয়দিকেই যানজট তীব্র আকার ধারন করছে। গত কয়েক দিনের দীর্ঘ এ যানজটে আটকা পড়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা গেছে চান্দিনার কাদুটি গ্রামের ১ জন রোগী। প্রসূতি মাকে হাসপাতালে নেয়ার পথেই ঘটেছে সন্তান প্রসবের ঘটনা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকাসহ সারাদেশে কাঁচামাল ও পণ্য সামগ্রী ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পারায় বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানার উৎপাদন। বেড়ে গেছে ভোগ্য পণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম। আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাক ভাড়া যা ছিল ৭ হাজার টাকা অবস্থার কারণে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকায়। ঢাকা থেকে পাঠানো রফতানি পণ্য ঠিকমত চট্টগ্রাম না পৌঁছায় গার্মেন্টসসহ বহু রফতানি চালানের শিপমেন্ট ও অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে।

৭ ঘণ্টা বন্ধ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক

এদিকে, গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় বেতনের দাবিতে সাত ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে তিনটি কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখে তারা। পরে গাজীপুরের নবনির্বাচিত সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় আগামী রোববার আগস্ট মাসের ১০ দিনের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়। দীর্ঘ সময় অবরোধের কারণে ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীসহ ওই মহাসড়কের চলাচলকারীদের চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল থেকেই দাবি আদায়ের জন্য কয়েক হাজার গার্মেন্টস শ্রমিক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হোতাপাড়া এলাকায় লাঠিসোঠা নিয়ে অবস্থান করে। অবরোধের কবলে সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক স্থবির হয়ে পড়ে। এসময় গাজীপুরের সদর উপজেলার সালনা থেকে শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী পর্যন্ত ২৩কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে ভোরে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৮টি জেলা থেকে রওনা করা দুরপাল্লার বাসগুলো সব মহাসড়কে আটকা পড়ে। বাসগুলো ঢাকায় আসতে না পারায় মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাসই সময়মতো ছাড়তে পারেনি। ভোর থেকে হাজার হাজার ঘরমুখি যাত্রীকে মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে অপেক্ষা করতে হয়েছে। রংপুরের যাত্রী বেলায়েত হোসেন বলেন, ভেবেছিলাম ঈদের ৬দিন আগে রওনা করে একটু আরামেই যাবো। এজন্য বহু কষ্টে ১৭ তারিখের টিকিট কিনেছিলাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ। প্রথম দিনেই ভোগান্তিতে পড়তে হলো। তিনি বলেন, সকাল ৯টায় বাস ছাড়ার কথা ছিল। সেই বাস টার্মিনালে এসেছে অনেক পরে। বিকালের পর বাস ছেড়েছে। পথিমধ্যে কতো ঘণ্টা লাগবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ভোগান্তি

অন্যদিকে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ-রুটে যানবাহনের বাড়তি চাপ আর তীব্র স্রোতে ফেরির ট্রিপ কমে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে। প্রস্তুতি হিসেবে ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হলেও কোরবানির পশুবাহী ট্রাক পারাপার বেড়ে যাওয়ায় যানবাহনগুলোকে ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌ-রুটে ঘরমুখো যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যাত্রী ও বাস চালকরা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে কয়েকদিন ধরে পারাপারে তাদের বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ফেরি পারের অপেক্ষায় পাটুরিয়া ঘাটে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা এবং দৌলতদিয়া ঘাটে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। ভুক্তভোগিরা জানান, পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনে কিছুটা শৃঙ্খলা থাকলেও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দৌলতদিয়া ঘাটে। বাস, গরুর ট্রাকসহ সব যানবাহনকে একই লাইনে ফেরি পারের অপেক্ষায় থাকতে হয় বলে সময় বেশি লাগছে। এতে করে গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া দুরপাল্লার বাসগুলোর যাত্রী সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ছে। ভুক্তভোগিদের মতে, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দিনে যাত্রীর চাপে পুরো ফেরিঘাট অচল হগয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাতে ঈদযাত্রায় কি অবস্থা হয় কে জানে।

শিমুলিয়া ফেরিঘাটে থমকে যাচ্ছে গাড়ির চাকা

এদিকে, ঢাকা থেকে মাওয়া। এরপর ফেরি পার হয়ে মাদারীপুর, বরিশাল, খুলনা বা গোপালগঞ্জমুখী হয় দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহন। তবে সীমিতসংখ্যক ফেরি, নৌ-চ্যানেলে নাব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে এসব যানবাহনের ফেরি পারাপার। এতে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ঘাটে দীর্ঘ হচ্ছে অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের সারি। গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় মাওয়ার শিমুলিয়ার ৩ নম্বর ঘাটে মিনিট্রাক নিয়ে আসেন মেঃ ফোরকান। যাবেন বরিশালে। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকেও পার হতে পারেননি তিনি। তবে বেলা ১টা পর্যন্ত বাস, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়ির আরোহীরা তুলনামূলক স্বস্তিতে ছিল। ৩-৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করেই পার হয়ে যেতে পারছিল। বেলা ১টার পর থেকে ঘাটে দক্ষিণাঞ্চলমুখী গাড়ির চাপ বাড়তে শুরু করায় আরো দীর্ঘ হয়েছে অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের সারি। স্থানীয় সূত্র জানায়, সময়মতো ফেরি না পেয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ঈদে ঘরমুখো মানুষ। খুলনার যাত্রী ইকবাল হোসেন বলেন, ফেরি পার হতে যেন সমস্যা না হয়, সেজন্য ভোর ৫টার বাসে রওনা হয়েছি। ঘাটেও এসেছি সকাল ৮টার মধ্যে। এখন বাজে ১২টা। জানি না, কখন পার হতে পারব। প্রতিবারই ঈদের সময় ফেরিঘাটে এসে এ রকম ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানান তিনি।

তবুও আশাবাদী মন্ত্রী!

এবার ঈদে সড়কে মানুষের ভোগান্তি গতবারের কম হবে বলে আশা করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ঈদযাত্রার প্রথম দিন গতকাল শুক্রবার ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, এবারের ঈদে প্রধানমন্ত্রী ২৩টি সেতু উদ্ভোধন করার পর ঢাকা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা এবার স্বস্তিদায়ক হবে, সহনীয় হবে ভোগান্তি। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনী রেল ওভারপাস গত ঈদে কিছুটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটাও এবার খুলে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অন্যান্য সমস্যাও সমাধান করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে। সব মিলিয়ে গত ঈদের চেয়ে এবারে ঈদ স্বস্তিদায়ক হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × one =