পাহাড় ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত এখন

0
772

আজ পবিত্র হজ। ইয়াওমুল আরাফা। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি মাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক…মধুধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে পবিত্র আরাফাতের পাহাড় ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত এখন।

তালবিয়ায় মহান আল্লাহ তায়ালার একত্ব ও মহত্ত্বের কথা বিঘোষিত হচ্ছে প্রতি অনুক্ষণ। ‘আমি হাজির। ও আল্লাহ! আমি হাজির। তোমার কোন শরিক নেই। সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধুই তোমার। সাম্রাজ্য তোমার। তোমার কোন শরিক নেই।’শুরু হলো বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন পবিত্র হজ। আজ সোমবার (২০ আগস্ট) ফজরের পর গোটা দুনিয়া থেকে আগত প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মুসলমান হজযাত্রী ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন। এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকবেন তারা। সৌদি সময় দুপুর ১২টার পর আরাফাতের ময়দানের মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা পাঠ করবেন মদিনা মসজিদে নববির ইমাম ও খতিব, মদিনা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি শায়খ ড. হোসাইন বিন আব্দুল আজিজ আল শাইখ। একই সাথে এই খুতবার মূল পয়গাম যেন গোটা দুনিয়ার মানুষ সরাসরি শুনতে পারে সেজন্য সৌদি সরকার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আজ খুতবা পাঠ শেষে জোহর ও আসরের ওয়াক্তের মাঝামাঝি সময়ে হাজীরা জামায়াতের সাথে কসর নামাজ আদায় করবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে অবস্থন করে মহান আল্লাহ তাআলার জিকির ও ইবাদতে মশগুল থাকবেন। অত:পর মুযদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন এবং মুযদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামায এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সমস্ত রাত খোলা প্রান্তরে অবস্থান করবেন। মীনায় জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুযদালিফায় ফজরের নামায পড়ে মীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। ১০ জিলহজ্ব মিনায় পৌঁছার পর হাজীদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডান দিকে রেখে হাজীরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। অনেকেই মিনায় না পারলে মক্কায় ফিরে গিয়ে পশু কোরবানি দেন। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত। হাজীরা মক্কায় ফিরে কাবা শরীফ তাওয়াফ ও সাঈ (কাবার চারদিকে সাতবার ঘোরা ও সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সাতবার দৌঁড়ানো) করে আবার মিনায় ফিরে যাবেন। জিলহজ্বের ১১ তারিখ মিনায় রাত যাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হাজীরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের উপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আর এ কাজটি করার সুন্নত। পরদিন ১২ জিলহজ্ব মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজীরা তিনটি শয়তানের উপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। আর মক্কায় পৌঁছার পর হাজীদের একটি কাজ অবশিষ্ট থাকে। সেটি হচ্ছে কাবা শরীফ তাওয়াফ করা। একে বলে বিদায়ী তাওয়াফ। স্থানীয়রা ছাড়া বিদায়ী তাওয়াফ অর্থাত্ কাবা শরীফে পুনরায় সাতবার চক্কর দেয়ার মাধ্যমে হাজীরা সম্পন্ন করবেন পবিত্র হজ্বব্রত পালন। উল্লেখ্য, পবিত্র হজ উপলক্ষে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা ও এর আশ-পাশের এলাকায় ১০ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। সঙ্গে কাজ করছে ১৬ হাজার গাইড।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

9 − 2 =