বর্তমান বিশ্বে অবকাঠামোগত উন্নয়নে যে দেশ যত বেশি উন্নত সে দেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঠিক ততটাই এগিয়ে যাচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়নের মধ্যমে একটি দেশকে পিছনে ফেলে অন্য একটি দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সাফল্যের পথে। বিশ্বে যে কয়টি দেশ আজ উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছেছে তারা অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর ভিত্তি করেই পৌঁছেছে।
অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে দুর্নিবার গতিতে। দেশের সকল স্তরের মানুষের যাতে উন্নয়ন হয় সেজন্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। দেশে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে কমছে দারিদ্যসীমার হার। বিশ্ব যে দেশকে এক সময় ক্ষুধা, দারিদ্রপীড়িত অনুন্নত দেশ হিসেবে জানত আজ তারাই বাহবা দিচ্ছে দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য। দেশ আজ ধাবিত হচ্ছে ‘রূপকল্প-২১’ ও ‘রূপকল্প-৪১’ বাস্তবায়নের দিকে। রূপকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ যুক্ত হবে স্থায়ী উন্নত দেশের কাতারে।
দেশে আজ উন্নয়ন হচ্ছে জনগণের জীবনমানের কথা চিন্তা করে। জনগণের উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন সাধিত হয়। দেশের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য নেয়া হয়েছে নানা রকম পদক্ষেপ। নির্মাণ করা হয়েছে উড়াল সড়ক। রাজধানী ও রাজধানীর বাহিরে গুরুত্বপূর্ণ জনপদ চিহ্নিত করে নির্মাণ করা হয়েছে উড়াল সড়ক। যাতে অতি মূল্যবান সময় যানজটের কবল থেকে রক্ষা পায়। দেশের মানুষকে যানজটের কবল থেকে মুক্তি দিতে নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জনপথে মানুষের পদচারণা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের সড়ক মহাসড়কে চাপ কমাতে উন্নত করা হচ্ছে রেলওয়েকে। গুরুত্বপূর্ণ রেললাইন ডাবল লাইন এ উন্নীত করা হচ্ছে। এর ফলে দুটি ট্রেন পাশাপাশি চলাচলের ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না। যাত্রী সাধারণের মূল্যবান সময় বাঁচবে। এছাড়াও যাত্রী সাধারণ সড়ক পথের তুলনায় রেলপথকে অনেক বেশি নিরাপদ এবং সময় সাশ্রয়ী মনে করে বলে সরকার যোগাযোগ খাতকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে।
দেশের বহুল আলোচিত ও কাঙ্খিত পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে দেশের নিজস্ব অর্থায়নে। যখন বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে অপারগতা প্রকাশ করে তখন দেশের নিজস্ব অর্থায়নেই তৈরী হচ্ছে দেশের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দ্বিতল এ সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন এবং নীচ দিয়ে ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলা রাজধানী ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। তাছাড়া এই সেতু বাস্তবায়িত হলে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১.২% বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য ০.৮৪% হ্রাস পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিল্প কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ প্রধান নিয়ামক। শিল্প-কারখানায় উৎপাদন ও জনগণের চাহিদা মিটানোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকার আশপাশে এলাকায় কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবার নতুন সাফল্য দেখিয়েছে। ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে দেশ। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে দেশে সেহরি, ইফতার, তারাবি ও ঈদের কেনাকাটার জন্য বিদ্যুতের পরিমান বেড়ে গেছে। তাই এই মাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে কয়েকটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। গ্যাসের চাহিদা মিটানোর জন্য সংযোজন করা হয়েছে এলএনজি টার্মিনাল।মাতারবাড়িতে তৈরী করা হয়েছে অত্যাধুনিক সমুদ্রবন্দর । এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের চাপ কমবে এবং আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রসার ঘটবে।
বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় এই সাফল্যের ফলে দেশ আজ সারা বিশ্ব ব্যাপী প্রশংসিত। বাংলাদেশের প্রশংসা করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলা হয়েছে যে, উন্মুক্ত নীতি এবং সবার অংশগ্রহণই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় দেশের জনগণ ও সরকারের প্রশংসা করা হয় এ সময়।
বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে বিশ্বাসী। জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর বর্তমান সরকার। দেশ ধাপে ধাপে আগাচ্ছে ‘রূপকল্প -২১’ ও ‘রূপকল্প- ৪১’ বাস্তবায়নের পথে। সেই দিন আর বেশি দেরি নয় যে দিন উন্নত দেশের তালিকায় থাকবে আমাদের দেশের নাম।