নীলফামারী সদরের কচুকাটা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কাবিখা প্রকল্পের চার টন চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি তছলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠলে তিনি খরচের একটি হিসাব প্রধান শিক্ষকের কাছে দিয়েছেন। প্রকল্পের কাজের সঙ্গে তাঁর হিসাবটির ব্যাপক অসংগতির দাবি করেছেন অভিযোগকারীরা।
তছলিম উদ্দিন কচুকাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অভিযোগ মতে, কচুকাটা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে গত জুন মাসে (২০১৭-১৮ অর্থবছর) বিদ্যালয়ের মাঠ, শ্রেণিকক্ষ সংস্কার ও সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (দ্বিতীয় পর্যায়) কর্মসূচিতে আট টন চাল বরাদ্দ হয়। বিদ্যালয়টির সভাপতি তছলিম উদ্দিন ওই বরাদ্দের মধ্যে চার টন চাল উত্তোলন করে নামেমাত্র কাজ দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি প্রধান শিক্ষকের কাছে দেওয়া একটি লিখিত হিসাবে উল্লেখ করেছেন, বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কারের জন্য ২২৫ ট্রলি মাটি কেনা হয়েছে। প্রতি ট্রলি মাটির মূল্য ২৫০ টাকা করে এ খাতে খরচ হয়েছে ৫৬ হাজার ২৫০ টাকা। জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে ছয় হাজার টাকা, ৩০ জন শ্রমিকের মজুরি দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার টাকা, মাস্টাররোল ও সাইনবোর্ড তৈরি বাবদ ৯ হাজার টাকা, অফিস খরচ হয়েছে আট হাজার টাকা। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য রুহুল আমিন অভিযোগে করে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সভাপতি তছলিম উদ্দিন ওই বরাদ্দের দুই কিস্তিতে চার টন চাল উত্তোলন করেন। এর বাজারমূল্য এক লাখ ৫২ হাজার টাকা। এর মধ্যে মাত্র ১০ হাজার টাকার মাঠ সংস্কারের কাজ করে অবশিষ্ট টাকা আত্মসাৎ করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের টাকার হিসাব চাওয়া হলে সভাপতি তছলিম উদ্দিন চার টন চালের মূল্য এক লাখ টাকা দেখিয়ে ৮৮ হাজার ২৫০ টাকা খরচ ও ১১ হাজার ৭৫০ টাকা নিজের হাতে থাকার লিখিত হিসাব দিয়েছেন।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে সামান্য কিছু মাটি ফেলার চিহ্ন রয়েছে। এ সময় এলাকাবাসী জানায়, অন্য স্থান থেকে ট্রলিতে করে ১৫ থেকে ২০ ট্রলি মাটি এনে ফেলা হয়েছিল। এর বাইরে কোনো কাজ করতে দেখেনি তারা। সভাপতির জমা দেওয়া হিসাবের মধ্যে সাইনবোর্ডের খরচ ধরা হলেও ওই মাঠ বা বিদ্যালয় এলাকায় প্রকল্পের কোনো সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয় মাঠসংলগ্ন কামারপাড়া গ্রামের সফিকুল ইসলাম (৫৫) বলেন, ‘সেখানে প্রকল্পের কী বরাদ্দ আছে সেটা আমরা জানি না। তবে কিছুদিন আগে ১৫ থেকে ২০ ট্রলি মাটি ফেলতে দেখেছি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, তছলিম উদ্দিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে প্রকল্পের চাল আত্মসাৎ করেছেন। উত্তোলন করা চালের যে খরচের হিসাব দেখিয়েছেন সেটি হাস্যকর। তিনি আরো জানান, একটি উন্নয়ন প্রকল্পের অফিস খরচ বলতে কিছু থাকে না। সেখানে অফিস খরচ দেখানো হয়েছে আট হাজার টাকা। তা ছাড়া মাস্টাররোল তৈরির কয়েকটি কাগজ ফটোকপি এবং একটি সাইনবোর্ড তৈরিতে এক হাজার টাকা প্রয়োজন হতে পারে। সেখানে তিনি খরচ দেখিয়েছেন ৯ হাজার টাকা।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক তছলিম উদ্দিন দলে একজন অনুপ্রবেশকারী। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতিও হয়েছেন। বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ প্রকল্পের চাল আত্মসাতের অভিযোগ শুনেছি। এভাবে দলীয় ভাবমূর্তি কেউ ক্ষুণ্ন্ন করলে আমরা তাঁকে ছাড় দেব না।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনোদ চন্দ্র রায় বলেন, ‘ওই প্রকল্পের অর্থে আমার চোখের দেখা ১৫ থেকে ২০ ট্রলি মাটি ফেলা হয়েছে। এরপর কী হয়েছে আমার জানা নেই। আমি সেটির সঙ্গে জড়িত নই, সেটি আমার দেখারও বিষয় না। আর আমি এ বিষয়ে কোনো প্রেসারও দিতে পারি না।’ রবিবার বিকেলে মোবাইল ফোনে বিদ্যালয়ের সভাপতি তছলিম উদ্দিন বলেন, ‘প্রতি টন চাল ২৫ হাজার টাকা করে বিক্রি করে চার টনে এক লাখ টাকা পেয়েছি আমি। সে টাকা থেকে দাখিল করা হিসাব অনুযায়ী আমি কাজ করেছি। আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে আমার বনিবনা না থাকায় এমন অভিযোগ উঠছে।’ ‘আগামীকাল (সোমবার) আপনার সঙ্গে দেখা করে কথা বলব’ বলে সংযোগটি কেটে দেন তিনি। সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু আসাদ মিয়া বলেন, ‘অভিযোগের কারণে কচুকাটা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রকল্পটির আট টনের মধ্যে চার টন চাল উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে। অবশিষ্ট ওই বরাদ্দ দিয়ে বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হবে।’