Site icon Aparadh Bichitra

পোশাকের ন্যায্য দাম ও বড় বিনিয়োগ চাইবে বাংলাদেশ

এবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ‘অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা’ (জিএসপি) ফেরত নয়, বরং পোশাকের ন্যায্য দাম ও বড় বিনিয়োগ চাইবে বাংলাদেশ। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ফোরাম চুক্তির (টিকফা) চতুর্থ বৈঠকে এই দাবি উত্থাপন করবে বাংলাদেশ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আজ ও আগামীকাল দুই দিনের টিকফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে যোগ দিতে ইতিমধ্যে বাণিজ্যসচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। এর আগে গত চার বছরে ঢাকায় টিকফা কাউন্সিলের দুটি এবং ওয়াশিংটনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করার পর তা আবারও ফিরে পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত দিয়েছিল সেগুলো ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে বলে ঢাকা মনে করে। এর পরও যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি ফেরত না দেওয়ার বিষয়টিকে ওই দেশটির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ। এদিকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন  বলেন, দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যৌথভাবে বাড়াতে টিকফা গঠন হয়। কিন্তু জিএসপি প্রত্যাহারে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের একটা টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। এই সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের ট্যাক্স রিডিউস নীতিতে সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। এটা হলে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের তুলা দিয়ে দেশটিতেই সুতা তৈরি করে তা বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিয়ে আসবে। এদিকে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর জ্যৈষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান  বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে জিএসপি সুবিধা না দিলেও তারা রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সব পণ্যে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ১৬টি শর্ত দেয়। এসব শর্ত পূরণ করলেও আমাদের জিএসপি পুনর্বহাল হয়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের বিশ্বসেরা ১০ কারখানার মধ্যে বাংলাদেশে সাতটি।’ তিনি বলেন, ‘নৈতিক মজুরি নিয়ে কথা বললেও তারা আমাদের পোশাকের ন্যায্য দাম দেয় না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে টিকফা বৈঠকে পোশাকের ন্যায্য দাম এবং যে পরিমাণ তুলা দেশটি থেকে আমদানি করে, অন্তত সেই পরিমাণ মূল্য হিসাবে যেন আমাদের পোশাকের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়, তা চাওয়া হবে।’ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান  বলেন, বাংলাদেশ মার্কিন বাজারে ন্যায্য মূল্য চাইতে পারে, তবে বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তির (টিএফএ) বাইরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু করবে কি না, তা নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের উচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের দাবি জানানো। এটি এজেন্ডায় থাকলে বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে বাংলাদেশ একটা চাপে রাখতে পারত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওয়াশিংটন বৈঠকের জন্য বাংলাদেশের আলোচ্যসূচি ঠিক করা হয় পাঁচটি। এগুলো হলো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বাংলাদেশি পণ্যের ন্যায্য মূল্য ও নৈতিক কেনাবেচার চর্চা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও বাণিজ্যবিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তি (টিএফএ) বাস্তবায়ন পদ্ধতি। বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া দলের অন্য সদস্যরা হলেন শ্রমসচিব আফরোজা খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মুনীর চৌধুরী, পরিচালক জিয়াউল হক ও উপপরিচালক খলিলুর রহমান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নজরুল ইসলাম।