মহেশখালীতে সন্ত্রাসের নিয়ন্ত্রক তারেক শরীফ অধরাই

0
1324

কক্সবাজার প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের পাহাড়ী জনপদ মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ায় এখন চলছে সন্ত্রাসীদের শাসন। গত ২০০৬ সালে কালামারছড়া উত্তর ঝাপুয়া র‌্যাবের সাথে কথিত বন্দুক যুদ্ধে ছৈয়দ নূর বাহিনীর প্রধান ছৈয়দ নূর বাঙালী নিহত হওয়ার পর থেকে অত্র এলাকায় নিজের কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখতে বর্তমান গডফাদার সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণক রাজা নামে খ্যাত ৯ মামলার আসামী তারেকের নেতৃত্বে এক’শ থেকে দেড়’শ জনের মত একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর কার্যকলাপের ফলে কালারমারছড়ায় চলছে এখন সন্ত্রাসীদের শাসন। বৈধ কোন সম্পত্তি না থাকলেও সন্ত্রাসিরাই এখন জমিদার। জানা গেছে উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান সন্ত্রাসীদের গডফাদার ও পুলিশের উপর হামলায় করে ম্যাগজিন ছিনতাইয়ের ঘটনার মামলার প্রধান আসামী জেল ফেরৎ তারেক বাহিনীর প্রধান তারেকের ছত্র-ছায়ায় চলছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।

তার নিন্ত্রণে গড়ে উঠা সন্ত্রাসী বাহিনী নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই জনপদকে অশান্ত করে রেখেছে দীর্ঘদিন ধরে। ওই গডফাদারের স্বার্থ রক্ষার জন্য এক যুগে প্রাণ দিয়েছেন ডজনখানিক। আহত হয়েছে বহু মানুষ। উপজেলার কালারমারছড়ায় সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তৎকালের শান্তির র্তীথস্থান কালারমারছড়া এখন অস্ত্রের কারখানা ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্যে পরিণত হয়েছে। তারেক ও কালাবদার নিয়ন্ত্রণে কালারমারছড়া বাজারের পূর্বপাশে ফকিরজুম পাড়া পাহাড়ী এলাকায় রয়েছে অস্ত্রের কারখানা যা বিভিন্ন সময় সংবাদ মাধ্যমে শিরোনামও হয়েছে। ওই কারখানাতে ইতোমধ্যে সফল অভিযান পরিচালনা করলেও গডফাদারদের আটক করতে পারেনি অভিযানকারীরা। জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে সাবেক চেয়ারম্যান মৃত ওসমান গনির সৃষ্টি ও ওসমান গণি ওসমানের তত্বাবধানে র‌্যাবের বন্দুক যুদ্ধে নিহত তারেকের চাচা সৈয়দ নূর বাঙালী ও নুরুল আলম প্রকাশ কালাবদার নেতৃত্বে প্রথম অস্ত্রের ঝনঝানি শুরু হয়। সেই থেকে ছৈয়নূর বাহনীর প্রধান ছৈয়দ নূর র‌্যাবের ক্রস ফায়ারে মারা গেলে তারেকের তত্বাবধানে সন্ত্রাসের ধারাবাহকিতা অব্যাহত থাকে কালারমারছড়ায়। গেল কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তারেক সাধারণ মানুষকে ভয়র্ভীতি প্রর্দশন করে ভোট আদায় করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে একচ্ছত্র আধিফত্য বিস্তার করতে থাকে তারেক ও কালাবদা বাহিনীর লোকজন। তারা ধারাবাহিকভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কালারমারছড়ার ৮০ ভাগ মানুষকে করেছে নিস্ব ও কলংকিত। এলাকাবাসী আরো জানায়, বর্তমানে গডফাদার তারেকের নিয়ণন্ত্রে কালারমারছড়া ৫ টি পৃথক সন্ত্রাসীদের উপ-গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে একাধিক বার অভিযান করলেও গডফাদাররা রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। জেল ফেরৎ কালাবদার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কালারমারছড়া একাধিক এলাকা। তার তত্বাবধানে প্রায় শতাধিক ক্যাডার এখনো সক্রিয় রয়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করেছেন, এ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে একে-৪৭ জি ফোর সহ অত্যাধিুনক ভারী অস্ত্র রয়েছে। বিভিন্ন সময় র‌্যাব-৭ এর অভিযানে সম্প্রতি কালারমারছড়া ফকিরজুম পাড়া গহীন পাহাড়ে অবস্থিত অস্ত্রের ভ্রাম্যমান কারখানা থেকে ২০টি অস্ত্র বিপুল পরিমাণ গুলিসহ ২ সন্ত্রাসী গ্রেফতার হলেও তাদের হাতে থাকা অত্যাধুনিক অস্ত্রের সন্ধান এখনো পায়নি অভিযানকারীরা। আর স্থানীয় জিয়া বাহিনীর প্রধান জিয়া দীর্ঘ ৮ বছর কারাভোগ করায় ও তার সদস্যরা এলাকা ত্যাগ করে দুর্বল হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলেও বর্তমানে তারেকের নিয়ন্ত্রণাধীন বাহিনী রয়েছে সক্রিয়। ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুই ডজনখানিক নারীর শ্লীলতাহনি করেছে তারেক বাহিনীর সদস্যরা। গডফাদার তারেকের নেতৃত্বে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকার চিংড়ি প্রজেক্ট বছরের পর বছর জবর দখল করে রেখেছে। চিংড়ি প্রজেক্টের আয়কৃত টাকার সিংহভাগ চলে যায় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের হাতে। কালারমারছড়া পুলিশ ফাঁড়ীর নাকের ডগায় সন্ত্রাসীরা চলাফেরা করলেও স্থানীয় পুলিশ বিট তাদের ধরছে না। ফলে পুলিশের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। একটি সূত্র বলছে, বর্তমানে তারেকের তত্বাবধানে রয়েছে শতাধিক ক্যাডার। তার মধ্যে সেকেন্ড ইনকমান্ড নুরুল আলম প্রকাশ (কালাবদা), কালা জাহাঙ্গীর, মো: আলী, রশিদ, রুহুল আমিন, আবু জাফর প্রকাশ আবু জাইল, সোনাইয়া, বাচ্চু, গোলাম মোস্তাফা, নুর মো: নুরুল হুদা, রবিউল আলম অন্যতম। বর্তমানে চেয়ারম্যান তারেকের এই সন্ত্রাসী বাহিনীগুলোর অত্যাচারে এলাকার বহু মানুষ এখনো ঘর ছাড়া। এদের অপতৎপরতায় বহু বছর ধরে এই জনপদ অশান্ত হয়ে আছে। মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ পিপি এম-বার বলেন, একদিনে মহেশখালী কালারমারছড়ার বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত করা সম্ভাব নয়, নিজেরা যদি সহনশীল হয় তা হলে পরিস্থিতি ফিরিয়ে আসবে। তিনি আরোও বলেন, সন্ত্রাসী যেই হোক না কেন প্রশ্রয় দেওয়া হবেনা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen − 13 =