রাতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ৫ ঘন্টা বিশেষ ক্লাসের নামে কোচিং বানিজ্য

0
798

সরকার প্রাইভেট ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধের জন্য কঠোর নজরদারী ও নীতিমালা প্রণয়ন করলেও তা বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন। শুধু বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকালে একটি বিশেষ ক্লাস হলেও রাতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ৫ ঘন্টা বিশেষ ক্লাসের নামে কোচিং বানিজ্য। মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় সরকারী আদেশ অমান্য করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের আদেশে বিশেষ ক্লাসের নামে চলছে এই কোচিং বাণিজ্য।

সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে এ কোচিং ক্লাস। উপজেলা শিক্ষা অফিসার বিষয়টি জানলেও এটি বন্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকশ ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস চলছে। নবম শ্রেণির মেধা তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় ছাত্রকেও দেখা গেছে বিশেষ ক্লাসে। তারা কেন বিশেষ ক্লাসে এসেছে জানতে চাইলে তারা তাদের শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে বলে আমরা কয়েকটি বিষয়ে দুর্বল। জেএসসি পরীক্ষায় তারা উভয়ে গোল্ডেন প্লাস পেয়েছে বলেও জানায়। ছাত্রীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন বাড়িতে পড়া হয় না তাই এ ক্লাসে আসি। বিদ্যালয়ের বাইরে বেশকয়েকজন অভিভাকদেরকে সন্ধ্যা থেকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তাদের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আমরা কি করব? স্কুল বাধ্যতামূলক করেছে তাই করাতে হয়। আমাদের সন্তানরা সেই সকালে আসে বিকালে বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেই আবার সন্ধ্যায় চলে আসে, আর ক্লাস হয় প্রায় রাত ১০টা পর্যন্ত। বাড়ীতে পড়াশুনা করার কোন সুযোগই পায় না। আর আমরাও সব সময় টেনশনে থাকি রাতে যদি কোন বিপদ হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, এই দেখেন সারাদিন কামলা দিয়ে এসে এখন রাত ৯টা বাজে মাঠে হাটাহাটি করছি। এখন আমি একটু বিশ্রাম নিব সেটা করতে পারছি না। আমার সন্তানের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। তাছাড়া আমার সন্তান যে বাড়িতে স্কুলের পড়াশুনা করবে সেটাও করতে পারছে না। এ ব্যাপারে সাহেবরামপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মো: সালাউদ্দিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমতিতেই এ ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে তিনি অনুমতির কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। রাতে বাড়ি ফেরার পথে ছাত্রীদের কোন সমস্যা হলে তার দায় কে নিবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তেমন করে ভাবিনি কখনো। তবে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কালকিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: মাহববুর রহমান জানান, আমি বিষয়টি জেনেছি, সবকিছু দেখে মনে হয়েছে বিষয়টি ভাল। এবং তাদেরকে বলেছি যদি অভিভাবকরা এই ক্লাস করাতে চায় তাহলে যেন করে। তবে আমার কাছে এই বিষয় কোন অভিভাবক অভিযোগ করেনি। ছাত্রীদের রাতে ক্লাসের জন্য যদি কোন ছাত্রীর ক্ষতি হয় এর দায়ভার কে নিবে জানতে চাইলে তিনি ও জানান, এটা কে নিবে? মাদারীপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আমি বিষয়টি জানতাম না এখন জানলাম, যদি এ রকম হয় আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। আর রাতে ক্লাস নেয়ার কোন নিয়ম নাই। বিশেষ ক্লাস নিতে হলে স্কুলের ক্লাস শুরু হওয়ার আগে অথবা তার পরে নেয়া যেতে পারে। যদি কোন বিপদ হয় এর দায়ভার কেউ নেবে না। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, আমি বিষয়টি কালকিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলবো।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × three =