অগ্রণী ব্যাংক লি: এর এমডি চেয়ারম্যানের রশি টানাটানি অপরাধ বিচিত্রায় সংবাদ প্রকাশের পর দুদকের চিঠি

0
958

মো: আবদুল আলীম:
সরকার বিশ্বাস করে যাদেরকে বড় বড় পদে দায়িত্ব দিয়েছেন তারা সরকারের সাথে এমন আচরন করছেন যাতে সরকারের সাথে তাদের একটা বিরাট ব্যবধান সৃষ্টি হচ্ছে। এমন একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠছে রাষ্ট্রায়াত্ব অগ্রণী ব্যাংক লি: কে কেন্দ্র করে। অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান জায়েদ বখত এর অশীর্বাদে মার্কিন ডলার ১৫, ৫২, ৬১১.০০ বিদেশে পাচারসহ ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এলসি করে বিদেশ থেকে মালামাল আমদানির নামে আমদানিতব্য যন্ত্রপাতির অতি মূল্য দেখিয়ে রংপুর অগ্রনী ব্যাংকের নীলফামারী শাখায় এটি করা হয়েছে। অপরাধ বিচিত্রায় বিষয়টি নিয়ে এ পর্যন্ত ধারাবাহিক তিনটি পর্ব প্রকাশের পর আজকের এই চতুর্থ পর্ব। অত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি দুদকের নজরে আসে। অবশেষে দুদকের রংপুর অফিস থেকে ব্যাংকটির শাখায় কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। এদিকে যারা এই বিশাল অংকের টাকা লুটের সাথে জড়িত তারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যাচ্ছেন।

ঘটনার বিবরন এই যে, অগ্রণী ব্যাংক লি: নীলফামারী শাখার মাধ্যমে ডোমার উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান মনসুরূল ইসলাম দানু এবং ব্যাংকের রংপুর সার্কেলের তদানিন্তন জিএম মো: মশিউর আলী গং প্রধান কার্যালয়ের হেড অব আইসিসি মনোয়ার হোসেন, এফসিএ, আইন বিভাগের জিএম সুকান্তি বিকাশ সারনালসহ আরও কর্মকর্তা এই অনিয়মের সাথে জড়িত। নাম প্রকাশে ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন নেপথ্যে আছেন চেয়ারম্যান জায়েদ বখত। এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করলে একে অপরের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে এ প্রতিবেদককে এড়িয়ে চলেন। ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে ব্যাংকটির এমডি মো: শামস উল ইসলাম যেখানে ব্যাংকটিকে লোকসানের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন ও বেশ সফলতা বয়ে আনছেন সেখানে চেয়ারম্যান জায়েদ বখত ব্যংকটিকে পেছনে ফেলে দিচ্ছেন। নীলফামারী শাথার অসৎ গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান শাওন আটো ব্রিক্স এর অনুকুলে প্রধান কার্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট ডিভিশন-০১ এর ০১-০৯-২০১৪ ইং তরিখের মঞ্জুরী পত্রের মাধ্যমে ১৫.০০ কোটি টাকার প্রকল্প ঋন ও ০.৭৫ কোটি টাকার চলতি মূলধন ঋন মঞ্জুরী হয়।
মঞ্জুরী পত্রের শর্ত মোতাবেক কাজের জন্য উদ্যোক্তার নিজস্ব উৎস হতে ২.১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়ে ব্যাংক ঋনের ৩.০০ কোটি টাকা ৬ টি কিস্তিতে বিতরনযোগ্য। ১ম কিস্তি বিতরনের পূর্বে উদ্যোক্তার ইকুইটি বিনিয়োগ নিশ্চিত না হয়ে পরস্পর যোগসাজসে ০১.১০.২০১৪ ইং তারিখ হতে ১৫. ০৩. ২০১৬ ইং পর্যন্ত ২.৯০ কোটি টাকা পূর্তখাতের নামে ব্যাংক হতে আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আমদানিতব্য যন্ত্রপাতি স্থাপনের পর স্থানীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে হয়। স্থানীয় যন্ত্রপাতি প্রাপ্তি সাপেক্ষে সরবরাহকারীকে পে অর্ডারের মাধ্যমে যন্ত্রপাতির মূল্য পরিশোধ করা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে নিয়ম লংঘন করে আমদানীতব্য যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে উদ্যোক্তার ইকুইটি ১.৭৪ কোটি টাকা স্থানীয় যন্ত্রপতি খাতে বিনিয়োগ না করে ভুয়া সরবরাহকারীর মাধ্যমে ব্যাংক ঋনের ২.০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় ১ টি ৩৫০ কেভিএ জেনারেটর ব্যতিত অপর কোন যন্ত্রপাতি অদ্যবধি সরবরাহ করা হয় নাই। অগ্রণী ব্যাংকের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ৩০.১২.২০১৫ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পরিষদের ৪৪২ তম সভায় নীলফামারী শাখার গ্রাহক প্রতিষ্ঠান শাওন অটো ব্রিক্স লি: এর অনুকুলে নির্ধারিত ইকুইটি/মার্জিন ২.১৭ কোটি টাকার স্থলে ৬১.০০ কোটি টাকা পূর্ন নির্ধারন করে দেন। ফলে উদ্যোক্তা ২.১৭ কোটি টাকার স্থলে ৬১.০০ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ১৭.০১.২০১৬ তারিখে কম মূল্যের যন্ত্রপাতি অধিক মূল্যে প্রদর্শন করে রংপুর শাখার এলসি নং ০০২৮/১৬/০১/০০০৫ এর মাধ্যমে মার্কিন ডলার ১৫,৫২,৬১১.০০ বিদেশে পাচার করেন। উক্ত এলসিতে পার্সিয়াল শিপম্যান্ট শর্ত যুক্ত করায় ১ টি চালানের পরিবর্তে ৩ টি চালানের মাধ্যমে আমদানীকৃত যন্ত্রপাতি যথাক্রমে ১১.০৬. ২০১৬, ২১.০৭.২০১৬ এবং ১৩.০৮.২০১৬ ইং তারিখে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। কিন্তু উক্ত ইকুইটি/মার্জিন অবশিষ্ট ১.৫৬ কোটি টাকা জমা দেন নাই। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১ম চালানের মূল্য অপ্রদর্শিত মার্কিন ডলার ৫,৩৭,৬০০ যন্ত্রপাতি বন্দর হতে ১.৩৩ কোটি টাকা আরো অতিরিক্ত লোন সৃষ্টি করে ছাড় করান। কিন্তু ২য় ও ৩য় চালানের মোট মার্কিন ডলার ১০, ৪৬, ০০৯.০০ মূল্যমানের যন্ত্রপাতি বন্দর হতে অদ্যবধি ছাড় না করায় দৈনিক ১.৭১ লক্ষ টাকা হারে ১২, ০৫, ২০১৮ ইং পর্যন্ত পোর্ট ডিমারেজ বাবদ ১৩. ৪০ কোটি টাকা আরোপিত হয়েছে। এ ব্যাপারে এ প্রতিবেদকের তদন্ত অব্যহত আছে। আগামি সংখ্যায় চোখ রাখুন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen − 19 =