ডিজিটাল সেবায় উপকূলের প্রত্যন্ত গ্রাম

0
598

আইটি ডেস্কঃ
উপকূলের প্রান্তিকে লেগেছে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া। জীবনধারায় এসেছে পরিবর্তন। শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি জীবনযাত্রার সকল ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ঢেউ। দ্বীপ-চরের মানুষও কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত সার্বক্ষণিক। খবরাখবর আদান প্রদানের মধ্যদিয়ে কমে এসেছে দুর্যোগের ঝুঁকি। প্রান্তিকের গ্রামের কৃষকেরা জেলা-উপজেলা কিংবা রাজধানীর বাজার যাচাই করে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যুবক-তরুণেরা জীবিকার পথ খুঁজে নিচ্ছেন। ‘সব ধরনের খবরাখবর পাই মোবাইলে। হাটবাজারে কিংবা বাড়িতে টেলিভিশনের সামনে বসেও খবর দেখি। অন্যদের কাছ থেকে ইন্টারনেটেও খবর পাই। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া পৌঁছার আগে মনে হতো অন্ধকারে ডুবে আছি। এখন তা মনে হয় না। খবরাখবর জানা আর সব মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় জীবনটা যেন অনেক সহজ হয়েছে।’

উপকূলের প্রান্তিক জনপদ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ডিজিটাল সেবা উপকূলের প্রত্যন্ত গ্রামের চেহারা বদলে দিয়েছে। নাগরিক সনদ, জন্ম নিবন্ধনের প্রমাণপত্র কিংবা অন্য কোন কাগজপত্রের জন্য এখন আর ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় না। অপেক্ষা করতে হয় না চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে তারা পাচ্ছেন সব সেবা। অনলাইনে দরকারি সকল সেবা পাওয়ায় মানুষের জীবনটাই যেন সহজ হয়ে গেছে। ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার আগে সাধারণ নাগরিকেরা এতটা সুবিধা পেতেন না। ডিজিটাল সেবা না থাকায় সেবা দিতেও অনেক সমস্যা ছিল। এখন তা কেটে গেছে। সব শ্রেণীর মানুষ অনায়াসে এখানে আসতে পারছেন।
মেঘনা পাড়ের এই ইউনিয়নের ডিজিটাল সেবা পৌঁছে গেছে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশে। সরেজমিন দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে তথ্যসেবা কেন্দ্রে কাজ চলে। কয়েকটি কম্পিউটার ও ল্যাপটপে কাজ করছে তিনজন তরুণ। অনলাইনের নিউজ কিংবা উন্নয়ন তথ্য জানাতে এখানে প্রোজেক্টর ও বড় পর্দা রয়েছে। কেন্দ্রে সকাল, দুপুর, বিকেল সারাক্ষণই সেবা নিতে আসা মানুষের ভিড় থাকে। শুধু তথ্যসেবা নয়, বহু ছেলেমেয়ে এখান থেকে কম্পিউটার শিখে নিজেদের চাকরি পাওয়ার পথ সুগম করে তুলছে। কেউ আবার ফেইসবুক চালানো থেকে কম্পিউটারের মাউস ধরা শিখে এখন ওয়েবসাইট তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করেছে। ডিজিটালের কল্যাণে গ্রামেই তৈরি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি। প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থান করলেও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কল্যাণে এখানকার মানুষ সার্বক্ষণিক সম্পৃক্ত থাকছে দূরের স্বজনদের সঙ্গে। এই এলাকার বহু মানুষ বিদেশে অবস্থান করলেও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। প্রত্যন্ত এই গ্রাম থেকে বহু মানুষ বিদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে স্কাইপিতে অনায়াসে কথা বলেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন বাড়িতে রেখে যাওয়া মা-বাবা, বৃদ্ধ দাদা-দাদী, স্ত্রী-সন্তান পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীর। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে জানা গেল, বিদ্যুৎ না থাকলেও সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কেন্দ্রটি চালু রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হরতাল অবরোধে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও কোন প্রভাব পড়েনা চর ফলকনের প্রত্যন্ত পল্লীতে। সব কাজই চলে অনলাইনে। ছাত্র-ছাত্রীরা লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন ফরম পূরণ করতে পারছেন। চাকুরী প্রার্থী এমনকি শিক্ষক নিবন্ধনের জন্য আবেদন এখন চর ফলকন গ্রামে থেকে করা যায় অতি সহজেই। এই গ্রামের চাকুরীপ্রার্থীদের নিয়োগ পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল জানতে এখন আর কোন প্রকার বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। প্রতিষ্ঠান কিংবা কোন দপ্তরে দৌড়ঝাঁপ করতে হয় না। চর ফলকন ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রে পাবলিক পরীক্ষা ও নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল জানা এবং তা ডাউনলোড করে ফলাফলের প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করা যায়। পরিবর্তনের আরেকটি দৃষ্টান্ত মেলে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়নে। সেখানে তথ্য আদান-প্রদান আর প্রযুক্তি সেবার সব কাজই উদ্যোক্তা জোবায়ের ইসলামকে ঘিরে। শুধু চরবাটা ইউনিয়ন নয়, আশপাশের এলাকা থেকেও বহু লোকজন তার কাছে ছুটে আসেন। প্রতিদিনের চাকরির বিজ্ঞাপন, ভর্তির তথ্যাবলী জানা, কোথাও অনলাইনে আবেদন পাঠানো, ছবি স্ক্যান করা এমনকি বিমানের টিকেট বুকিংয়ের জন্য লোকজন এখানেই ছুটে আসেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 − ten =