অনলাইনে বাজার জেলে-কৃষকের সুদিন

0
902

আইটি ডেস্ক ঃ
খবরাখবর আদান প্রদানের মধ্যদিয়ে কমে এসেছে দুর্যোগের ঝুঁকি। প্রান্তিকের গ্রামের কৃষকেরা জেলা-উপজেলা কিংবা রাজধানীর বাজার যাচাই করে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামের চিত্র। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কৃষকদের নানান বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়। ফসলের জাত নির্বাচন থেকে রোগবালাই দমন, আগাছা নিধন ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়। বেশকিছু স্থানে কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি সহায়তা নিতে কৃষকদের এখন আর কৃষি অফিসের দুয়ারে গিয়ে দিনের পর দিন ধর্না দিতে হয় না। সেবা চলে আসে মাঠে। কোন কোন এলাকার কৃষকেরা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার কিংবা অন্য কোন স্থান থেকে অনলাইনে সেবা চাইলে কৃষি অফিস থেকে দেয়া হয়। ভালো ফলনের আশায় কৃষকেরা ফসলের জাত নির্বাচন, রোগবালাই দমন, নিড়ানি, ওষুধ প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ চান। অনেকেই অনলাইন সেবায় ভালো ফলও পেয়েছেন।

সয়াল্যান্ড হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা সয়াবিন চাষে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। সম্প্রতি সয়াবিন চাষে জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তারা লাভবান হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। কমলনগরের চর লরেন্সের মো. মামুনের বাবা নজির আহমেদ বেশ কয়েক বছর ধরে সয়াবিন চাষ করছেন। শুরু থেকেই ফলন বাড়ানোর নানান উপায় খুঁজেছেন তিনি। একবার তার ছেলে তাকে আধুনিক পদ্ধতিতে সয়াবিন চাষের কলাকৌশল দেখালে নজির আহমেদ নিজের অভিজ্ঞতার সংমিশ্রনে ৪০ শতক জমিতে সয়াবিন চাষ করেন। অল্প সময়ে তার অধিক ফলন এসেছে। আগে রবি মৌসুমে সয়াবিন হলেও এখন খরিপ মৌসুমেও এ ফসল আবাদের কলাকৌশল কৃষকেরা আয়ত্ব করেছেন। এ কাজে সহায়তা করেছে তথ্যপ্রযুক্তি। সয়াবিন ছাড়াও অন্যান্য ফসলের জাত নির্বাচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। ডিজিটাল সেন্টারে যারা তথ্যসেবা নিতে আসেন, তাদের মধ্যে কৃষকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তরমুজ, মরিচ, ধান, সয়াবিনসহ বিভিন্ন ফসলের রোগবালাই দমনের উপায় খুঁজতে কৃষকেরা আসেন। তথ্য পেয়ে এদের অনেকেই উপকৃত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। কৃষি সেবার জন্য কৃষি ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকেই যোগাযোগ করে তথ্য নিচ্ছেন।
সূত্র বলছে, শুধু ফসলের বিষয়ে নয়, জমির পর্চা ওঠানোর ক্ষেত্রেও কৃষকেরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিচ্ছেন। অফিসে গিয়ে কাগজ তুলতে যেখানে ৪-৫শ’ কিংবা কখনো আরও বেশি টাকা লাগতো, তখন অল্প খরচে মাত্র ৪০-৪৫ টাকায় জমির পর্চা তুলতে পারছেন কৃষকেরা। নোয়াখালীর চরবাটা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, কমলনগরের ফলকন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে এমন অনেক কৃষকের দেখা পাই, যারা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে জমির কাগজপত্র তুলেছেন। ফসলের ভালো দাম পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনলাইনের সহায়তা নেন কৃষকেরা। কৃষি পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন স্থানের বাজার যাচাই করতে পারেন মোবাইলের মাধ্যমে। মরিচ, পেঁয়াজ, আলু, বাদাম, সয়াবিনসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের ভালো ফল দিয়েছে। এখান থেকে বিভিন্ন কৃষিপণ্য মোবাইলে ঠিক করে বাজারে পাঠানো হয়। লক্ষ্মীপুর জেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে কৃষিসেবা এখন সহজ হয়েছে। অতি সহজেই তারা কৃষি বিষয়ক সব সমস্যার সামাধান পাচ্ছেন। কৃষকদের জন্য রয়েছে কৃষি কল সেন্টার। এখানে কল দিলে ফসলের জাত নির্বাচন, রোগবালাইসহ বিভিন্ন বিষয়ে তারা তথ্য জানতে পারেন। ছোটখাট সমস্যায় অনেকেই এখন এ সেবা নিচ্ছেন। চাষাবাদের ফাঁকে শেষ খবরটা জানতে ইচ্ছা করলে মোবাইলে বাটন টিপে অনলাইনে চোখ বুলিয়ে নেন পটুয়াখালীর চরমোন্তাজের এক কৃষক। বললেন, খবর জানতে অনলাইন দেখি। বাজেটে চাষির ভাগ্যে কী জুটেছে, ঝড়ের গতিবেগ কোনদিকে ধাবিত হচ্ছে, এমন সব তথ্য এই চাষির হাতে মুঠোয়। কোন বাজারে কী দরে পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তা-ও জানা যায় মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে। তার মত আরও বহু কৃষক-জেলের দেখা মেলে উপকূলের বিচ্ছিন্ন জনপদে, যারা অনলাইনে ভরসা রাখেন। নিজের মোবাইল থেকে অনলাইনে ঢুকে শেষ খবরটা জেনে নেন। তারা বলছিলেন, তথ্য তাদের জীবন আরও সাচ্ছন্দ্য করে তুলেছে। সব খবর তারা অনলাইনেই পান। ফলে তাদের জীবন অনেকটাই সহজ হয়েছে। ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন ঢালচরের চেয়ারম্যান বলেন, এক সময় তো মনে হতো আমরা দুর্গম দ্বীপে বসবাস করছি। ভৌগোলিকভাবে এখনও দুর্গম দ্বীপেই আছি। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে সংকট অনেকখানি কমে এসেছে। প্রায় সব পরিবারের জন্যই মোবাইল এখন অপরিহার্য। মোবাইলে তারা যে শুধু স্বজনের খবর নেন তা নয়, এর মাধ্যমে কৃষক, জেলেসহ সব পেশার মানুষ নিজ নিজ তথ্য জানতে পারেন। তিনি আরো বলেন, বর্ষায় ইলিশ ধরার মৌসুমে ঢালচরে অন্তত ১০ হাজার মাছধরার ট্রলার ভেড়ে। মাছ নিয়ে তারা এখানে আসে। সেই মাছ এখানে বরফজাত হয়ে বিভিন্ন স্থানে যায়। মাছ বরফজাত করে বিভিন্ন স্থানে সুষ্ঠুভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির বিরাট ভূমিকা রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে মাছ চাষ ও মাছ ব্যবসায়ও। অনেকে ইউটিউব থেকে আধুনিক মাছ চাষের কলাকৌশল দেখে মাছ চাষ করছেন। এতে তারা ভালো ফল পাচ্ছেন। উৎপাদন বেড়েছে, আয় বেড়েছে। নদী-সমুদ্রে মাছ ধরারত জেলেদের অনেকে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইনে সম্পৃক্ত। ফলে যেকোন খবর তার কাছে পৌঁছাচ্ছে অনেক সহজেই। দুর্যোগের খবর পেলে অতিদ্রুত কিনারে আসতে পারছেন। আবার মাছের বাজার দরের বিষয়েও অনলাইনে খোঁজ নিতে পারছেন। এভাবে মাছ ব্যবসায়ীরাও বিভিন্ন বাজারের খোঁজখবর নিয়ে সেখানে মাছ পাঠাচ্ছেন। জানা গেছে, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উপকূলের স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতেও তথ্যপ্রযুক্তির সেবা নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। আগে টাকা পাঠাতে ভোগান্তি পোহাতে হতো। এখন ভোগান্তি অনেকখানি কমেছে। মুহূর্তেই স্বজনরা টাকা পাঠাতে পারেন বাড়িতে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

12 − 7 =