পাবনার শুটকি মাছ রফতানি হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে

0
1210

পাবনার সাঁথিয়ার শুটকি মাছ এখন বিদেশে রফতানি হচ্ছে। আর এ শুটকি মাছ যাচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২০টি দেশে। এমন কি দেশের বিভিন্ন জেলাসহ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সবচেয়ে শুটকি মাছ রফতানি করা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অনুসন্ধানে জানা যায়, বিল ও নদীর পানি কমতে শুরু করায় উপজেলার আরাজী গোপিনাথপুর, সাতানীর চর ও বিল এলাকায় চলছে মাছ শুটকি করার ধুম। গ্রামের মধ্যে ঢুকলেই চোখে পড়ে শুটকি মাছের চাতাল। এর পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে সুগন্ধি মিললেই বুঝা যায় কোথায় যেন শুটকি মাছের চাতাল আছে।

এলাকার বিভিন্ন সড়কে, পতিত জমিতে দেখা যায় শুটকি মাছের চাতাল। ঘুঘুদহর বিল, সোনাই বিল, বড় বিল, ছোট বিল, চলন বিল, মুক্তরের বিল থেকে আমদানী করা হয় মাছ। এসব মাছ উপজেলার বিভিন্ন বিল থেকে যে সব শুটকি মাছের সংগ্রহ করে তার মধ্যে রয়েছে পুটি মাছ, বায়েম মাছ, চাদা মাছ, টাকি মাছসহ বিভিন্ন জাতের মাছ।
জানা যায়, চলতি মওসুমে এসব চাতালে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ১২০ থেকে ১৫০ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাতাল থেকে পছন্দের শুটকি মাছ কিনে নিয়ে যায়। শুটকি মাছের মান ভেদে তারা ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। ‘এ’ গ্রেডের (ভাল মানের) শুটকি মাছ মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহারাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়াসহ প্রায় ২০টি দেশে রফতানি করা হচ্ছে। সাধারণত এসব দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে রয়েছে মিঠা পানির শুটকি মাছের রয়েছে কদর।
জানা যায়, সাঁথিয়ার সাতানীর চর, আরাজী গোপিনাথপুর, হুইখালী, কলাগাছি, রঘুনাথপুরসহ প্রত্যন্ত বিল এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক পরিবার শুটকি তৈরির কাজে জড়িত রয়েছেন। এসব পরিবারের নারী-পুরুষ সদস্যরা দিন হাজিরায় কাজ করছেন শুটকি চাতালে। কাজের ধরণ অনুয়ায়ী তারা মজুরি পাচ্ছেন ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এ কাজ করে তারা আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন।
শুটকি তৈরির কাজে নিয়োজিত সামর্থ, নাজমা, জুলি, ইয়াসমিন, ফারুক, হাবলু, তাহমিনাসহ বেশ কয়েকজন নারী-পরুষ শ্রমিক জানান, তিন কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে এক কেজি শুঁটকি তৈরি হয়। প্রকার ভেদে শুটকির বাজার মূল্য ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। চলতি মওসুমে বিল এলাকা থেকে আহরিত মাছ থেকে ১১০ থেকে ১২৫ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা হবে বলে শুটকি ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে।
আরাজী গোপিনাথপুর ও সাতানির চরের শুটকি ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন জানান, আমার চাতাল থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় চার মেট্রিক টন শুটকি মাছ উৎপন্ন করে মোকামে পাঠাই।
সৈয়দপুর জেলার বিশিষ্ট শুটকি ব্যাবসায়ী দেলোয়ার হোসেন জানান, আমাদের এখানে পাবনার সাঁথিয়ার পুটি শুটকিটা ভারতে সবচেয়ে বেশি চলে তাই আমি নিই। আর অন্যান্য মাছ এখানে লোকালে চলে। তবে সবচেয়ে বেশি চলে চিটাগাং ব্যবসায়ীদের নিকট। তারা ইউরোপসহ মধ্যেপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করেন।
সাঁথিয়া উপজেলা সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা শুটকির ব্যাপারে উদ্যাগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা পাঠিয়েছি মন্ত্রণালয়ে। তিনি বলেন, তাদের তদারকি এবং সরকারী প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহযোগীতা ও নজরদারীর ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

six + twelve =